বুয়েট পরিস্থিতি নিয়ে টানা তিন ঘণ্টা বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যাবেন কিনা তা স্পষ্ট করে বলেননি তারা।
এমনকি উপাচার্যকে অপসারণ করার দাবির বিষয়টির সমাধান কি হবে তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বুধবার বিকেল সোয়া চারটায় শিক্ষামন্ত্রী বুয়েটের অধ্যাপক ড. মো. এহসান ও অধ্যাপক ড. একেএম মাসুদ এবং ১৬ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে বৈঠক শুরু করেন। বৈঠক শেষ হয় সন্ধ্যা সোয়া সাতটায়।
সূত্র জানায়, বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিলো সে ধারাবাহিকতায় উপ-উপাচার্যকে প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পর্যায়ক্রমে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বুয়েটে শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে যা যা করণীয় তা করা হবে বলেও জানান তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আরো বলেছেন, মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, থানায় চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উপ-উপাচার্যকে প্রত্যাহারের জন্য সার সংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে কার্যকর সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘গত দু’দিন আগে আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছি। শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে তারা উদ্যোগ নিয়েছেন।’’
বুয়েটর ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে ফেরার আহবান জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীরা তাদের ক্ষোভ দু:খের কথা বলেছেন। আমরা তাদের কথা শুনেছি।’’
‘‘বুয়েটে শিক্ষার পরিবেশ যেন ঠিক থাকে সে বিষয়ে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশাসনিক অনিয়ম সতর্ক থাকবো। অনিয়ম হলে অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবো।’’
‘‘শিক্ষার্থীদের এক ঘণ্টা সময় নষ্ট হলেও অপূরণীয় ক্ষতি হবে। সেটি যাতে না হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
শিক্ষা সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের বলেন, “শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি।’’ শিক্ষা কার্যক্রম ফের শুরু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা আনন্দিত যে, খুব শিগগিরই ফের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যাবে।’’
শিক্ষার্থীদের পক্ষে অভিক সাংবাদিকদের জানান, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী বুয়েটে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদের দাবিগুলো কার্যকর করা শুরু হয়েছে।’’
উপাচার্যকে সরানোর এক দফা দাবির বিষয়ে অভিক বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন উপ-উপচার্যকে সরানোর বিষয়ে প্রক্রিয়া নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া বুয়েটের ঐতিহ্য রক্ষায় যা যা করার তা করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন শিক্ষামন্ত্রী।”
ক্লাসে ফেরা ও আন্দোলন বন্ধ করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে জানতে চাইলে অভিক আরো বলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস ফিরে গিয়ে আন্দোলনরত সব ছাত্র-ছাত্রীকে জানাবো। তারপর সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেবো। পরে সিদ্ধান্ত আপনাদের জানাবো।’’
উল্লেখ্য, সরকার বুয়েটের চলমান সংকট সমাধানে উপ-উপাচার্যকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুয়েট শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে শিক্ষকরা এর সঙ্গে একমত হয়ে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও অনঢ় রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, শুধু উপ-উপাচার্য নয়, উপাচার্যকেও অপসারণ অথবা তাকে পদত্যাগ করতে হবে।
গত সোমবার মধ্যরাতে শিক্ষক সমিতির নেতারা শিক্ষামন্ত্রীর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে গিয়ে বৈঠক করেন। এ সময় উপ-উপাচার্য হাবিবুর রহমানকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ২টি মামলাও প্রত্যাহার করা হবে।
তবে উপাচার্যের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানানো হয়।
বুয়েট শিক্ষক সমিতিও এসব সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়। ক্লাসে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানান শিক্ষকরা।
বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সাংবাদিকদের জানান, “শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে উপ-উপাচার্যকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বুয়েটের ঘটনায় বুধবার রাতে যে দু’টি মামলা করা হয়েছে, সেগুলোও প্রত্যাহার করা হবে।”
মন্ত্রী বলেন, “উপাচার্যের অপসারণের দাবিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য অনিয়মের তদন্ত করা হবে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সরকার প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেবে।”
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুজিবুর রহমান সংবাদিকদের বলেন, “সরকার মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা উপ-উপাচার্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। আলোচনার মাধ্যমে উপাচার্য অপসারণ এবং অনান্য দুর্নীতি তদন্ত করবে বলে সরকার আশ্বাস দিয়েছে।’’
মঙ্গলবার সকালে সরকারি সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনায় বসেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সম্মেলনকক্ষে দেড় ঘণ্টার বৈঠকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, তারা সরকারের এই সিদ্ধান্ত মানেন না। শুধু উপ-উপাচার্যকে প্রত্যাহার করলেই হবে না। তারা উপাচার্য এস এম নজরুল ইসলামেরও পদত্যাগ চান। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলতে চান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বেলা সাড়ে তিনটায় বুয়েট মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে শিক্ষার্থীদেরও নিজস্ব ভাবনা রয়েছে। আছে নিজেদের যুক্তিসঙ্গত ভাবনাগুলো তুলে ধরার চেতনা। তাই অভিভাবক হিসেবে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে তাদের কথাগুলো তারা তুলে ধরতে চান।
শিক্ষার্থীদের এ দাবির প্রেক্ষিতে তাদের বৈঠকে ডাকেন শিক্ষামন্ত্রী।