ঢাকা-১৭ আসন থেকে আর নির্বাচন করতে চান না জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আগামী নির্বাচনে রংপুর, সিলেট ও কুড়িগ্রাম সদর থেকে নির্বাচন করবেন বলে মনস্থির করেছেন তিনি। এরশাদের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র এ খবর নিশ্চিত করেছে।
ঢাকা-১৭ (গুলশান-বনানী-ক্যান্টনমেন্ট-ভাষানটেক) আসনে এরশাদের পরিবর্তে মহানগর (উত্তর) জাতীয় পার্টির সভাপতি এসএম ফয়সল চিশতীকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া এইচআরসি গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু সাইদ চৌধুরীর নামও বিবেচনায় রয়েছে বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।
পার্টির একটি অপর এক সূত্র জানিয়েছে, একক নির্বাচনের লক্ষে এরই মধ্যে যে ১০৫ আসনে জাপা প্রার্থী মোটামুটি চূড়ান্ত করা হয়েছে সে তালিকাতেও ঢাকা-১৭ আসনে এরশাদের পরিবর্তে ফয়সল চিশতীর নাম রয়েছে।
পার্টি সূত্র জানিয়েছে, রংপুর ও সিলেট সদরের নির্বাচনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এরশাদ। তবে কুড়িগ্রাম সদরের বিষয়টি পরিবর্তন হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের কোন আসন থেকে নির্বাচনে লড়তে পারেন জাপা প্রধান।
সিলেট সদর আসনে নির্বাচনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে শাহপরান মাজার এলাকায় একটি জমি কেনা হয়েছে এরশাদের জন্য। একটি বাড়ি তৈরির কাজও চলছে সেখানে। এ বিষয়ে সার্বিক দায়িত্বে রয়েছেন লন্ডনপ্রবাসী এক জাপা নেতা।
এর আগে টিপাইমুখ লংমার্চের সময় এরশাদ সিলেটকে তার দ্বিতীয় জন্মভূমি বলে উল্লেখ করে বলেছিলেন, “আমি জেলে গেলে সিলেটের লোকজন লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিয়ে আমার জীবন বাঁচিয়েছে। রংপুর আমাকে জন্ম দিলেও সিলেটের লোক আমাকে ভোট দিয়ে ফাঁসির হাত থেকে রক্ষা করে দ্বিতীয়বার জন্ম দিয়েছে।”
ওই বক্তৃতায় কখনও সুযোগ পেলে সিলেটবাসীর সেই ঋণ শোধ করারও অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন এরশাদ।
ওই সময় এরশাদ আরও বলেছিলেন, “আমি ক্ষমতায় থাকাকালে রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয় করিনি। করেছি সিলেটে। একই সঙ্গে রংপুরে বিভাগ না করে সিলেটে বিভাগ করেছি। এ নিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। আগামীতে সুযোগ পেলে সিলেটের উন্নয়ন নিজ হাতে করতে চাই।”
সিলেট সদর থেকে নির্বাচন করার পক্ষে যুক্তি হলো- এরশাদ সেখান থেকে নির্বাচন করলে ওই অঞ্চলের আসনগুলোতে এর প্রভাব পড়বে। এছাড়া সিলেট সদর আসনের আওয়ামী লীগ-বিএনপির সম্ভাব্য সব প্রার্থীর চেয়ে এরশাদের অবস্থান ভালো বলে দলীয় ও গোয়েন্দা জরিপে উঠে এসেছে।
“সিলেট সদর থেকে যে দল নির্বাচনে বিজয়ী হয় তারাই সরকার গঠন করে“ বলে যে কথা প্রচলিত আছে সেটিকেও আপ্তবাক্য ধরে এগুচ্ছেন জাপা চেয়ারম্যান।
এদিকে কপাল পুড়ছে বর্তমান এমপি কুড়িগ্রাম-৩ (উলিপুর) একেএম মাইদুল ইসলাম ও গাইবান্ধা-২ (সুন্দরগঞ্জ) থেকে নির্বাচিত কর্নেল (অব.) আব্দুল কাদেরের।
বিশ্বস্ত সূত্রটি আরও জানিয়েছে, এলাকায় না যাওয়া এবং গণবিছিন্ন হয়ে পড়ায় এ দুই এমপিকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না। কর্নেল কাদের এর আসনে সাবেক এমপি ওয়াহিদুজ্জামান বাদশা এবং মাইদুল ইসলামের আসনে সাবেক এমপি মতিউর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে।
এরশাদের ভাই পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের নির্বাচন করবেন লালমনিরহাট সদর অথবা পাটগ্রাম-আদিতমারি থেকে। এ ছাড়া নীলফামারীর (জলঢাকা- কিশোরগঞ্জ) আসনটিও জিএম কাদেরের বিকল্পের তালিকায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
বেগম রওশন এরশাদ ভোট করবেন ২টি আসনে। এর একটি হচ্ছে গাইবান্ধা-৫, অপরটি ময়মনসিংহ সদর। বিগত নির্বাচনেও এ দুই আসনে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। দু’টি আসনেই মহাজোট নেতা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে হেরে যান মহাজোটেরই অন্যতম শরিক জাপা প্রার্থী রওশন এরশাদ।
