আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের সন্ধানে গোয়েন্দারা

আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের সন্ধানে গোয়েন্দারা

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেটওয়ার্ক আছে কী না তা খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। ডিবি পুলিশ, র‌্যাব ও স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। ’

একই সঙ্গে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার বিশেষ নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে দেশের প্রত্যেক জেলার এসপিদেরও।

বিশেষ করে কক্সবাজার ও বান্দরবন এলাকায় রোহিঙ্গাদের মায়ানমারের আরাকান রাজ্যটি স্বতন্ত্র ইসলামিক রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করতে ওই এলাকায় জঙ্গি সংগঠনগুলো বিভিন্ন ছদ্মনামে সংগঠিত হচ্ছে কী না সেই বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে তৎপরতা চালাচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

সম্প্রতি রাজধানী পাকিস্থান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই মোহাম্মদের বাংলাদেশের প্রধান গ্রেফতারের পর থেকে এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ আগস্ট রাজধানীর ফকিরারপুল এলাকাতে গ্রেফতার হয় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনের বাংলাদেশের প্রধান মাওলানা ইউসুফ।

ওই দিন সংবাদ সম্মেলনে আটককৃত ইউসুফকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিএমপির মুখপাত্র ও ডিবি পুলিশের দক্ষিণের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মনিরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, কক্সবাজার বান্দরবন এলাকায় অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদেরকে টার্গেট করে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই মোহাম্মদ বাংলাদেশে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে তাদের মদদসহ আর্থিক সহযোগিতা করে আসছিল মাওলানা ইউনুস।

মূলত তিনিই বাংলাদেশের অন্যতম নেতা হিসেবে এদেশে জয়েশ-ই মোহাম্মদের কার্যক্রম বিস্তার করার চেষ্টা করছে। তিনি পাকিস্থানে অবস্থানরত বাংলাদেশের এক সময়ের জামায়াত নেতা মাওলানা সাবেরের একান্ত অনুসারী। মাওলানা সবুর তাকে সংগঠন বিস্তারে আর্থিক সহায়তা করে থাকে।

ডিসি মনিরুল ইসলাম দাবি করে বলেন, বাংলাদেশের কিছু অংশ ও মায়ানমারের আরাকান রাজ্য নিয়ে আলাদা ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের লক্ষে রোহিঙ্গাদের উদ্বুদ্ধ করে তাদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে জয়েশ-ই মোহাম্মদ।

ডিএমপি পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন জয়েশ-ই মোহাম্মদের প্রথম কোন নেতা ধরা পড়ার পর সরকারের উচ্চ মহল থেকে এ বিষয়ে খোঁজ খবর জন্য নির্দেশ আসে। আর কোনও বিদেশি জঙ্গি সংগঠন এদেশে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে কিনা এবং দেশিয় জঙ্গি সংগঠনের সাথে হাত মিলিয়ে বিদেশি জঙ্গিদের সহায়তায় আল কায়দা বাংলাদেশকে ব্যবহার করে এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করছে কী না সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার জন্য নির্দেশ আসে। এর পরপরই গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তৎপরতা শুরু করে।

ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ, র‌্যাবের জঙ্গি দমন সংক্রান্ত বিশেষ সেল এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। এছাড়াও বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি বিশেষ করে পাকিস্থান ও ভারতের ছাত্রদের উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

এছাড়াও ঢাকার বাইরে দেশের ৬৪ জেলার এসপিদের এ ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে গ্রেফতারের পর ৫ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর গুরুত্বপূর্ণ কিছূ তথ্য পায় ডিবি পুলিশ। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্যরা আš দেশেীয় জঙ্গি সংগঠনের খোঁজে নেমেছেন।

ডিবি ডিসি মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মাওলানা ইউসুফকে গ্রেফতারের তাকে রিমাণ্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে যে সকল তথ্য পাওয়া গেছে সে ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। তবে কি ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে সে ব্যাপারে ডিবি ডিসি কিছু জানাতে অস্বীকার করেন।

এদিকে এর আগেও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিভিন্ন সদস্যরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ব্যবহার করেছে। এমনকি বাংলাদেশে পড়াশোনা করে নিজ দেশে হামলার পরিকল্পনা করে ভারতের  কাশ্মিরের নাগরিক ওয়াসিম আহম্মেদ। মুম্বাইয়ের হাইকোর্টে বোমা হামলার পরিকল্পনায় অংশ নেওয়ার অভিযোগে তাকে আটক করে মুম্বাই পুলিশ।
সে সিলেটের রাগিব রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিল। এরপর সেখানে অধ্যায়নরত কাশ্মিরের ৫ ছাত্র তোসাদ্দেক রশীদ, আমীর আমিন রেশমি, মোহাম্মদ দানিস বাট ও তৌসিক আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের ফেরত দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাব গত কয়েক বছরে ভারতীয় সন্ত্রাসী আব্দুর রউফ, দাউদ মার্চেন্ট, জাহিদ শেখ, লস্কর-ই তৈয়বা নেতা মুফতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ, মুফতি মাওলানা মনসুর আলী ওরফে হাবিবুল্লাহ, ভারতের আসিফ রেজা কমান্ডো ফোর্স (এআরসিএফ) এর কমান্ডার এমদাদুল্লাহ ওরফে মাহবুব, লস্কর-ই তৈয়বা সদস্য আবু সুফিয়ানসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। আবু সুফিয়ান গাজীপুর ইসলামিক ইউনিভার্সিটির ছাত্র।

ঢাকায় মার্কিন ও ভারতীয় হাইকমিশনে হামলা পরিকল্পনার অভিযোগে ২০০৯ সালের শেষ দিকে তাকে গ্রেপ্তার করেছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সেই সময় তার কাছ  থেকে বোমা তৈরি সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশে পড়াশোনার নামেই এই পাকিস্তানি দীর্ঘদিন জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। এছাড়া র‌্যাব পুলিশের হাতে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার নেতাদের আটকের নজির রয়েছে। এই বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের নেতা অনুপ চেটিয়া বর্তমানে রাজশাহী কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

বাংলাদেশ