শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে পুলিশ ভেরিফিকেশন (যাচাইকরণ) ছাড়া মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দেওয়ার প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করেছে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমআরপি কর্তৃপক্ষের দেওয়ার প্রস্তাবের সঙ্গে ‘প্রচণ্ড দ্বিমত’ পোষণ করে চিঠি পাঠিয়েছে এসবি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভেরিফিকেশনের নামে পুলিশি হয়রানি বিশেষ করে ঘুষ বাণিজ্য বন্ধে প্রস্তাবটি দেওয়া হয়।
এদিকে, এমআরপি কর্তৃপক্ষের দেওয়া প্রস্তাবটি সরকারের নীতি পরিপন্থী বলে উল্লেখ করেছে এসবি। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি প্রাথমিকভাবে এমআরপি কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবের সঙ্গে প্রায় অভিন্ন মত দিয়েছে। সংসদীয় কমিটির আগামী বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসে এমআরপি কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই পাসপোর্ট দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। পরে এ বিষয়ে মতামত চেয়ে এসবির কাছে চিঠি পাঠান স্বরাষ্ট্র সচিব। গত ১৩ আগস্ট এসবি এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে জবাব দেয়। ওই চিঠিতে এসবি বলেছে, পাসপোর্ট অফিস সময়ক্ষেপণ না করে প্রার্থীকে পাসপোর্ট দিতে চাচ্ছে। এসবিও এক্ষেত্রে তৎপর। তবে পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া পাসপোর্ট দিলে তা হবে দেশে প্রচলিত আইন ও ব্যবস্থার পরিপন্থী। একই সঙ্গে এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার এবং সফল রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের টিকে থাকার প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত।
জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে পাসপোর্ট দিলে শিশু পাচার বেড়ে যাবে বলেও এসবি মন্তব্য করেছে। স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে তারা বলছে, জাতীয় পরিচয়পত্র শুধুমাত্র ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য প্রযোজ্য। এখানে শিশুদের কোনো তথ্য নেই। এক্ষেত্রে বাবা-মায়ের পরিচয়পত্র দেখে পাসপোর্ট দেওয়া শুরু হলে শিশু পাচার বেড়ে যাবে। তাছাড়া ভারত, পাকিস্তান, নেপাল শ্রীলঙ্কায় পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া পাসপোর্ট দেওয়া হয় না।
অন্যদিকে, এমআরপি কর্তৃপক্ষ বলছে, পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে পাসপোর্ট প্রার্থীরা অযথা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দ্রুত পাসপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে এটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হয় না।
মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) প্রকল্পের অতিরিক্ত পরিচালক আব্দুল লতিফ তালুকদার এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, “জাতীয় পরিচয়পত্রের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে। এরপর নতুন করে ভেরিফিকেশনের দরকার নেই।”
তিনি বলেন, “প্রত্যেক নাগরিকের পাসপোর্ট পাওয়ার অধিকার রয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে পাসপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করা ঠিক হবে না। কারো যদি বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা থাকে তাকে ইমিগ্রেশন বিভাগ দেখবে।”
আব্দুল লতিফ তালুকদার আরো বলেন, “পাসপোর্টের ভেরিফিকেশনের নামে অনেক ধরনের হয়রানি হয়। আমরা চাই, হয়রানি ছাড়া পাসপোর্ট দিতে। প্রতিবেদন দিতে পুলিশ এক বছর সময় লাগিয়েছে বলেও আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে।”
তিনি জানান, সাধারণ ক্ষেত্রে এক মাসের মধ্যে পুলিশ প্রতিবেদন পাওয়া না গেলে পাসপোর্ট দিয়ে দেওয়া হবে। আর জরুরি ক্ষেত্রে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন না দিলে পাসপোর্ট দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, প্রচলিত নিয়মে ভেরিফিকেশন প্রতিবেদন দেওয়ার সময় নির্ধারণ করা নেই।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো চিঠিতে এসবি দাবি করেছে, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে জরুরি ক্ষেত্রে রিপোর্ট দিতে গড়ে ৮ দশমিক ৫৯ দিন ও সাধারণ পাসপোর্টে ৯ দশমিক ৫৯ দিন সময় নেয় তারা।
পাসপোর্ট অফিসের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে ঘুষ বাণিজ্য বন্ধে এমআরপি ওই প্রস্তাব পাঠিয়েছে। প্রস্তাব পাঠানোর আগে এ বিষয়ে বিভাগীয় একাধিক বৈঠক হয়।
এদিকে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির আগামী বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। কমিটির সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, “পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে পাসপোর্ট দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে প্রাথমিকভাবে কমিটি আলোচনা করেছে। এমআরপি কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব সংসদীয় কমিটি প্রাথমিকভাবে সমর্থন দিয়েছে। কমিটির আগামী বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।”