সরকারের মেয়াদকালে আ’লীগের কাউন্সিল হচ্ছে না

সরকারের মেয়াদকালে আ’লীগের কাউন্সিল হচ্ছে না

বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল বা সম্মেলনের সম্ভাবনা নেই। দলের নীতি নির্ধারকেরা সরকারের মেয়াদের শেষ মুহূর্তে এসে কাউন্সিল চাচ্ছেন না।

নেতাকর্মীদের কাছে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, দলের পক্ষ থেকে এ বছর ডিসেম্বর নাগাদ কাউন্সিলের কথা বলা হলেও সাংগঠনিক প্রস্তুতির দিক থেকে ক্ষমতাসীন দলটি এখনো অনেক পিছিয়ে আছে।

জাতীয় কাউন্সিলের আগে ওয়ার্ড,  ইউনিয়ন থেকে শুরু করে উপজেলা, জেলা পর্যায় পর্যন্ত কাউন্সিল করতে হবে।

গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বর থেকে তৃণমূল পর্যায়ের কাউন্সিল শুরু করা হলেও সেটা তেমন গতি পায়নি। এখন পর্যন্ত ইউনিয়ন পর্যায়ের কাউন্সিলই শেষ করা সম্ভব হয়নি।

তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাউন্সিল করা আওয়ামী লীগের জন্য সমস্যা নয়, সাত দিনের প্রস্তুতিতেও দল কাউন্সিল করতে পারে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের সময় আসন্ন। এই সময়ে কাউন্সিল করা ঠিক হবে কি না সেটাই বড় কথা।

জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র এক বছরের মতো সময় হাতে রয়েছে। নির্বাচনের আগে এই অল্প সময়ে জেলা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নতুন কমিটি এসে সব গুছিয়ে নেওয়া সহজ হবে না বলে তারা মনে করছেন।

বিশেষ করে জেলা পর্যায়ে নেতৃত্বের পরিবর্তন হলে নতুন নেতৃত্ব এসে কাজ শুরু করতে না করতেই নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। এটা দলের জন্য সমস্যা হতে পারে বলে তাদের মত।

গত ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী সংসদের ৩ বছর মেয়াদ শেষ হয়েছে। ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।

এদিকে, কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যথাসময়েই দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এক বছর আগে থেকেই বলে আসছিলেন।

কিন্তু নির্ধারিত সময়ে দলের কাউন্সিল করা সম্ভব হয়নি। কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নেতারা এখন চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ সম্মেলন করার কথা বলছেন। তবে, ডিসেম্বরের কথা বলা হলেও সাংগঠনিক প্রস্তুতির অগ্রগতি বিবেচনায় সে সম্ভাবনাও নেই।

চলতি বছরের মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে কাউন্সিল শেষ করা সম্ভব হলেও জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে আরো সময় লাগবে। বিশেষ করে জাতীয় সম্মেলনের আগে জেলা সম্মেলন সম্পন্ন করতে হবে। যে গতিতে সম্মেলন প্রক্রিয়া এগোচ্ছে তাতে জেলা সম্মেলন সম্পন্ন করতে আগামী বছর জানুয়ারি পেরিয়ে যাবে বলে নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

তখন নির্বাচনের সময় আরো এগিয়ে আসবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এতো অল্প সময় আগে জেলা পর্যায়ে নতুন কমিটি নতুন নেতৃত্ব আনা ঠিক হবে না বলে দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা ও মন্ত্রী বাংলানিউজকে বলেন, “আগামী দুই মাসের মধ্যে কাউন্সিল করতে পারলে হয়তো সমস্যা হতো না। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না। এর পর কাউন্সিল করা ঠিক হবে না। কারণ, নির্বাচনের আগে নতুন নেতৃত্ব এলে সব কিছু সামলে উঠতে পারবেন না। এ অবস্থায় নির্বাচনের আগে দলের কাউন্সিলের কথা বললে আমি নেত্রীকে (সভাপতি শেখ হাসিনা) বলবো, এখন কাউন্সিল দরকার নেই।”

এদিকে, দলের কাউন্সিল প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের ১২টি টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় কাউন্সিল সম্ভব না হলেও এ বছরের মধ্যেই তৃণমূল কাউন্সিল শেষ করা হবে। তৃণমূলকে চাপে রেখে এ বছরের মধ্যে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা সম্মেলন করার জন্যই এ টিমগুলো কাজ করবে বলে নেতারা জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী প্রায় ৭ বছর পর তড়িঘড়ি করেই ওই কাউন্সিল করতে হয়।

এর আগে কাউন্সিল হয় ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর। সেবারও দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৩ বছর পর নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিল করা সম্ভব হয়নি, এবারও হচ্ছে না।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রতি তিন বছর পর পর দলের সব পর্যায়ে কাউন্সিল করার বিধান রয়েছে। প্রায় ৭ বছর পর তখন (২০০৯ সাল) দলের জাতীয় কাউন্সিল করা হলেও অনেক জেলা-উপজেলা কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ অবস্থায় থেকে যায়।

এর পর গত বছর তৃণমূল থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত কাউন্সিলের সময়সীমা বেঁধে দিলেও তা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। বেঁধে দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী এ বছর মে-জুনের মধ্যে জেলা সম্মেলন শেষ করার কথা ছিলো। সে কারণে গত ২৪ জুলাই দলের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর সম্মেলনের আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের তৃণমুল পর্যায়ের কাউন্সিল শেষ করে উপজেলা, জেলা কাউন্সিল শুরু করবো। ডিসেম্বর নাগাদ জাতীয় কাউন্সিল করতে পারবো বলে আশা করছি।”

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নূহ-উল-আলম লেনিন বাংলানিউজকে বলেন, “এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় কাউন্সিলের সম্ভাবনা আছে। তৃণমূল পর্যায়ে কাউন্সিল শেষ করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এজন্য ১২টি টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে, যাতে দ্রুত এ সম্মেলন প্রক্রিয়া শেষ করে জাতীয় সম্মেলন করা যায়।”

রাজনীতি