আত্মীয়-স্বজন দিয়ে চলছে হলমার্ক,এমডি-জিএম ভায়রা

আত্মীয়-স্বজন দিয়ে চলছে হলমার্ক,এমডি-জিএম ভায়রা

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে হলমার্কের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর আহমেদের ভায়রা হন গ্রুপটির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমেদ।

দুদকের অনুসন্ধান টিম বুধবার বিকেলে তাদের এ সম্পর্কের কথা নিশ্চিত করেছে।

দুদক জানায়, হলমার্কের শীর্ষে যারা আছেন, তারা সবাই আত্মীয়-স্বজন। হলমার্ক গ্রুপ তানভীরের নেতৃত্বে চললেও গ্রুপটির চেয়ারম্যান তার স্ত্রী জেসমিন ইসলাম। জিএম করা হয়েছে চেয়ারম্যানের বোনের স্বামীকে। গ্রুপটির আরও গুরুত্বপূর্ণ পদেও তানভীর দম্পতির আত্মীয়-স্বজন রয়েছে। মূলত গ্রুপের বিভিন্ন গোপন তথ্য যাতে ফাঁস হয়ে না যায়, সেজন্য হলমার্কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে তানভীর দম্পতির আত্মীয়-স্বজনকে রাখা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ব্যাংকিং সেক্টরে নজিরবিহীন ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় অন্যতম প্রধান হোতা হলমার্কের জিএম তুষার আহমেদ। হলমার্কের পক্ষ থেকে তুষার আহমেদই ঋণের বিষয়টি তদারকি করতেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, “রূরুপসী বাংলা শাখায় তুষারকে প্রায়ই দেখা যেতো। মূলত হলমার্কের ঋণের সকল বিষয় তিনি কাজ করতেন।”

দুদক সূত্র জানায়, বিদেশ থেকে তৈরি পোশাকসামগ্রী আমদানি-রপ্তানির কথা বলে এলসির বিপরীতে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে হলমার্ক নজিরবিহীন অর্থ কেলেঙ্কারি করে।

হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনার অনুসন্ধানে গঠিত দুদুকের সিনিয়র উপ-পরিচালক মীর জয়নুল আবেদিন শিবলীর নেতৃত্বে ৬ সদস্যের টিম হলমার্কের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা তদন্ত করছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান, এমডি, জিএম তিনজনই দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেননি। গত রোববার তানভীর দম্পতি অর্থাৎ গ্রুপটির এমডি ও চেয়ারম্যান দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তার অনেক প্রশ্নের উত্তরই এড়িয়ে গেছেন। আজ বুধবার হলমার্কের জিএম তুষারও জিজ্ঞাসাবাদে দুদককে তথ্য না দিয়ে নিজেকে ‘ক্লিন’ হিসেবে উপস্থাপন করেন।

যোগাযোগ করা হলে হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের অনুসন্ধানে কমিটির প্রধান ও দুদকের সিনিয়র উপ-পরিচালক মীর জয়নুল আবেদিন বাংলানিউজকে বলেন, “দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে তারা (এমডি, চেয়ারম্যান, জিএম) সঠিক তথ্য দিক আর না দিক দুদক কেলেঙ্কারির হোতাদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে।”

অনুসন্ধানের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গুরুত্বের সঙ্গে অনুসন্ধান চলছে। সময়ে সব জানানো হবে।”

হলমার্ক কেলেঙ্কারির বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র দুদক সংগ্রহ করেছে বলে সূত্র জানায়।

এদিকে বহুল আলোচিত হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনার সুষ্ঠু সুরাহা ও অর্থ পুনরুদ্ধারে অর্থ মন্ত্রণালয়, দুদক ও সোনালী ব্যাংক অনুসন্ধান করছে। এরই ধারাবাহিকতায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে মঙ্গলবার সোনালী ব্যাংকে সরকারের নিয়োগ দেয়া দুই উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।

অপরদিকে সোনালী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকের জালিয়াতি করা অর্থের অর্ধেক আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নগদ পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে হলমার্ক এমডি তানভীর আহমেদকে চিঠি দিয়েছে। ওই চিঠিতে বাকি অর্ধেক অর্থ পুনরুদ্ধারে প্রতিষ্ঠানটির সম্পত্তি মর্টগেজে নেয়ার কথা জানিয়েছে। সোনালী ব্যাংকের চিঠির বিষয়ে হলমার্ক আজ সন্ধ্যায় জরুরি মিটিং ডেকেছে।

এদিকে দুদক গত মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবিরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় সোনালী ব্যাংক ও হলমার্কের মোট ৩২ জনের জিজ্ঞাসাবাদ সম্পন্ন করেছে দুদক। এ কেলেঙ্কারির ঘটনায় আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে দুদক জানায়। দুদকের সম্ভাব্য জিজ্ঞাসাবাদের তালিকায় সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টাও রয়েছেন বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সোনালী ব্যাংকের কয়েকটি শাখায় জালিয়াতি, প্রতারণা ও কারসাজির মাধ্যমে মোট ৩ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকার ঋণ উত্তোলনের অভিযোগ ওঠে। এরমধ্যে হলমার্ক গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যাংকটির রূপসী বাংলা শাখা থেকে ২ হাজার ৬৬৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এ টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তোলন ও আত্মসাৎ করা হয়েছে অভিযোগ এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুদকে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। চিঠিতে বলা হয়- সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্রের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, শেরাটন শাখার আমানতকারীদের অর্থ থেকে মোট ৩ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা (এ পর্যন্ত উদঘাটিত) আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক/পরিচালক এবং ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময়কালে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে শাখা পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়।

অর্থ বাণিজ্য