রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে টেবুলেশন শিটে জালিয়াতির মাধ্যমে ফেল করা প্রার্থীকে পাশ দেখানোর মতো নিয়োগ বাণিজ্যের জালিয়াতির তথ্য উঠে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান প্রতিবেদনে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে অনুসন্ধান টিম কমিশনের কাছে মামলার আবেদন করে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন মামলা করা অনুমোদন দেয়। সূত্র জানায়, চলতি সাপ্তাহের যে কোনো দিন মামলা করা হবে।
অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পূর্বাঞ্চল রেলের নিয়োগে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করবে দুদক। যাদের বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে তারা হচ্ছেন-পূর্বাঞ্চল রেলের বরখাস্ত জিএম ইউসুফ আলী মৃধা, নিয়োগ কমিটির আহবায়ক হাফিজুর রহমান এবং সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়া।
পূর্ব রেলের নিয়োগ কেলেঙ্কারি নিয়ে রেলের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, পূর্বাঞ্চল রেলের ৬টি ক্যাটাগরির এক হাজারের বেশি পদে মোটা অংকের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে দুদক কমিশনার গোলাম রহমান বলেন, “রেলের নিয়োগ কেলেঙ্কারির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান করেছে অনুসন্ধান টিম। অনুসন্ধান প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুদক ব্যবস্থা নেবে।”
অনুসন্ধান কমিটি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে তিনি জানান।
এদিকে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের গত মাসের ১৪ আগস্ট ইউসুফ আলী মৃধা ও সাবেক রেলমন্ত্রীর এপিএস ইতিপূর্বে ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, দুদকের জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে ফারুক ৫০ লাখ ৯৩ হাজার টাকার স্থাবর এবং এক কোটি দুই লাখ ৫৪ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদের হিসাব দিয়েছেন। এতে দুই লাখ ৪৩ হাজার টাকা অর্থমূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন করা হয়েছে। এ ছাড়া ফারুকের নামে এক কোটি তিন লাখ ৯৭ হাজার টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে, যা তার আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে দায়ের করা এজাহারে বলা হয়েছে, তিনি ৫৫ লাখ ৮৭ হাজার ২১৯ টাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের হিসাব দিয়েছেন। তাতে ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৯১০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। এ ছাড়া জ্ঞাত আয়ের বাইরে আরও ৪০ লাখ নয় হাজার ৯১০ টাকার সম্পদ অর্জন করে নিজের দখলে রেখেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত পূর্ব রেল পুলিশের কমান্ড্যান্ট এনামুল হকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়নি। জানা যায়, দুদকের মামলার আসামি ফারুক ও মৃধা বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।
চলতি বছরের ৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর পিলখানায় বিজিবির সদর দপ্তরে মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ব্যক্তিগত সহকারী ওমর ফারুক তালুকদারের গাড়িতে বিপুল অর্থ পাওয়া যায়। ওই গাড়িতে ফারুক ও মৃধার সঙ্গে এবং কমান্ড্যান্ট এনামুল হকও ছিলেন।
অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনার পর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশন ঘটনা তদন্তে উপ-পরিচালক মোঃ আবু সাঈদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে। অনুসন্ধান কমিটির প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে কেলেঙ্কারির হোতাদের বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদনের পরই শিগগির মামলা করবে দুদক।