বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের থাকবে, এই দাবি তুলেছেন মহাজোটের সংসদ সদস্যরা। ৭২’র সংবিধানের আদলে অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের কাছে নিয়ে আসলে সংসদ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য আসবে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের ১৪তম অধিবেশন শুরুর দিনেই বিষয়টি নিয়ে সংসদ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। হাইকোর্টের বিচারপতিদেও দেওয়া রায় অসাংবিধানিক ও শপথ ভঙ্গের সামিল উল্লেখ করে মহাজোটের সিনিয়র সংসদ সদস্যরা আবারও সংবিধান সংশোধন করে বাহাত্তরের সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে আনার দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। একই সঙ্গে রায় প্রদানকারী বিচারপতিদের অপসারণ করারও দাবি জানান।
তবে স্পিকার এ বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে ভেবেচিন্তে সংসদকে অবহিত করবেন বলে জানান।
সংসদ সদস্যরা বলেন, হাইকোর্টের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিক ও এবিএম আলতাফ হোসেন স্পিকারের রুলিং সম্পর্কে রায় দিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন ও শপথ ভঙ্গ করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের হাত লম্বা। কিন্তু এতো লম্বা নয় যে, সেটি সংসদ পর্যন্ত আসতে পারে।
সুপ্রিম কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে ওইসব বিচারপতিদের অপসারণ করার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, সংবিধান সংশোধন করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের ক্ষমতা আবারও সংসদে ফিরিয়ে দিতে হবে। এটা দ্রুত না করলে বাংলাদেশের অবস্থাও পাকিস্তানের মতো হবে। তাই এখনই সতর্ক হয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী করি, কিন্তু স্বাধীনতা মানে এই নয় যে বিচারপতিরা যা খুশি তাই করবেন। বিচারপতিরাও আইনের উর্ধ্বে নন। গুটিকয়েক বিচারপতি সংবিধান লংঘন করে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন তার পেছনে গণতন্ত্র ধ্বংস করার কোন ষড়যন্ত্র আছে কীনা, এব্যাপারে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
আলোচনার সময় স্পিকার আবদুল হামিদ বলেন, আপিল সংসদ করেনি, করেছে সরকারের পক্ষে আইন মন্ত্রণালয়। সংসদ সম্পূর্ণ সার্বভৌম, তাই আইন মন্ত্রণালয়ের কোন কর্তৃত্ব সংসদের ওপর নেই।
বিচারাধীন বিষয়ে কথা বলা যাবে না-এ প্রসঙ্গে স্পিকার বলেন, এটি মার্ডার কেস বা জমি সংক্রান্ত মামলা নয়, যেটা নিয়ে আলোচনা হলে আদালত প্রভাবান্বিত হতে পারে। সার্বভৌম সংসদে সংবিধান নিয়ে আলোচনা বিচারাধীন হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। এটা নিয়ে আলোচনা অবশ্যই হতে পারে। কিন্তু কোন সংসদ সদস্যকে আক্রমণাত্মক বক্তব্য না রাখার জন্য তিনি অনুরোধ জানান।
আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর শুরু হওয়া অধিবেশন শুরু হলে সরকারি দলের সিনিয়র নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম পয়েন্ট অব অর্ডারে বিষয়টি উত্থাপন করলে বিতর্কের সূত্রপাত হয়।
প্রশ্নোত্তরপর্ব চলার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকলেও এই উত্তপ্ত বিতর্কের সময় ছিলেন অনুপস্থিত। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ দেশের বাইরে থাকায় তিনিও ছিলেন না। তবে আইন প্রতিমন্ত্রী তার পক্ষে বক্তব্য দেন। সন্ধ্যা ৭ টা ২০ মিনিটে এ বিতর্ক শুরু হয়ে একটানা ৯টা ৩৯ মিনিট পর্যন্ত ।
প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী চলা এ বিতর্কে অংশ নেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা তোফায়েল আহমদ, দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ফজলে রাব্বি মিয়া, ছায়েদুল হক, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের হাসানুল হক ইনু, মইন উদ্দীন খান বাদল ও জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু।
