অর্থমন্ত্রীর চীন সফর: পদ্মা সেতু আলোচনায় আসতে পারে

অর্থমন্ত্রীর চীন সফর: পদ্মা সেতু আলোচনায় আসতে পারে

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম) সভায় অন্য আলোচনার পাশাপাশি পদ্মা সেতুর অর্থায়ন জটিলতা নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

ফোরামের বৈঠকে যোগ দিতে তিনি রোববার রাতে চীন যাচ্ছেন।

১১ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর চীনের তিয়ানজিনে ফোরামের তিন দিনব্যাপী বার্ষিক সভা চলবে।
সভা শেষে ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে মন্ত্রী চীনের রাজধানী বেইজিং যাবেন। ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি সেখানে থাকবেন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত শনিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিও থাকবেন। সেখানে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।

“পদ্মা সেতু নিয়ে আলোচনার জন্য কারো সঙ্গে নির্ধারিত কোনো কর্মসূচি নেই। তবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কারো সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে,” বলেন মুহিত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের এই সম্মেলনে চীন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। এছাড়া বিশ্ব ব্যাংক, এডিবিসহ অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন। সেখানে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্ব ব্যাংকের ফিরে আসার বিষয়টি আলোচনা হতে পারে।”

ওই কর্মকর্তা জানান, চীনের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর একটা বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে বৈঠকেও পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্ব ব্যাংকের ফিরে আসার বিষয়টি আলোচনা হতে পারে।

এছাড়া বিশ্ব ব্যাংকের যে কর্মকর্তারা চীনে উপস্থিত থাকবেন তাদের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর আলোচনা হতে পারে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

দশ দিনের এ সফরে অর্থমন্ত্রীর সফরসঙ্গী থাকবেন ইআরডি’র উপ-সচিব এ কে এম মতিউর রহমান।

বেইজিং এ অবস্থানকালে অর্থমন্ত্রী স্পেয়ার এনার্জি ক্রিয়েশনস অস্ট্রেলিয়া প্রাইভেট লিমিটেড (এসইসিএ), চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং চীনের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন।
ফেরার পথে তিন দিন সিঙ্গাপুরে যাত্রাবিরতি নেবেন অর্থমন্ত্রী। সেখানে ন্যাশনাল হার্ট সেন্টারে মেডিকেল চেক-আপ করাবেন। পরিবারের সদস্যরা (স্ত্রী, পুত্র ও পুত্রবধু) তার সঙ্গে থাকবেন।
১৯ সেপ্টেম্বর রাতে দেশে ফিরবেন তিনি।

২ সেপ্টম্বর এক অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংককে ফিরিয়ে আনতে চীনের পক্ষ থেকেও তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত লি জুন।

গত ২৯ জুন বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলে ২৯১ কোটি ডলারের বহু প্রতীক্ষিত এই সেতুর নির্মাণকাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

দুর্নীতির অভিযোগ তুলে চারটি শর্ত দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। সেগুলো পূরণ হয়নি জানিয়ে ঋণচুক্তি বাতিল করে তারা।

চুক্তি বাতিলের পর যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন এবং সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াকে ছুটিতে পাঠানো হয়।

এরপর সমঝোতার জন্য বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। সরকারের এই আলোচনার সফলতা আশা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনাও।

অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠক শেষে মজীনা সাংবাদিকদের বলেন, “পদ্মা সেতু হবেই।”

অন্যদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অন্য দুই দাতা সংস্থা এডিবি ও জাইকা তাদের ঋণ চুক্তির মেয়াদ আরেক দফা বাড়িয়েছে।

বিশ্ব ব্যাংক সর্বশেষ পদ্মা সেতু প্রকল্পের ইন্টিগ্রিটি উপদেষ্টা মসিউর রহমানকে পদত্যাগের শর্ত দিয়েছে। কিন্তু দুর্নীতির অপবাদ নিয়ে মসিউর রহমান পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন।

অর্থ বাণিজ্য