৯ সেপ্টেম্বর এরশাদের বৈঠক ১০৫ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত জাপার

৯ সেপ্টেম্বর এরশাদের বৈঠক ১০৫ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত জাপার

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে লড়ার লক্ষ্যে প্রার্থী চূড়ান্ত করছে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলটির হাইকমান্ড এরই মধ্যে ১০৫ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।

দলীয় প্রধান এরশাদের বরাত দিয়ে এসব প্রার্থীকে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ডাকা হচ্ছে বলেও জানিয়ে ওই সূত্র।

সূত্র আরও বলছে, ওই দিন (৯ সেপ্টেম্বর) ১০৫ প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়নের গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে নির্বাচনের জন্য মাঠে নাম‍ানোর এবং তৃণমূল পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করতে নানামুখী তৎপরতা চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হবে।

দলের একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য এ খবরের সত্যতা স্বীকার করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানান, ১০৫ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রাথমিকভাবে আরও ৫০ আসনের প্রার্থী তালিকা করা হয়েছে।

হাইকমান্ডের হিসাবে, এসব প্রার্থীর মধ্যে ১২৫ জনের অবস্থা খুবই ভালো। মাঠ পর্যায়ে খোঁজখবর নিয়ে এসব প্রার্থীর জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন খোদ এরশাদও।

সোমবার কুমিল্লার বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা জাতীয় পার্টির এক যোগদান অনুষ্ঠানে দেওয়া এরশাদের বক্তব্যে জাপার একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়টি অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছে।

ওই অনুষ্ঠানে জাপা প্রধান বলেন, “এখনই নির্বাচন হলে ১২৫ আসনে বিজয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী জাতীয় পার্টির রয়েছে।”

একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৯ সেপ্টেম্বরের বৈঠকটি হবে রাজধানীর ইমানুয়েল সেন্টারে। তবে ওই বৈঠকে সংবাদমাধ্যকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। সেদিন মূলত মনোনয়নের জন্য চূড়ান্ত করা প্রার্থীদের সঙ্গে সংরক্ষিত সাংগঠনিক বৈঠক করবেন এরশাদ।

তবে জাপা দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য এবিএম তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, দলীয় মনোনয়নের জন্য নির্বাচিতদের সেলফোনে ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসার কথা জানানো হয়েছে।

তিনি আরও জানান, এসব প্রার্থীকে তৃণমূল পর্যায়ে ৩ মাসের মধ্যে দল সংগঠিত করার টার্গেট দেওয়া হবে। তারপর ওইসব এলাকায় পাবলিক মিটিং করে তাদের অবস্থানের পরীক্ষা দিতে বলা হবে। এসব পরীক্ষায় পাস করেই শেষ তক লাঙ্গল প্রতীক নিতে হবে তাদের।

দলীয় সূত্রমতে, ১০৫ জনের এ তালিকার বাইরে আরও অন্তত অর্ধশত আসনের সম্ভাব্য তালিকায় প্রতি আসনে একাধিক প্রার্থীর নাম রাখা হয়েছে। এসব প্রার্থীকেও চলতি মাসেই ঢাকায় ডাকা হবে। এখনই মাঠে গিয়ে দলকে সংগঠিত করার কথা বলা হবে তাদেরকেও। তৃণমূল পর্যায়ে যাদের অবস্থান ভালো পাওয়া যাবে ৩ মাসের মধ্যেই তাদের গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে দেওয়া হবে।

এ ছাড়া অবশিষ্ট আসনগুলোতেও সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা করা হয়েছে জেলা জাতীয় পার্টির নেতাদের মাধ্যমে। বিজয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ এসব আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের বাইরেও শক্তিশালী প্রার্থীর সন্ধান করা হচ্ছে কেন্দ্র থেকে।

তবে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) একটি ধারার কারণে জাপার এ অভিপ্রায় অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ওই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী দল পরিবর্তন করার ৩ বছর সময় অতিবাহিত না হলে প্রার্থী হতে পারবেন না। এ প্রতিবন্ধকতা কাটাতে দলীয় সংসদ সদস্য মজিবুল হক চুন্নুর মাধ্যমে আরপিও’র ওই ধারা সংশোধনেরও প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে জাতীয় পার্টি।

সব মিলিয়ে বেশ জোরেসোরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এরশাদের দল।

এরশাদের রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভরায় বাংলানিউজকে জানান, জাতীয় পার্টি ৩শ’ আসনেই প্রার্থীর তালিকা তৈরি করেছে। এদেরকে ৩ টি গ্রুপে ভাগ করে ঢাকায় ডাকা হবে। প্রথম পর্যায়ে থাকছে ১০৫ জন। পরবর্তী সময়ে অন্যদের ডাকা হবে।

জাতীয় পার্টি মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলানিউজকে জানান, দলকে তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠিত করার জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতাদের ডাকা হচ্ছে ৯ সেপ্টেম্বর। সবাইকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে ডাকা হবে।

তবে ৯ সেপ্টেম্বরের বৈঠকে ডেকে নেওয়া নেতাদের আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি জাপা মহাসচিব।

জাতীয় পার্টি মনে করছে, আগামী নির্বাচনে এককভাবে নির্বাচন করলে জাতীয় পার্টি কমপক্ষে ৭০ থেকে ৮০ টি আসন পাবে। আর আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কোনভাবেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হওয়‍ায় উভয় দলই সরকার গঠনে সমর্থনের জন্য এরশাদের কাছে আসবে।

এক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের নির্বাচনে ঘটা এমন পরিস্থিতির কথা স্মরণ করে আশাবাদী হয়ে উঠছেন জাপা নেতারা।

কংগ্রেস ও বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় ছোট দলের প্রধান এইচ ডি দেব গৌড়াকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসিয়েছিলো কংগ্রেস। সে রকম ঘটনা এবার বাংলাদেশে ঘটবে বলেও মনে করছেন জাপার নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে কিন্তু দারুণ আত্মবিশ্বাস ঝরছে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের কণ্ঠেও।

এ বিষয়ে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, “আগামীতে এরশাদকে ছাড়া কোন দল ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আগামী নির্বাচনে এরশাদ হচ্ছেন তুরুপের তাস।”

এসব কারণে জাতীয় পার্টি ভোটের পরেই জোট করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে। ২ দফায় আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে হিস্যা আদায়ে ব্যর্থ এরশাদ ভোটের পরে জোট করে এর  সুফল সুদে আসলে তুলে নিতে চান বলেও আভাস মিলছে দলীয় সূত্রে।

অন্যান্য বাংলাদেশ রাজনীতি শীর্ষ খবর