বিতর্কের সূত্রপাত করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, “একটি বিশেষ মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে স্পিকারের বিরুদ্ধে একটার পর একটা হামলা করছে। স্পিকারের ওপর হামলা মানে জাতীয় সংসদ ও গণতন্ত্রের ওপর হামলা, এটা মেনে নেওয়া যায় না। এ ব্যাপারে সংসদের ব্যবস্থা নিতে হবে।
হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্পিকারের রুলিং নিয়ে গায়েবি ও মনগড়া রায় দিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, এ রায়ে সংবিধানের ৭৮ (১), (২) ও (৪) অনুচ্ছেদ লংঘন করা হয়েছে।
বিচারপতিদের উদ্দেশ্য করে শেখ সেলিম বলেন, “বিচার বিভাগ স্বাধীন, কিন্তু সার্বভৌম নন- এটা তাদের মনে রাখতে হবে। স্পিকারের রুলিং সম্পর্কে রায় দিয়ে বিচারপতিরা সংবিধান লংঘন ও শপথ ভঙ্গ করেছেন। সুপ্রিম কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে ওইসব বিচারপতিদের ইমপিচমেন্ট করার দাবি জানাই। গুটিকয়েক বিচারপতি সংবিধান লংঘন করে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন তার পেছনে গণতন্ত্র ধ্বংস করার কোন ষড়যন্ত্র আছে কীনা, এব্যাপারে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।”
আওয়ামী লীগের জেষ্ঠ্য নেতা ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমদ বিতর্কে অংশ নিয়ে বলেন, হাইকোর্টের প্রদত্ত রায় জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণœ করেছে। আদালতে অনেকেই বলেন, বিচারপতিরা কে কোন ভাষায় রায় লেখেন, তা অনেক আইনজীবীই জানেন। এ রায় দেখে অনেকেই বলেছেন, হয়তো রায়টি ওই দুই বিচারপতির লেখা নয়। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট স্বাধীন। আমরা সীমা অতিক্রম করতে চাই না।”
সংবিধানের বিভিন্ন ধারা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক একজন বৃটিশ নাগরিক, দ্বৈত নাগরিক। কোন আইনে আছে একজন বিচারপতি লন্ডনে গিয়ে রাজনীতিতে জড়াবেন? হাইকোর্টের রায়ে স্পিকারকে পার্টি করা হয়নি, রুল ইস্যু করা হয়নি। একতরফাভাবে মনগড়া রায় দেওয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থা থাকবে না। জিয়াউর রহমান বাহাত্তরের সংবিধান সংশোধন করে সংসদের ইমপিচমেন্ট করার ক্ষমতা কেড়ে নেয়। তাই এখন সময় এসেছে, সংবিধান সংশোধন করে বাহাত্তরের সংবিধান ফিরিয়ে আনলে জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে।”
দফতরবিহীন মন্ত্রী ও প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আইনের বিভিন্ন ধারা উল্লেখ করে বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের রায়ের রিভিউ হয়, কিন্তু সংসদের স্পিকারের রায়ের কোন রিভিউ বা আপিল হয় না। যদি কোন বিচারপতি সংবিধান লংঘন করে তবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের বিধান রয়েছে। হাইকোর্টের দেওয়া রায়টি একটি উস্কানিমূলক, উদ্দেশ্যমূলক ও দূরভিসন্ধিমূলক রায়। কোন বিচারপতির কথায় বা সেনার হুইসেলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। স্পিকারের রুলিং যদি বৈধ না হয়, তবে সংসদ থাকে না, রাষ্ট্র থাকে না, বিচারপতিরাও থাকেন না।”
তিনি বলেন, “এমন কোন মার্শাল ল’ ছিল না যেখানে বিচারপতিরা জড়িত ছিলেন না। বিচারপতিদের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান এবং একজন প্রধান বিচারপতির প্রধান সামরিক প্রশাসক হওয়ার ঘটনা দেশের জনগণ ভুলে যায়নি।”
তিনি বলেন, “আমাদের এখনই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু আমরা চাই তিন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ঠিকভাবে চলুক। আমরা এক সঙ্গেই চলতে চাই।”
