আমিনবাজারে ৬ ছাত্র হত্যা মামলা তদন্ত শুরু করেছে র‌্যাব

আমিনবাজারে ৬ ছাত্র হত্যা মামলা তদন্ত শুরু করেছে র‌্যাব

হাইকোটের নির্দেশে আমিনবাজারের চাঞ্চল্যকর ৬ ছাত্র হত্যা মামলার দায়িত্ব বুঝে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে র‌্যাব।

র‌্যাব সূত্র জানায়, হাইকার্টের রায়ের পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) থেকে গত ২৯ আগস্ট (মঙ্গলবার) বিকেলে ওই মামলাটির ‘কেস ডকেট’ র‌্যাব সদর দপ্তরে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

র‌্যাব মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে এর তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। তার নেতৃত্বে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও চাঞ্চল্যকর ওই মামলাটির তদন্তে তদারকী করতেও গঠন করা হয়েছে একটি বিশেষ সুপারভিশন টিম। ইতিমধ্যে সংস্থাটি মামলার তদন্ত কাজ শুরু করতে প্রাথমিক প্রক্রিয়াও শেষ করেছে বলে জানা গেছে।

গত ৭ আগস্ট নিহত ছাত্রদের অভিভাবকদের পক্ষে হাইকোর্টে করা এক সম্পূরক আবেদনের শুনানি শেষে সিআইডি থেকে মামলাটি র‌্যাবের কাছে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আব্দুর রব সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ। ওই বেঞ্চে ৭ দিনের মধ্যে সিআইডি থেকে র‌্যাবে মামলাটি স্থানান্তরে নির্দেশ জারির ২২ দিন পর মামলাটি র‌্যাবে স্থানান্তর করা হয়।

গত ২০১০ সালের ১৭ জুলাই শব-ই-বরাতের রাতে সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রাম সংলগ্ন কেবলার চরে ডাকাত সন্দেহে ৬ ছাত্রকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয়রা। ঘটনাটি দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলে এর তদন্তে হাইকোর্ট ও পুলিশ পৃথক দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

উভয় কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গ্রামবাসীদের পিটুনিতে নিহত ৬ ছাত্র ডাকাত নয়। ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করলে ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এড়ানো যেত বলে প্রতিবেদনে  উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও উভয় তদন্ত প্রতিবেদনে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

২০১১ সালের জুলাই মাসে হাইকোর্ট সরকারের প্রতি এক রুল জারি করেন। ওই রুলে জানতে চাওয়া হয়, নিরীহ ছাত্রদের পিটিয় হত্যা করার ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা কেন সংবিধান পরিপন্থি ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না?

এর আগে ২০১১ সালের ১০ আগস্ট হাইকোর্টের নির্দেশে ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম উৎপল চৌধুরীকে প্রধান করে এক সদস্যবিশিষ্ট একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অপরদিকে, ওই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে ২০১১ সালের ২১ জুলাই ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি আমির উদ্দিনকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির  সদস্য সচিব করা হয় ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলামকে এবং সদস্য করা হয় যথাক্রমে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) স্পেশাল পুলিশ সুপার মাসুদ করিম ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) স্পেশাল পুলিশ সুপার শেখ মো. রেজাউল হায়দারকে।

বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি এক মাস তদন্ত করে নিহত ছাত্রদের পরিবারের সদস্য, ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ১১ পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় গ্রামবাসীসহ ৫৪ ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

ওই বছরের  ৮ সেপ্টেম্বর  কমিটির প্রধান ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিম উৎপল চৌধুরী ও একেএম এনামুল হক সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

পুলিশের তদন্ত কমিটিও তাদের তদন্ত শেষে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। উভয় তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আমিনবাজারে ডাকাত সন্দেহে পিটুনিতে নিহত ৬ ছাত্র ডাকাত নয়। এছাড়াও ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণেরও সুপারিশ করা হয়।

ডাকাত সন্দেহে গ্রামবাসীর পিটুনির শিকার হয়ে নিহতরা হলেন, ম্যাপললিফ স্কুলের ছাত্র শাম্‌স রহিম ওরফে শাম্মাম,  মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র ইব্রাহিম খলিল ও কামরুজ্জামান কান্ত, তেজগাঁও কলেজের ছাত্র টিপু সুলতান, তৌহিদুর রহমান পলাশ ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির ছাত্র মনিব সেতাব। এছাড়াও গুরুতর আহত হয়ে বেঁচে যায় রুবেল নামের এক তরুণ।

এ ঘটনায় স্থানীয় এক বালু ব্যবসায়ী ও পুলিশ পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয় গুরুতর আহত রুবেল ও নিহত ৬ ছাত্রকে। অপরদিকে, ডাকাত সন্দেহে ৬ ছাত্র হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাভার থানার এসআই আনোয়ার হোসেন অজ্ঞাত গ্রামবাসীদের আসামি করে অপর মামলাটি করেন।

দুই তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সাভার মডেল থানার ৮ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমানকেও ঢাকার পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া প্রত্যাহার করা দুই এসআই যথাক্রমে আনোয়ার হোসেন ও হারেস শিকদারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তদন্তভার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) দেয়া হয়।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয় উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার এম. সোহায়েল জানান, ৬ ছাত্র হত্যা মামলাটি র‌্যাব বুঝে নিয়েছে। একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার অধীনে তদন্ত দল ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। মামলাটির তদন্ত কাজ তদারকি করতে একটি সুপারভিশন কমিটিও গঠনা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