রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে পরিচালকসহ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) নিয়োগে কোনো ধরনের রাজনৈতিক বিবেচনা না করার সুপারিশ করেছেন বিশিষ্ট ব্যাংকার ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। একইসঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে এমডি ও ডিএমডি নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠনের আহবান জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে দ্য পিপলস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস কর্পোরেশন (পিডিএসসি) লি. আয়োজিত ‘বেসরকারি উদ্যোগে খেলাপি ঋণ আদায়ে সফলতা ও ব্যর্থতা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সুপারিশ তুলে ধরেন।
পিডিএসসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সূর চৌধুরী ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিএবিএম) এর মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী।
ইব্রাহিম খালেদ বলেন, “রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এগুলোতে দুর্নীতি আরও বাড়বে। আর্থিক খাতের শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে ও দুর্নীতি প্রতিরোধে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পরিচালক, এমডি ও ডিএমডি নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব ফেলা যাবে না। সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এসব পদে নিয়োগ দিতে হবে।”
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক এসব পদে নিয়োগ দেওয়া হলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সামনে নির্বাচন। নিজেরা নিজেদের পায়ে কুড়াল মারবেন না। আপনারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি। তাই আপনাদের ভালো চাই। রাজনীতিতে ভালো লোক আছে। তাদের নির্বাচন করে ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ করুন।”
বিশিষ্ট এ ব্যাংকার বলেন, “আমলাদের বার্ষিক প্রতিবেদন দেখে এমডি অথবা ডিএমডি করা যাবে না। কারও দুর্নীতি বা অনিয়ম করার তথ্য সেখানে থাকে না। তাই জনগণ যেটি ধারণা করে মত দেয় তা বিবেচনা করতে হবে।”
হলমার্ক কেলেংকারির প্রসঙ্গ তুলে কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, “একজন ডিএমডির প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে এটি হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় নিযুক্ত পরিচালকরা এর সঙ্গে জড়িত। তারা প্রকাশ্যে ঘুষ দাবি করে। এমনও শোনা যায়, খেলাপী ঋণ আদায়কারি কোন এক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের একজন পরিচালক ৩০ শতাংশ কমিশন চেয়েছেন।
ইব্রাহীম খালেদ বলেন, “আর্থিক খাতে শৃংখলা আনা না গেলে দুর্নীতি আরও বাড়বে।”
তার মতে, দুর্নীতি ঢেলে রাখতে চাইলে তা কমে না। বরং আরও বাড়ে। তাই দুর্নীতির মুখ উন্মোচন হতে হবে।
এসকে সূর বলেন, “একটি শ্রেণি ঋণ নিয়ে তা আর ফেরত দিতে চায় না। ফলে জনগণের আমানত দুষ্ট চক্রের মতো ঘুরতে থাকে। দেশের জন্য এটা অভিশাপ। তবে খেলাপী ঋণ অতীতের চেয়ে অনেক কমেছে।”
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে পিডিএসসির চেয়ারম্যান এমএ রহমান ঋণ আদায়কারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, “ব্যাংকের হয়ে আমরা খেলাপী ঋণ আদায় করে দিচ্ছি। ব্যাংক আমাদের সঠিকভাবে কমিশন দিতে চায় না। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এমন অনৈতিক কাজ করে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।