পরে এরশাদের ছেড়ে দেওয়া রংপুর সদর আসন থেকে উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সংসদে যান বেগম এরশাদ।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বিগত নির্বাচনে বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচিত হন। এবার তিনি উজিরপুরের পাশাপাশি পটুয়াখালী-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে চান।
ঢাকা-৬ (খিলগাঁও-সবুজবাগ-মতিঝিল) আসন থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, ঢাকা-৮ (ধানমন্ডি-হাজারীবাগ-মোহাম্মদপুরের একাংশ) আসন থেকে সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ নির্বাচন করবেন।
প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, “আমি যেহেতু এ এলাকার বাসিন্দা তাই এই এলাকা থেকেই নির্বাচন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত রয়েছে। দেখি শেষ পর্যন্ত কি হয়।”
এ বিষয়ে ৯ সেপ্টেম্বর এরশাদের বৈঠকে ডাক পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এরশাদের রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভরায় খুলনার (দাকোপ-বাটিয়াঘাটা) আসনে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
সুনীল শূভরায় বলেন, “আমি ওই আসন থেকে নির্বাচন করার বিষয়ে স্যারকে (এরশাদ) জানিয়েছি। এখন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনি জানাবেন।”
ফেনী-২(সদর) আসন থেকে যুগ্ম-মহাসচিব হাজী আলাউদ্দিন, ফেনী-৩ (দাগনভুইয়া-সোনাগাজি) আসনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে এরশাদের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ারকে। এ প্রসঙ্গে রিন্টু আনোয়ার বলেন, “আমি ৯ সেপ্টেম্বর বৈঠকে ডাক পেয়েছি।”
তিনি জানান, ৯ সেপ্টেম্বর এরশাদের বৈঠকে ডাক পাওয়া এ শ্রেণীর ১০৫ জন সবচে‘ বেশি সম্ভাবনাময় প্রার্থী। এসব আসনের মধ্যে কমপক্ষে ৮০টি আসনে জাপার প্রার্থী নিশ্চিত বিজয় অর্জন করতে সক্ষম। এরপর বি এবং সি শ্রেণীর তালিকা রয়েছে ওই দুই তালিকায় কিছুটা পরির্তন আসতে পারে।
বরিশাল-৩ (উজিরপুর-বাবুগঞ্জ) আসনের বতর্মান এমপি প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু ও প্রেসিডিয়াম সদস্য চিত্র নায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় তাদেরকেই এখন পর্যন্ত ওই আসনের প্রার্থী হিসেবে রাখা হয়েছে।
প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গত নির্বাচনে হেরেছেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসনটি কাজী জাফর আহমদকে ছাড় দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ প্রার্থী প্রত্যাহার না করার কাজী জাফর আহমেদ পরাজিত হন।
এবার তার আসনটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। একই আসনের অন্যতম দাবিদার রয়েছেন তারই হাত ধরে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করা বর্তমানে পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান আইসিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও দিগন্ত মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক এইচএনএম শফিকুর রহমান ।
যে কারণে আপাতত দুই জনের নামেই তালিকায় রাখা হয়েছে। পরে একজনকে অন্য কোন আসন দেওয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কাজী জাফর আহমদকেই সরতে হতে পারে বলেও সূত্র দাবি করেছে।
জাতীয় ছাত্র সমাজের সদস্য সচিব আবুল কাশেম রিপনকে জয়পুরহাট-২ (কালাই-ক্ষেতলাল-আক্কেলপুর) আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ৯ সেপ্টেম্বর ডাক পাওয়া ১০৫ জনের তালিকার মধ্যে তার নামও আছে বলে জানা গেছে।তবে সব প্রস্তুতিই একক নির্বাচনকে সামনে রেখে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার জানান, জাতীয় পার্টি নির্বাচনের দিকেই এগিয়ে চলছে। নানা রকম পরিকল্পনা থাকবে এটাই স্বাভাবিক।