রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ও বেসরকারি দেশী-বিদেশি ব্যাংকের ৫০ কোটি টাকারও বেশি রফতানি ভর্তুকির হিসাবে আপত্তি জানিয়েছে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
মহা হিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়ের অডিট আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি দ্রুত এসব হিসাবের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির সুপারিশ করেছে।
সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে কমিটির ১০২তম বৈঠকে সোনালী, জনতা, কৃষি, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড, এবি, স্যোসাল ইসলামিক, ব্যাংক এশিয়া, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ২০০৫ থেকে ২০০৭ সালের রফতানি ভর্তুকি নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
কমিটির সদস্য অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ, আব্দুস শহীদ, মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামানিক, খান টিপু সুলতান ও ফরিদা আখতার বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, ২০০৫ থেকে ২০০৭ সালে সুপারি ও মেহগনি ফলের ভেতরের অংশের প্রদর্শিত রফতানি বিপরীতে অনিয়মিতভাবে ভর্তুকী/সহায়তা বাবদ ৩৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা ৫টি প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় প্রমাণক না দেখিয়েই উত্তোলন করা হয়। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হওয়ায় অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি খতিয়ে দেখে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে কমিটি। এবি ব্যাংকের নওয়াবপুর শাখার মাধ্যমে এ লেনদেনটি করা হয়।
এক্সপিডো করপোরেশন, ওয়াসিস করপোরেশন, ওয়েস্টার্ন করপোরেশন, জনি ইন্টারন্যাশনাল ও ডাচ ইন্টারন্যাশনাল নামের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত।
এছাড়া খুলনায় সোনালী ব্যাংকের দুটি শাখা, জনতা ব্যাংকের দুটি ও ব্যাংক এশিয়ার স্কশিয়া শাখার মাধ্যমে রফতানি করা হিমায়িত মাছের বিপরীতে ১০ কোটি ৪৯ লাখ ৫১ হাজার টাকা মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রার অনিয়শ নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মহা হিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়কে এ বিষয়ে প্রমাণক দাখিল করার সুপারিশ করে।
বৈঠকে সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসের মাধ্যমে অ্যাপেক্স উইভিং ও ফিনিশিং মিলস এর রফতানি পণ্যের উপকরণের ওপর বন্ড ফ্যাসিলিটি গ্রহণ করার পরও বিধি বহির্ভূতভাবে নগদ সহায়তা প্রদান করায় ১ কোটি ২ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ক্ষতি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে উত্থাপিত অডিট আপত্তি নিয়ে আলোচনা হয়। গণদাবি আইন অনুযায়ী ৩ মাসের মধ্যে ওই টাকা আদায়ের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।
কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, সোনালি ব্যাংকের খুলনা করপোরেট শাখার মাধ্যমে অতিরিক্ত পরিমান পণ্য রফতানির বিপরীতে ৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা প্রত্যাবাসিত হয়নি। এতে সরকারের ১ কোটি ৪৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে দেখিয়ে উত্থাপিত অডিট আপত্তি নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে, সোনালী ব্যাংকের খুলনা করপোরেট শাখা ও চট্টগ্রামের একটি শাখার মাধ্যমে হিমায়িত মাছ রফতানির ক্ষেত্রে প্রকৃত শ্রেণী অনুযায়ী নগদ সহায়তা প্রদান না করা নিয়ে আলোচনা হয়। অডিট অফিসের হিসাব অনুযায়ী এতে সরকারের ৭১ লাখ ২৭ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। কমিটি আগামী ৭ দিনের মধ্যে কোস্টাল সী ফুডস ও সার অ্যান্ড কোং লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় প্রমাণক সিএন্ডএজি’র নিকট দাখিল করার সুপারিশ করেছে।
এছাড়া বৈঠকে একটি রফতানি পার্চেজ অর্ডারের/রফতানি কন্ট্রাক্টের সমপরিমাণ তামাক একাধিকবার ভিন্ন ভিন্ন শিপমেন্টে রফতানি দেখিয়ে অনিয়মিতভাবে নগদ সহায়তা প্রদান সংক্রান্ত অনিয়ম নিয়ে আলোচনা হয়। এ অনিয়মের সঙ্গে স্ট্যান্ডর্ড চাটার্ড ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় জড়িত।
এ অনিয়মের ফলে ৫৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকার রাজস্ব ক্ষতির অডিট আপত্তি নিয়ে আলোচনার সময় ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানিকে ৭ দিনের মধ্যে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের বিষয়টি সুরাহার সুপারিশ করা হয়।