সোনালী ব্যাংকে হলমার্কের অর্থ জালিয়াতি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, “আমরা বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেই। এর মধ্যে তিন বা চার হাজার কোটি নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। এটা কোনো বড় অংকের অর্থ নয়। এ নিয়ে হৈ চৈ করারও কিছু নেই। বরং সংবাদ মাধ্যম এটা নিয়ে অতিরিক্ত প্রচারণা করে দেশের ক্ষতি করছে। এমনভাব যেন দেশের ব্যাংকিং সেক্টর ধসে গেছে। এতে আমাদের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।”
মঙ্গলবার সকালে হোটেল রূপসী বাংলায় ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গোলটেবিলের আয়োজন করে আয়োজক ইউএসএআইডি, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), প্রগতি ও এমআরডিআই।
এদিন তিনি শেয়ারবাজার প্রসঙ্গে বলেন, “শেয়ারবাজারে যে দুর্নীতি হয়েছে, এজন্য দুদকে কেউ সাক্ষী দিচ্ছে না। সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছে না।”
বিশ্বব্যাংক সম্পর্কে তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রিটি সেকশন একটি জিহাদি বিভাগ। সেকশনটাকে সংশোধন করতে হবে।”
সংবাদ মাধ্যমের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “দেশের সংবাদ মাধ্যমেরও সংস্কারের (রিফর্ম) দরকার আছে।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, “অর্থনীতির জন্য কালো টাকা একটি মারাত্মক সমস্যা। তবে কালো টাকা থাকবে এটাই বাস্তবতা।”
তিনি বলেন, দুর্নীতি দূর করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খুবই ভালো একটি উপাদান। দুর্নীতি দমনে অর্থমন্ত্রী আজ থেকে ৫০ বছর আগের মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা থাকাকালে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, “ওই সময় কোনো একটি মহল্লা কিংবা গ্রামে একজন চোর কিংবা ডাকাতের বিরুদ্ধে জনসম্মুখে বিচার হতো। এ নিয়ে কারো কাছে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছিল না। তবে সবাই জানতো কে ডাকাত কিংবা চোর। এভাবে বিভিন্ন জনের সাক্ষ্য থেকে অভিযুক্ত অপরাধীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতো। আমি নিজেও এ ধরনের শাস্তি দিয়েছি। দুর্নীতি দমনে আমি এ ধরনের একটি পদ্ধতি চাই। শাস্তিস্বরুপ ওই অপরাধীকে প্রতি সপ্তাহে থানায় হাজিরা দিতো। সেই সঙ্গে মধ্যরাতে ওই ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে দেখা হতো তিনি বাড়িতে রয়েছেন নাকি চুরি করতে গিয়েছেন।”
তিনি বলেন, “জেলায় জেলায় সরকারের কথা সবাই ভালো বলে। কিন্তু বাস্তবে সমর্থন পাওয়া যায় না। যেমন সমর্থন পাওয়া যায় না শেয়ারবাজারের ঘটনা নিয়ে দুর্নীতি দমনের সাক্ষী পাওয়ার ক্ষেত্রে।” অনলাইন পেমেন্ট স্মার্ট কার্ড দুর্নীতি কমাতে সাহায্য করেছে বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।
গোলটেলিব আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। এতে শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। ড. অনন্য রায়হানের সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা।
বুধবার বিবৃতি
এদিকে, সোনালী ব্যাংকে হলমার্ক কেলেংকারির ঘটনায় বুধবার গণমাধ্যমে বিবৃতি দেবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
মঙ্গলবার দুপুরে একনেক বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “বিবৃতির খসড়া এরই মধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। আমি সইও করে দিয়েছি। আজ (মঙ্গলবার) কিংবা কাল (বুধবার) এটা দেওয়া হবে। আমার ব্যক্তিগত সহকারী এটা আপনাদের জানাবেন।”
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর একান্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আবুল হাসান বিবৃতিটি কাল দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।