খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছিলো আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদকে। চোখেমুখে হতাশার ছাপ। খোঁজ করতে করতে জানা গেলো তিনি মহিলা শাখার চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন!
পদত্যাগ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। বিসিবির বড় কর্তার আহ্বানে বিকেল গড়ানোর আগে তিনি তা প্রত্যাহারও করে নিয়েছেন। অভিমানের বিষ, বাষ্প হয়ে উড়ে গেছে সহ-পরিচালকদের কাছ থেকে সহমর্মিতা পাওয়ার পর। ফুয়াদের পদত্যাগ নাটকের অন্যতম কারণ বুধবার বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের জরুরী সভায় তাকে একহাত নিয়েছেন সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন নির্ভরযোগ্য একজন জানিয়েছেন, ‘জাতীয় দল নির্বাচন নিয়ে নির্বাচকদের কাজে হস্তক্ষেপ, দুই বিদেশি কোচের কাজ বিভাজন ও স্পর্শকাতর কিছু বিষয় থেকে রেদোয়ানকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। সভাপতির সঙ্গে দু’একজন পরিচালকও তাকে স্পর্শকাতর বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকার অনুরোধ করেন। সেজন্য তিনি অপমানবোধ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পরে বিষয়টি ঠিক হয়ে গেছে।’
যদিও পদত্যাগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বিসিবির মহিলা শাখায় রাজার সম্মান পাওয়া চেয়ারম্যান ফুয়াদ। ঘটনার সূত্রপাত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হোম সিরিজের দল নির্বাচন নিয়ে। সূত্র জানিয়েছে, মহিলা শাখার চেয়ারম্যান জাতীয় দল নির্বাচকদের ওপর প্রভাব খাটাতে চেষ্টা করেন। খবরটি বিসিবি সভাপতির কানে যেতে বেশিক্ষণ লাগেনি। এক কান দুই কান করে তা পরিচালকদের কাছেও পৌঁছে যায়। বোর্ড সভায় সকলে মিলে ফুয়াদের দিকে আঙ্গুল তোলেন। অবশ্য তাকে খুব কড়া করে কিছু বলা হয়নি বলে একজন পরিচালকের দাবি। তিনি মনে করেন, সভাপতি এবং অন্যরা যা বলেছেন তা মানলে রেদোয়ান (ফুয়াদ) সাহেবের মঙ্গল হবে। তিনি এত অভিমান করছেন কেন?
বিশ্বকাপের বাছাই টুর্নামেন্টে জাতীয় মহিলা দলের কোচের দায়িত্বে থাকা মততা মাবেনও ফুয়াদের মনবেদনার কারণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মমতার সঙ্গে রেদোয়ানের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। তিনি সভাপতির কাছে কমিটির চেয়ারম্যানের নামে অভিযোগও করেছেন। তাকে দলের বিষয়ে কথা বলতে নিষেধ করেছেন চেয়ারম্যান। এমনকি প্রধান কোচ ভিরা সিংহে যে ভাবে বলেন সেভাবে কাজ করতে বলেছেন মমতাকে।’
উপদেষ্টা কোচ মমতার সঙ্গে ঝামেলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ফুয়াদ। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে কোন ঝামেলা হয়নি। আমি কিছু শুনিওনি।’
কোচের কাছ থেকেও এবিষয়ে কিছু জানা সম্ভব হয়নি। এমনকি জাতীয় দলের খেলার বিষয়ে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ভিরা সিংহের কাছ থেকে দল সম্পর্কে জানার জন্য অনুরোধ করেন মমতা। এথেকেও বিষয়টি পরিষ্কার বিসিবি মহিলা শাখার চেয়ারম্যান এবং ভারতের সাবেক অধিনায়ক মমতার মধ্যে বিবাদ চলছে।
আয়ারল্যান্ড সফরের দল নির্বাচনের জন্য জাতীয় দল নির্বাচকদের মমতা তথ্য প্রদান করার পর থেকে তার ওপর বিরক্ত ফুয়াদ। কারণ নির্বাচকরা উপদেষ্টা কোচের বিশ্লেষণকে গুরুত্ব দিয়ে দল নির্বাচন করেছেন। ফুয়াদ ১৫ জনের দলে তার দৃষ্টিতে ভালো খেলোয়াড় নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রধান নির্বাচক আকরাম খানের কমিটি কোন ছাড় দেয়নি। এবারও একই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন একজন নির্বাচক।
এছাড়াও আয়ারল্যান্ড সফরে চেয়ারম্যান পরিবার নিয়ে যাওয়ায় বিরক্ত হয়েছেন কর্মকর্তাদের অনেকে। তার স্ত্রী এবং তিন ছেলের জন্য ভিসা পেতে দুই দিন বিলম্ব হয়। গত দেড় দুই বছরে মহিলা দলের বিদেশ সফরে তিনি সঙ্গী হওয়ায় বিরক্ত পরিচালকদের একটা বড় অংশ। ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন এবং আয়ারল্যান্ড সফর করেছেন জাতীয় মহিলা দলের সঙ্গে। এছাড়াও পুরুষ দলের পর্যবেক্ষক হয়ে জিম্বাবুয়ে সফর করেছেন। এসবও জামালপুর জেলা থেকে আগত এই পরিচালকের বিরুদ্ধে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
এদিকে মহিলা শাখার চেয়ারম্যানের পদত্যাগের বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলতে রাজি হননি বিসিবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজামউদ্দিন চৌধুরী। বিসিবি সভাপতিকেও মোবাইলফোনে পাওয়া যায়নি।