শুকনো মওসুমে রাজধানীর বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি থাকে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের চলতি ১৪তম অধিবেশনের প্রথম বেসরকারি সদস্য দিবসে ফরিদুন্নাহার লাইলীর প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান। পরিবেশ মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে সংসদে প্রশ্নের জবাব দেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার।
মন্ত্রী জানান, বছরে ১০০দিন অর্থাৎ শুধুমাত্র শুকনো মওসুমে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ঢাকার বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ গ্রহণযোগ্য মাত্রার বাইরে থাকে। এ সময় ঢাকা শহরে পিএম ১০ (ধূলিদূষণ)-এর পরিমাণ গড় ২০০ মাইক্রোগ্রাম পার কিউবিক মিটার। বর্ষা মওসুমে তা নেমে যায় ৬৫ মাইক্রোগ্রাম পার কিউবিক মিটারে। পরিবশে সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ (সংশোধিত ২০০৫) মোতাবেক ধূলিদূষণের গ্রহণযোগ্য মাত্রার পরিমাণ ১৫০ মাইক্রোগ্রাম পার কিউবিক মিটার।
বেগম ফরিদুন্নাহার লাইলী জানতে চান রাজধানী ঢাকা বিশ্বের ৩১তম দূষিত নগরী। যেসব কারণে ঢাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে তার অন্যতম হচ্ছে বায়ু দূষণ। অস্তিত্বের স্বার্থে সরকার এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করবে কিনা?
একই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরো জানান, চারদলীয় জোট সরকারের পুরো সময়ে ঢাকার বায়ু দূষণ রোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তাদের পাঁচ বছরের শাসনামলে যানবাহন সৃষ্ট বায়ূ দূষণের কারণে মাত্র ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। বর্তমান সরকারের তিন বছরে একই কারণে যানবাহনের মালিক ও চালকের নিকট থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
একই সদস্যের লিখিত আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বাঘ সংরক্ষণের জন্য গত বছর ভারতের সাথে প্রটোকল স্বাক্ষর করা হয়েছে। ইউএনডিপি, ভারত ও বাংলাদেশ বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে পরিচালতি বাঘ শুমারিতে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৪৪০টি পাওয়া গেছে। এ তথ্য অনুযায়ী সুন্দরবনে প্রতি ১৩ থেকে ১৫ বর্গ কিলোমিটারে একটি বাঘ রয়েছে। যা পুরো বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির আর কোন সুযোগ নেই।
নূর আফরোজ আলীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী সংসদকে জানান, পরিবেশ বিপন্নকারীদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সরকার তৎপর রয়েছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে পরিবেশ বিপন্নকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান সরকারের তিন বছরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৪৬ দশমিক ৬৬ মেট্রিক টন পলিথিন শপিং ব্যাগ জব্দ এবং ১ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে এর পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২৮ দশমিক ১১ মেট্রিক টন এবং ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
নাছিমুল আলম চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, রাজধানীসহ বড় বড় শহরে যানবাহনের হর্নের কারণে সৃষ্ট শব্দ দূষণ যাতে বৃদ্ধি না পায় সে জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে জুন ২০১২ পর্যন্ত পরিবেশ অধিদফতর, বিআরটিএ ও ট্রাফিক বিভাগ যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় যানবাহনের চালক ও মালিকদের নিকট থেকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা আদায়সহ মানমাত্রা অতিক্রমকারী হর্ন খুলে নেওয়া হয়েছে। অভিযানের পাশাপাশি বড় বড় শহরগুলোতে পরিবেশ অধিদফতর নিয়মিত মনিটরিং করছে।
অপু উকিলের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, দেশে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় যাতে জীববৈচিত্র বিঘ্নিত না হতে পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক তদারকিসহ এলাকায় দূষণ নিয়ন্ত্রণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা ও বালু নদীর পানি দূষণের জন্য ২২১টি শিল্প কারখানার বিরুদ্ধে ৪১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ধার্য করা হয়েছে। এরমধ্যে আদায় করা হয়েছে ২৫ কোটি ১১ লাখ টাকা।