পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ নিলেন সোনালী ব্যাংকের এমডি

পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ নিলেন সোনালী ব্যাংকের এমডি

বাংলাদেশ ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে হলমার্ক গ্রুপের জালিয়াতির মাধ্যমে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়ার জন্য ব্যাংকের নীতি নির্ধারণী পরিচালনা পর্ষদকে (বোর্ড) দায়ী করলেও ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত বলছেন ভিন্ন কথা।

তিনি বলছেন, এর সঙ্গে ব্যাংকের অসাধু কিছু কর্মকর্তা জড়িত। বাংলাদেশ ব্যাংক যাই বলুক, স্বাধীনভাবে পরিচালিত ফাংশনাল রির্পোটে বোর্ডকে দায়ী করা হয়নি। সেখানে বেরিয়ে এসেছে, এর সঙ্গে কর্মকর্তারা জড়িত। তবে বোর্ড এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বৃহস্পতিবার সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) শেষে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রদীপ কুমার দত্ত সাংবাদিকদের আরো বলেন, ‘‘তাদের (হলমার্ক) সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। তারা পালিয়ে যায়নি, দেশেই আছে। এ ব্যাপারে খুব শিগগিরই তাদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হবে। তুলে নেওয়া অর্থ আদায় হবে বলে আশা করি।’’

এদিকে বার্ষিক সাধারণ সভার মাধ্যমে ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলাম, পরিচালক সুভাষ চন্দ্র সিংহ রায়, শহীদুল্লাহ মিয়া ও কাশেম হুমায়ূন অবসরে গেলেও তারা পুনরায় আগের পূর্ণ মেয়াদের জন্য নিয়োগ পেয়েছেন। নতুন করে পরিচালক নিয়োগ না দেওয়ায় সরকার তাদের এ নিয়োগ দিয়েছে। ফলে তাদের মেয়াদের বাকি সময়টাও তারা ব্যাংকের পরিচালক থাকছেন। তবে চলতি মাসেই তাদের মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে।

সাধারণভাবে এজিএম হলে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের এক-তৃতীয়াংশ পরিচালককে অবসরে যেতে হয়।

প্রদীপ কুমার দত্ত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘আপনারার এমন সংবাদ পরিবেশন করবেন না যাতে গ্রাহকরা আতঙ্কিত হন। দেশজুড়ে সোনালী ব্যাংকের শাখা রয়েছে। ভুল সংবাদে তারা আতঙ্কিত হতে পারে। কিছু কুলাঙ্গার কর্মকর্তার কারণে এতো বড় একটি জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। তবে সোনালী ব্যাংক বড় ব্যাংক। এতে এর বড় তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। আপনারা (সাংবাদিকরা) দেশের সন্তান। তাই আপনাদের সংবাদ মাধ্যমে এমন কোনো সংবাদ পরিবেশন করবেন না যাতে এর গ্রাহকরা আতঙ্কিত হন।’’

বার্ষিক সাধারণ সভায় এ অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে কিনা- এ প্রশ্নে এমডি বলেন, নিশ্চয়ই হয়েছে। তবে বোর্ড এর দায় নিয়ে অনুশোচনা করেছে কিনা প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, ফাংশনাল রির্পোটে বোর্ডের ওপর দায়ের কোনো কথা বলা হয়নি।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি লিখে এর দায় বোর্ডকে নিতে হবে বলে জানায়। অন্যদিকে, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দিয়ে দায়ী ৩২ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে বলে।

প্রদীপ কুমার বলেন, ‘‘হলমার্কসহ এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। বোর্ড বলেছে, শুধু চিঠি চালাচালি নয়। তাই খুব শিগগিরই আমরা তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবো।’’

রাজধানীর মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টায় এজিএম শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল চারটায়। বার্ষিক সাধারণ সভায় ২০১১ সালের (পঞ্জিকা বছর অনুযায়ী) বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন পাস হয়। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১১ সালে ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ৯৯৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। প্রতিবেদন অনুসারে আর্থিক সূচকের সবগুলোতেই এ সময়ে ব্যাংক ভালো করেছে। তবে কমেছে প্রবাসী আয় সংগ্রহের হার।

সম্প্রতি সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে অবৈধভাবে কর্মকর্তাদের যোগাসাজশে দুই হাজার ৬৬৭ কোটি হাতিয়ে নেয় হলমার্ক গ্রুপ। এ ঘটনায় ব্যাংকটির দুই জন উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে (ডিএমডি) ওএসডি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। দুই জন মহাব্যবস্থাপককে ওএসডি করে বোর্ড। আর ১৭ জন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। বাকিরা স্বাভাবিক অবসরে গেছেন।

অর্থ বাণিজ্য