বুয়েটের আন্দোলনকারীদের একহাত নিলেন প্রধানমন্ত্রী

বুয়েটের আন্দোলনকারীদের একহাত নিলেন প্রধানমন্ত্রী

বুয়েটের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের এক হাত নিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে তিনি বলেছেন, কঠোর কিভাবে হতে হয় তা তার সরকারের জানা আছে।

বুয়েটের শিক্ষকদেরও কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শিক্ষকরা ক্লাসে তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের শিখিয়েছেন কিভাবে বোতলে রক্ত ভরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করতে হয়।”

শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে যৌথ সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা সবসময়ই সমঝোতার ভিত্তিতে সমাধান করতে চাই। কঠোর হতে চাই না। কিন্তু কিভাবে কঠোর হতে হয়, সেটাও আমাদের জানা আছে।”

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “একেক সময় একেক জনের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে। এতে ছাত্র-ছাত্রীদেরই ক্ষতি হচ্ছে।”

ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এই পরিস্থিতি যদি আবার সৃষ্টি হয়, তাহলের কেউই রেহাই পাবেন না। যারা এর পক্ষে সোচ্চার তারাও রেহাই পাবেন না। তবে এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে এই পরিস্থিতির আর পুনারাবৃত্তি না হয়।”

তিনি বলেন, “ওয়ান ইলেভেনের ভূত এখনও বিলীন হয়ে যায়নি। যারা ওই সরকারের সময় সুবিধা নিয়েছিলো, হালুয়া রুটি খেয়েছিলো, তারাই এখন বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে নানা বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে। তাই ওই পরিস্থিতির যেন আর সৃষ্টি হতে না পারে সে দিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে।” প্রধানমন্ত্রী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার অত্যাচার-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বলেন, “আমরা যারা রাজনীতি করি, তাদের জন্য জেল-জুলুম হতেই পারে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন নেমে এসেছিলো।”

এ সময় প্রধানমন্ত্রী মিডিয়ার সমালোচনা করে বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য যে মাঝেমাঝে পত্রপত্রিকা এমন কিছু আজগুবি কথা লিখে ফেলে, যাতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়।”

এ সময় প্রধানমন্ত্রী যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভার সংক্রান্ত এক রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে বলেন, “একেক সময় একেকটা আজগুবি নিউজ কাউকে টার্গেট করে লিখে মানুষকে বিভ্রান্ত করা ঠিক না।”

বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভিসি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। কাউকে ভিসি নিয়োগের পর কারো কারো পছন্দ হয় আবার কারো কারো পছন্দ হয় না। এই নিয়ে আন্দোলন হয়। এতে ক্ষতি হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যার বিরুদ্ধে আন্দোলন হলো, নির্বাচনে তিনিই বেশি ভোট পেলেন। এতে যারা আন্দোলন করেছিলেন তারা কি লজ্জা পাননি। যে শিক্ষকরা তার নিজের কলিগদের অপমান করছে, এ কাজে ছাত্রদের ব্যবহার করছেন, পরবর্তীতে এই ছাত্রদের হাতে তারাই অপমানিত হবেন না এর কি নিশ্চয়তা আছে।”

প্রধানমন্ত্রী সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে বলেন, “৯৬ তে ক্ষমতায় এসে উন্নয়নের যে গতি ধারা রেখে গিয়েছিলাম, সেটা থাকেনি। বিএনপি-জামায়াতের পাঁচ বছর এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে সেই ধারা থেমে যায়। আমরা আবার এসে উন্নয়নের গতি সঞ্চার করেছি। ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারেনট পৌঁছে দিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ করতে চেয়েছিলাম সেটা করতে পেরেছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি, শিক্ষার হার বেড়েছে। আমরা দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি এবং সেটা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। দুর্নীতি দমন কমিশন, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আমাদের সরকারের সময় দেশে ৫ হাজার ১৮৩টি নির্বাচন হয়েছে। কোনো নির্বাচনেই কেউ কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি। কারণ আমরা গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারায় বিশ্বাসী।”

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “আমরা দীর্ঘ মেয়াদি উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে যে সমস্যা ধরা পড়ছে, আমরা সেখানেই তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ২০২১ সালে মধ্যে দেশকে সমৃদ্ধ, উন্নত ও ডিজিটাল হিসেবে গড়ে তুলবো।”

সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফসহ দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