দেশ রক্ষায় জাতীয় ঐক্যের আহবান জানিয়েছেন বিকল্পধারা প্রেসিডেন্ট বি চৌধুরী। একই সঙ্গে রাজনীতির ধারা পরিবর্তন করতে তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসারও আহবান জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি এমন আহবান জানান।
একই অনুষ্ঠানে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ঘোষণা দিয়ে বলেন, “অবিলম্বে বুয়েটের ভিসি পদত্যাগ না করলে এক দফা আন্দোলনে যাবো।”
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, “শেয়ার ও হলমার্ক কেলেঙ্কারীর পক্ষ নেওয়ায় অশ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্যতাও হারিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।”
যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, “আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলে ভুল আছে। খালেদা জিয়া শতভাগ সঠিক একথাও বলবো না।”
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিকল্প যুবধারা কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত ‘রাজনীতি কি এভাবেই চলবে? না-কি যুব সমাজ এতে কোন পরিবর্তন আনতে পারবে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দেওয়া বক্তৃতায় তারা এমন কথা বলেন।
বিকল্প যুবধারা সভাপতি ওবায়দুর রহমানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান প্রমুখ।
মূল বক্তব্য তুলে ধরেন বিকল্পধরার যুগ্ম-মহাসচিব মাহী বি চেধুরী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আসাদুজ্জামান বাচ্চু।
জাতীয় ঐক্যের আহবান বি চৌধুরীর
জাতীয় ঐক্যের আহবান জানিয়ে বি চৌধুরী বলেন, “চলমান ধরায় রাজনীতি চলতে পারে না। যুব সমাজ রাস্তায় না নামলে রাজনীতিতে পরিবর্তন আসবে না।”
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনি ক্ষমতা না দেখিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করুন। অন্যায় কে অন্যায় বলতে শিখুন। অগ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে বুয়েটের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভিসি হিসেবে বসিয়ে রাখা ঠিক নয়। গোপালগঞ্জের লোক বলে ভিসিকে সরানো হচ্ছে না, এই অন্যায় আল্লাহ সহ্য করবে না।”
আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বিরোধী দল সংসদে যাবে এর কি নিশ্চয়তা আছে এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “সংসদ সদস্যরা সংসদে যা বলেন তা সত্য। আর বিরোধী দল যা বলে তা মিথ্য- এই সংস্কৃতি বাদ দিতে হবে। সংসদে যে ভাষায় কথা হয় তা ঠিক নয়। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না।”
ভিসিকে বিতাড়িত করা না হলে আন্দোলন
ড. কামাল হোসেন বলেন, “অবিলম্বে বুয়েটের ভিসিকে বাদ দেওয়া না হলে এক দফা আন্দোলনে নামবো। আমি সবাইকে জানিয়ে যাব, গুম হতে যাচ্ছি। লাশ পেলে জানবেন কেন লাশ হলাম।”
বুয়েট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমি আপনার বাসার সামনে প্রতিবাদ করবো। আপনি নির্দেশ দেন আমাকে গুম করতে, গুলি করতে। তবুও বুয়েটের মেয়েদের নিয়ে কটূক্তি করার অধিকার আপনার নেই। আমার চোখের সামনে বুয়েটকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। বঙ্গবন্ধু আমার শিক্ষাগুরু। ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য গুম হলে হবো। তবুও তাঁর শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাব না।”
“এই দেশে কোন ব্যক্তি বা দলের নয়” এমন মন্তব্য করে ড. কামাল হোসেন বলেন, “তথাকথিত বড় দুই দল মনে করে দেশে অন্য কোন দল নেই, মানুষ নেই। আমরা এতিম। দুই জমিদার দল আমাদের পাত্তা দেবে কি না মানুষ এ নিয়ে আমাদের প্রশ্ন করে। টেন্ডার ও চাঁদাবাজির জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। স্বাধীনতা আসেনি। রাজনীতিতে রোগ ঢুকেছে। মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ উঠলে তারা দফতরবিহীন মন্ত্রী থেকে যায়। হঠাৎ পদত্যাগ করলে দেশপ্রেমিক হয়ে যায়।”
শিক্ষা মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে কামাল হোসেন বলেন, “বুয়েটের ভিসিকে না সরালে আপনি যেখানেই থাকেন না কেন ভবিষ্যতে হলেও আপনার বিচার করা হবে।”
অশ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্যতা নেই অর্থমন্ত্রীর
শেয়ার কেলেঙ্কারী, হলমার্কসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, “অশ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্যতাও নেই তার।”
বড় দুই রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “মহাজোট অসুস্থ রাজনীতির ধারক ও বাহক। বিরোধী দল বিএনপি সুস্থ রাজনীতি করে না। মানুষ বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে চায় না। বিএনপি সংশোধিত হয়নি বলে আওয়ামী লীগের শত ব্যর্থতার পরেও রাজপথে মানুষের প্রতিবাদ নেই।”
বিএনপি কার্যালয়ে যাওয়ার সময় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কর্মীদের আটকের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “এমন অসভ্য সরকার আমি জীবনে দেখিনি।”
বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “রাস্তায় না নেমে শুধু ঘরে বসে কৌশল করলে এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো যাবে না। সরকারকে মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে কোন রক্তই বৃথা যায়নি।”
এরশাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানে থাকা সত্ত্বেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নয় বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। সম্প্রতি তিনি ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে নানা কথা বলছেন। ভাবছেন ভারত তাকে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে। তাকে ভারত কেন, আমেরিকাও ক্ষমতায় আনতে পারবে না। দেশ কে চালাবে তা নির্ধারণ করবে জনগণ। বাস্তবতা হলো বাংলাদেশের মানুষ ভারতের দালাল দেখতে চায় না।”
ড. কামাল ও বি চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “কথা দিলাম, আমি সামনে পেছনে সবখানে আপনাদের সঙ্গে আছি। পরিবর্তনের লক্ষ নিয়ে আপনারা এগিয়ে চলুন।”