গ্রামীণব্যাংক ও নির্বাচন প্রশ্নে দাতাদের উদ্বেগ অমূলক ও ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
তিনি বলেন, “গ্রামীণব্যাংক ও নির্বাচন প্রশ্নে দাতাদের উদ্বেগ অমূলক ও ভিত্তিহীন। নির্বাচন এবং গ্রামীণব্যাংক নিয়ে দাতাদের বিভিন্ন চাপ প্রশমনের চেষ্টা করা হচ্ছে।”
দীপু বলেন, “তাদের কাছে ভুল তথ্য গেছে। আগামী সংসদ নির্বাচন কীভাবে হবে তা আমাদের সংবিধানই বলে দিয়েছে।”
রোববার বাংলাদেশে সফররত সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর মাসাগোজ জুলকিফলির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ডা. দীপু মনি বলেন, “সিঙ্গাপুরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়, বিশেষ করে বাণিজ্য, শিক্ষা, পর্যটন, বিনিয়োগ এবং ছাত্রদের ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
দেশের বেশ কয়েকজন কূটনীতিক সরকারিদলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সাক্ষাত করে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু সমাধানের চেষ্টা করছেন। এটি সরকারের প্রতি দাতাগোষ্ঠীর কোনো ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “গত সাড়ে তিন বছরে ৫ হাজারের বেশি নির্বাচন হয়েছে। একটি স্বাধীন শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন হয়েছে। এখন নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ থাকার কথা নয়। কোনো রাজনৈতিক দলের দলীয় বিবেচনায় উদ্বেগ থাকলেও হতে পারে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে অনেকে অনেক সময় অনেকভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আমাদের দেশের নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হওয়া জরুরি।”
তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার যখন সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব গ্রহণ করেছে, তখন সংবিধানের বিধি সমুন্নত রাখতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এদেশের মানুষের কল্যাণে যা কিছু করা সম্ভব সরকার তা করে যাবে। বাংলাদেশের নিয়ানুযায়ীই নির্বাচন হবে। বাইরের কোনো প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করার কোনো সুযোগ দেখি না।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বর্তমান সরকারই গত সাড়ে তিন বছরের নির্বাচনগুলোকে শক্তিশালী, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা দিয়ে গেছে। এ বিষয়ে উদ্বেগের কোনো জায়গা নেই। এ বিষয়ে উদ্বেগ অমূলক।”
গ্রামীণব্যাংকের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং সিনেট সদস্যরা সরকারকে চিঠি দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “গ্রামীণব্যাংকের ক্ষেত্রে সরকারি আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। ব্যাংকটি সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে উদ্বেগের কারণ নেই। সরকার দায়বদ্ধতা থেকে যা করণীয় করছে। ভবিষ্যতেও করে যাবে।”
পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন না করার পিছনে কূটনৈতিক ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন কেউ কেউ। এ ব্যাপারে মন্ত্রীর মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কাজ করে না। এটি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিষয়। এক্ষেত্রে কূটনৈতিক ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই। কেউ কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তার প্রমাণ চাওয়ার অধিকার আছে। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগ দেখবে।”
ভারতের বরাক নদীতে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ প্রশ্নে যৌথ নদী কমিশনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বৈঠকে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নথি বাংলাদেশকে দিয়েছে ভারত। এ ব্যাপারে দ্বিতীয় বৈঠকের কার্যক্রম চলছে। এ বৈঠক শেষে গবেষকরা তথ্য দিলে সরকার টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারতকে তার মতামত জানাবে।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “গবেষকরা তাদের মতামত দিলেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”
সিঙ্গাপুরের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর: বর্তমানে ছয় দিনের সফরে ঢাকায় অবস্থান করছেন সিঙ্গাপুরের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাসাগোজ জুলকিফলি। তার সঙ্গে সাক্ষাত সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তার সঙ্গে অত্যন্ত ভালো আলাপ হয়েছে। সিঙ্গাপুরে প্রায় দেড় লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী আছেন। তারা বিভিন্ন সেক্টরে খুব ভালো কাজ করছেন। সেখানে প্রতি বছর অনেক শ্রমিক যাচ্ছে। তাদের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশে বিনিয়োগ আছে। তারা আরও কোন এরিয়ায় বিনিয়োগ করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাণিজ্য বাড়ানো, শিক্ষার্থী ভিসার ব্যাপারে বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, চিকিৎসা ভিসার ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের ভিসা প্রাপ্তি সুবিধা বাড়ানোসহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “এ সফরে সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও সাক্ষাত করবেন। তাদের সঙ্গে বিভিন্নু বিষয় নিয়ে আলাপ হবে। তাদের এ আলাপে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে অনেক সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে বলে আশা করা যায়।”