স্পিকার তো প্রধান বিচারপতির ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু কেন তিনি কিছু করছেন না? এই প্রশ্ন তুলে সুরঞ্জিত বলেন, “এটি সাংবিধানিকভাবেই চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করতে হবে। সবাই একবাক্য বলতে চাই- স্পিকারের রুলিংয়ের পক্ষে দেশের সব মানুষ রয়েছে।”
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন রায় প্রদানকারী দুই বিচারপতির বিরুদ্ধে সংসদ অবমাননার প্রস্তাব আনার দাবি জানিয়ে বলেন, “আগে একজন বিচারপতি স্পিকার সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করেছিলেন, এখন দু’জন বিচারপতি সংসদের সার্বভৌমত্বের শিকড় ধরেই টান দিয়েছেন। সুনির্দিষ্টভাবে তারা সংবিধান লংঘন করেছেন। এ দু’জন বিচারক স্পিকারের রুলিং নিয়ে রায় দিয়ে সংবিধান লংঘন করেছেন, তাই ওই দু’জন বিচারকের বিরুদ্ধে সংসদ অবমাননার প্রস্তাব আনা যেতে পারে।”
তিনি বলেন, “সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন এবং ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করে সংসদের সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনতে হবে। কেননা আমাদের বিচারপতিরা অতীতে সব ধরনের সাংবিধানিক অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।”
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, “কতিপয় সামরিক সদস্য ও বিচারপতি অতীতে বারবার সাংবিধানিক ধারাকে ব্যহত করার চেষ্টা করেছেন এবং পেরেছেন। বারবার গণতন্ত্র ব্যাহত হয়েছে। সংসদ রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন, আর রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও বিচারপতি নিয়োগ দেন। বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ৯৬ (২) অনুচ্ছেদে বিচারপতিদের ইমপিচ করার ক্ষমতা সংসদের ছিল। সংসদ আইন তৈরি করতে পারবে, কিন্তু সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু করলে তা সংশোধনের ক্ষমতা সর্বোচ্চ আদালতের রয়েছে।”
“সংসদ সদস্য, বিচারপতি কেউ-ই আইনের উর্দ্ধে নন” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সংসদ সদস্যদের বাড়তি সুবিধা রয়েছে যে সংসদের ভেতরে দেওয়া কোন মন্তব্য বা আলোচনা করলে সেটা আদালতের পছন্দ না হলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার নেই। তাই যে বিচারপতি আদালতের ভেতরের কার্যক্রম নিয়ে রায় দিয়েছেন তা তার এখতিয়ার বহির্ভূত।”
তিনি বলেন, “বিচার বিভাগের সঙ্গে সংসদের কোন যুদ্ধ শুরু হয়নি, ইমপিচ করার ক্ষমতা সংসদে ফিরিয়ে আনাই বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের একমাত্র পথ।”
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, “সংসদ সার্বভৌম। সংসদের কার্যক্রম ও স্পিকারের রুলিং নিয়ে আদালতের কথা বলার কোন এখতিয়ার নেই।”
তিনি ভারতের উচ্চ আদালতের বিভিন্ন রায় তুলে ধরে বলেন, “স্পিকার সম্পর্কে হাইকোর্টের রায় সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। আমি শঙ্কিত যে- আমরা ভবিষ্যতে মুক্ত মনে জাতীয় সংসদে কথা বলতে পারব কি না। বিচারপতিরা কি সকল প্রকার জবাবদিহিতার উর্ধ্বে? সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানানো কি সংসদের নেই? সৃষ্টি কখনও ¯্রষ্টার চেয়ে বড় হতে পারে না। উচ্চ আদালত সংবিধানের সৃষ্টি। আর সংসদ সার্বভৌম।” তিনি বলেন, “যেসব দেশের সংবিধানে বিচারপতিদের ইমপিচমেন্টের ক্ষমতা আছে, সেসব দেশে কখনই বিচারপতিরা এ ধরনের সাহস পান না।”
জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশের সংসদ নিয়ে প্রদত্ত ঐতিহাসিক রায়ের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, “হাইকোর্টের রায়টি অবৈধ, অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক।”
“গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে নস্যাতের নানা ষড়যন্ত্র চলছে” মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সংসদ সার্বভৌম, বিচার বিভাগ স্বাধীন। কিন্তু সার্বভৌম ও স্বাধীন শব্দ সমার্থক নয়। বিচারপতিদের মনে রাখতে হবে- সার্বভৌম বায়বীয় বিষয় নয়, এর শারীরিক প্রকাশ রয়েছে। সংসদ নিয়ে কথা বলার আগে তাদের জানতে হবে, এই সংসদ সংবিধান জন্ম দেয়, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার জন্ম দেয়। বিচারপতিরা কোন কিছু সংসদের ওপর চাপিয়ে দিতে পারেন না। সংবিধানের জন্মদাতাকে হেয় করার কোন চেষ্টা জাতি গ্রহণ করবে না।”
আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, “বিচার বিভাগ সংসদ সম্পর্কে কতটুকু কথা বলতে পারেন তা স্পষ্ট রয়েছে। এ রায়ে আমরা অনেক আহত হয়েছি। এরইমধ্যে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে। উচ্চতর আদালতে করা আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।”
এ বিষয়টি মাথায় রেখে কথা বলার জন্য সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আইন প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে স্পিকার আবদুল হামিদ বলেন, “আপিল সংসদ করেনি, করেছে সরকার পক্ষ। কারণ সংসদ সম্পূর্ণ সার্বভৌম। আইন মন্ত্রণালয়ের কোন কর্তৃত্ব সংসদের ওপর নেই। সংবিধান নিয়ে আলোচনা বিচারাধীন হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। এটা নিয়ে আলোচনা অবশ্যই হতে পারে।”
এ সময় সংসদ সদস্যদের আক্রমণাত্মক বক্তব্য না রাখার অনুরোধ জানান স্পিকার।
ছায়েদুল হক বলেন, “এখনই সতর্ক না হলে বাংলাদেশের অবস্থাও পাকিস্তানের মতো হবে। ইমপিচ করার ক্ষমতা সংসদে না আনা হলে বাংলাদেশেও একই ধরনের ঘটনা ঘটবে।”
ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেন, “অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছি। যত কথাই বলি সংবিধানই মূল, এর বাইরে কেউ যেতে পারব না। বিচারপতি ও সংসদ এমন কিছু করতে পারবে না যা সংবিধান পরিপন্থি। বিচার বিভাগের সঙ্গে সংসদের সংঘাত শুধু পত্রিকার রিপোর্টের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। তাই স্পর্শকাতর এমন বিষয়ে আলোচনা করা ঠিক হচ্ছে না। হাইকোর্টের প্রদত্ত বক্তব্য পর্যবেক্ষণ, কোন রায় নয়। একটি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে। এ দেশকে পাকিস্তান বানানোর স্বপ্ন দেখছে। দুই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। এ পাতা ফাঁদে যেন আমরা পা না দেই।”
ব্যারিস্টার তাপসের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে স্পিকার বলেন, “পত্রিকার রিপোর্টের ভিত্তিতে হাইকোর্টের অনেক পর্যবেক্ষণ এবং সিদ্ধান্ত পর্যন্ত দেওয়ার একাধিক নজির রয়েছে। আমার রুলিংকে সবাই মেনে নিয়েছিলেন। দেশবাসী, সরকার, বিরোধী দল, আইনজীবী সর্বস্তরে দেশবাসী সন্তুুষ্টই ছিলেন।”
তিনি বলেন, “রিটের নামে যা দেওয়া হয়েছে, তা পর্যবেক্ষণ নয়, আমার কাছে ৪৮ পৃষ্টার রায়ই এসেছে। যা রায়ের চেয়েও অনেক বড়। বিচারপতিদের রায়ে আমরা যেমন আলোকিত হই, তেমনি আমাদের আলোচনা নিয়েও বিচারপতিরা কিছুটা হলেও আলোকিত হতে পারেন।”
স্পিকার তার সিদ্ধান্তে বলেন, “ভেবেচিন্তে আমার সিদ্ধান্ত পরে সংসদকে জানাব। আমি আশা করবো, সবাই নিজ নিজ অধিকার, মান-ইজ্জত নিয়ে যাতে থাকতে পারেন সেভাবেই সবার চিন্তা করা উচিত। স্পিকার নয়, আমরা ৩৫০ সদস্যই জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত। জনগণই এই সংসদের মালিক। তাই চিন্তাভাবনা করেই আমি আমার সিদ্ধান্ত পরে জানাব।”
উল্লেখ্য, ২৯ মে স্পিকারের সংসদে দেওয়া একটি মন্তব্যকে নিয়ে গত ৫ জুন হাইকোর্টের বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন আহমদ মানিক তার পর্যবেক্ষণে কিছু মন্তব্য করেন। এ নিয়ে জাতীয় সংসদে তুমুল বিতর্কের পর গত ১৮ জুন একটি রুলিং দেন স্পিকার আবদুল হামিদ। এই রুলিংয়ের বিরুদ্ধে একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৭ আগস্ট হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ স্পিকারের প্রদত্ত রুলিংকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে রায় দেন।