সক্ষমতা সূচকে ১০ ধাপ পেছালো বাংলাদেশ রাজনীতিকদের সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের বিশ্বাসে চিড়

সক্ষমতা সূচকে ১০ ধাপ পেছালো বাংলাদেশ রাজনীতিকদের সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের বিশ্বাসে চিড়

বিশ্ব প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রতিবেদন ২০১২-১৩ এর সূচকে ১০ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ।

১৪৪টি দেশের মধ্যে করা এই জরিপে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১১৮তম। গত বছর এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০৮ নম্বরে।

বুধবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) ঢাকা কার্যালয়সহ সারাবিশ্বে একযোগে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাম্প্রতিককালে বিশ্ব প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের এতবড় পতন লক্ষ্য করা যায়নি। এর আগে ২০০৩-০৪ সালে বাংলাদেশ সূচক ২৪ ধাপ পিছিয়ে গিয়েছিল।

তবে শুধু বাংলাদেশই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নেপাল বাদে (১২৫তম) সব দেশের সূচকের অবনমন হয়েছে। এর মধ্যে ভারতের সূচক তিন ধাপ পিছিয়েছে, পাকিস্তানের ৬ ধাপ এবং শ্রীলংকার ১৬ ধাপ পিছিয়েছে।

এবারের তালিকায় প্রথম হয়েছে সুইজারল্যান্ড, দ্বিতীয় হয়েছে সিঙ্গাপুর এবং তৃতীয় অবস্থানে আছে ফিনল্যান্ড। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৫ থেকে নেমে এসেছে ৭ এ।

প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রতিবেদন তৈরি করতে যে জরিপ করা হয়, তাতে বাংলাদেশের ৮৭ জন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাকে যুক্ত করা হয়। এসব ব্যবসায়ীর কারো মূলধনই ১০ কোটি টাকার কম নয়। গত বছর ৭০ জন ব্যবসায়ীকে যুক্ত করে জরিপ করা হয়েছিল।

সিপিডির সম্মানিত ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে ১০ ধাপ পেছানোর ফলে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়েছে। সরকারকে বিষয়টি অনুধাবন করে ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা পুরনো সব সমস্যার সঙ্গে নতুন সমস্যা যুক্ত হয়ে তা অর্থনীতিকে আরো বিপদে ফেলবে। যা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।”

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, “সরকারের ব্যয় বেড়ে গেলে, টাকার অবমূল্যয়ন হলে, বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি হলে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়। জরিপের বিভিন্ন আশঙ্কাগুলো বিগত দিনগুলোতে অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এই অবনমন বাংলাদেশের উন্নতির সূচকের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েছে।”

দেবপ্রিয় বলেন, “প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী পুঁজিবাজার, ব্যাংকিং খাতের ভেতরে সমস্যা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানিক দক্ষতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়ন ও দুর্নীতি কমেনি। বরং দুর্নীতি বাড়ার প্রবণতা দেখা গেছে। বিনিয়োগকারীরা অর্থের সমস্যায় পড়েছেন। বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করা হয়েছে। রাজনীতিকদের নৈতিক মানের পতন হয়েছে। যে কারণে সরকারের মধ্যে অস্থিরতা জোরদার হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে। অলিখিত লেনদেন বেড়েছে। দুর্নীতি আর্থিক খাতের উৎকর্ষতায় অবনমন হয়েছে। আয় বৈষম্য কমানোর উদ্যোগে ঘাটতি ছিল। সেই সঙ্গে সরকারের ভর্তুকি নীতিমালা ব্যবসার সার্বিক পরিবেশকে বাধাগ্রম্ত করেছে। সার্বিক বিবেচনায় নিয়ে রাজনীতিকদের সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের বিশ্বাসে কিছুটা চিড় ধরেছে।

এতে বলা হয়, সংসদের কার্যকারিতা ভালো অবস্থায় নেই। বিদ্যুৎ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও তা গ্রহণযোগ্য মাত্রায় হয়নি। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষা হচ্ছে না। বিভিন্ন কোম্পানির সম্পদ বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। এখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুর্বলতা পরিলক্ষিত হয়েছে। পরিবেশগত আইনেও দুর্বলতা রয়েছে।

প্রতিবেদন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশে ঋণপ্রাপ্তিতে জটিলতা বেড়েছে। টাকার সঙ্গে ডলারের ওঠানামা বেশি হওয়া, মূল্যস্ফীতি রুখতে সরকার যথেষ্ঠ মনোযোগী ছিল না। মূল্যস্ফীতির কারণে উৎপাদন ব্যয় ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। উচ্চ সুদের হার ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক নেওয়ার প্রবৃদ্ধি কমেছে। ভারতের সঙ্গে ডিউটি ফ্রি মার্কেট সুবিধা পেলেও তা ব্যবসা বাড়াতো ভূমিকা নাও রাখতে পারে।

অর্থ বাণিজ্য