আপিলের সিদ্ধান্ত আমলে না নিয়ে প্রথম দিনই উত্তপ্ত হবে সংসদ

আপিলের সিদ্ধান্ত আমলে না নিয়ে প্রথম দিনই উত্তপ্ত হবে সংসদ

‘স্পিকারের রুলিং অকার্যকর ও আইনগত ভিত্তিহীন’ হাইকোর্টের দেওয়া এ রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিলের সিদ্ধান্ত নিলেও আগামী ০৪ সেপ্টেম্বর সংসদে মহাজোট এমপিরা বিষয়টি আলোচনায় তুলবেন।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের ১৪ তম অধিবেশনের শুরুর দিনই এমপিরা সংসদে এ নিয়ে আলোচনা করবেন।

জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা তুলবেন তারা। আলোচনায় তারা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাবও রাখতে পারেন বলে জানা গেছে। এছাড়া সংবিধানের ৭৮ (১) অনুচ্ছেদ নিয়ে বিস্তর আলোচনা করবেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।

এদিকে, হাইকোর্টের রায় নিয়ে সরকার যে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মহাজোট এমপিরা তা আমলে আনবেন না বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

রোববার স্পিকারের সঙ্গে প্রায় ২ ঘণ্টা বৈঠক করে মহাজোটের কয়েকজন এমপি একথা জানিয়েছেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ফজলে রাব্বি মিয়া, শাহরিয়ার আলম, এসকে আবু বাকের, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল ও জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু।

তবে স্পিকার তাদের এ ধরনের উদ্যোগে সমর্থন দেননি বলে জানা গেছে।

ওই বৈঠকে এমপিরা বলেছেন, সংসদের সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে তারা কোনো ছাড় দেবেন না।

বৈঠক শেষে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বাংলানিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন। শেখ সেলিম বলেন, “সরকার আপিল করতে পারে। কিন্তু সংসদ এ বিষয়ে আলোচনা করবে।”

জানা গেছে, বৈঠকে বিষয়টি সংসদের ওপর ছেড়ে দেয়ার জন্য স্পিকারকে অনুরোধ জানান এমপিরা। তারা বলেন, বিচার বিভাগ স্বাধীন। তবে সংসদের ঊর্দ্ধে নন। জাতীয় সংসদ সবার উপরে। সংসদকে খাটো করে দেখা হলে এখানেও পাকিস্তানের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। বিচার বিভাগ অতি উৎসাহী হয়েই এ কাজটি করেছে। যা থেকে তৃতীয় পক্ষ ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করবে। এতে গণতন্ত্রই আবার বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।

এক প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান বৈঠকে বলেন, সরকার আপিল করার কথা বলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা করছে। এটা কোনও অবস্থাতেই করতে দেওয়া যাবে না।

আরেকজন সিনিয়র সদস্য বলেন, বিচার বিভাগ ও সংসদ আজ মুখোমুখি, যা দুঃখজনক। এ জন্য বিচারবিভাগই দায়ী। অশুভ একটি উদ্দেশ্য থেকে সংসদ এবং বিচার বিভাগকে মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষেই পয়েন্ট অব অর্ডারে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।

বৈঠক শেষে তোফায়েল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, “সংসদের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”

এদিকে স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট এক প্রশ্নের জবাবে বাংলানিউজকে বলেন, “এমপিরা চাইলে আলোচনা করতে পারেন।”

প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন এবং এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতির প্রতি আহবান জানিয়ে দেওয়া স্পিকারের রুলিংকে অকার্যকর ও আইনগত ভিত্তিহীন বলে গত ২৭ আগস্ট (সোমবার) রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এদিকে, আগামী মঙ্গলবার অধিবেশনের প্রথম দিনেই বিষয়টি আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্পিকারের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া মহাজোটের কয়েকজন এমপি। প্রস্তুতিমূলক কাজের অংশ হিসেবে তারা ঢাকা ল’ রিপোর্ট (ডিএলআর) ঘাটাঘাটি করছেন। এরইমধ্যে তারা অতীতের একাধিক রায় খুঁজে পেয়েছেন, যা স্পিকারের রুলিং সম্পর্কিত রায়ের পরিপন্থী। উদাহরণ দেওয়ার জন্য তারা ভারত এবং পাকিস্তানের উচ্চ আদালতের রায়ের নজিরও খুঁজে চলেছেন।

স্পিকারের রুলিংয়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনের নিষ্পত্তি করে গত ২৪ জুলাই রায় দেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেন। এরপর ২৭ আগস্ট হাইকোর্ট পূর্ণাঙ্গ অভিমত ও নির্দেশনাসহ রায় প্রকাশ করে।

এরপর ৩০ আগস্ট আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ স্পিকার আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, সরকার হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ মে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সড়ক ভবন সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বক্তব্য দেন এমপিরা। এ নিয়ে ৫ জুন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী কিছু মন্তব্য করেন। একইদিন সংসদে কয়েকজন সদস্য এর তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে ওই বিচারপতিকে অপসারণের দাবি জানান। এর ১৩ দিনের মাথায় গত ১৮ জুন স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট সংসদে একটি রুলিং দেন।

রুলিংয়ে স্পিকার বলেন, ‘‘আদালতের এ ধরনের আচরণে কী করণীয় থাকতে পারে, মাননীয় প্রধান বিচারপতি সে বিষয়টি ভেবে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, তাতে আমাদের সমর্থন থাকবে। এর ফলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা হয়তো সম্ভব হবে।”

ওই রুলিংকে চ্যালেঞ্জ করে আইনজীবী একেএম শফিউদ্দিন রিট আবেদনটি দায়ের করেন।

উল্লেখ্য, সংবিধানের ৭৮(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংসদের কার্যধারার বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। ৭৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংসদে বা সংসদের কোনো কমিটিতে কিছু বলা বা ভোটদানের জন্য কোনো সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে কার্যধারা গ্রহণ করা যাবে না।

বাংলাদেশ