জাহাজ নির্মাণ শিল্পের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে বসুন্ধরা

জাহাজ নির্মাণ শিল্পের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে বসুন্ধরা

গাজীপুরের বোর্ডবাজারে অবস্থিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে দিনব্যাপি জাহাজ নির্মাণ শিল্পের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে বসুন্ধরা স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (বিএসইএল) অংশ নিয়েছে।

এছাড়া দিনব্যাপি এ প্রদর্শনীতে অংশ নেয় বাংলাদেশের আনন্দ শিপইয়ার্ড লিমিটেড, শিপস অ্যান্ড নেভাল আর্কিটেক্টস লিমিটেড, হাইস্পিড লিমিটেড, প্রিস্টিন মেশিনারি, মেটাসেন্টারসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি।

বিদেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইরানের ইসিএস গ্লোবালসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি কোম্পানিও অংশ নেয়। প্রদর্শনীতে স্টলের সংখ্যা ছিল সর্বমোট ১৯টি।

শুক্রবার সকালে এই প্রদর্শনী শুরু হয়ে সন্ধ্যায় শেষ হয়। ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর নৌ-বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন কোম্পানি এতে অংশ নেয়। আইইউটির শিক্ষার্থীরাও এই প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। আয়োজনের অংশ হিসেবে শনিবার বিভিন্ন দেশ থেকে আগত নৌ- বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের বিভিন্ন শিপইয়ার্ড পরিদর্শন করবেন।

বসুন্ধরা স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের (বিএসইএল) হেড অব ডিভিশন ক্যাপ্টেন এস এম শাহ আলম বাংলানিউজকে বলেন, “বসুন্ধরার ব্রান্ডের প্রতি মানুষের অগাধ আস্থা তৈরি হয়েছে। আমাদের স্টলে মালয়েশিয়ার হাইকমিশনারসহ অনেকেই এসেছেন। তারা বসুন্ধরার তৈরি জাহাজের বিভিন্ন কারিগরি দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং আগ্রহ প্রকাশ করেন। ঢাকার কেরানীগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে বসুন্ধরার শিপইয়ার্ডে বিশ্বমানের জাহাজ তৈরি হচ্ছে। প্রায় ৩০ একর জমিতে এই জাহাজ কারখানাটি গড়ে উঠেছে। আগামীতে এর পরিধি আরও বাড়বে।”

তিনি বলেন, “অনেক প্রতিষ্ঠান অনুরোধ করেছে যে আমরা যেন শুধু বসুন্ধরার জন্য জাহাজ না বানাই, সবার জন্য যেন বানাই । আমাদের তৈরি জাহাজ কিনতে তারা বারবার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা বলেছি, বসুন্ধরা নিজেদের প্রয়োজনীয় ৫০টি জাহাজ তৈরি সম্পন্ন হবার পর আমরা খুব শিগগিরই জাহাজ রপ্তানি করবো এবং বিক্রি করবো। আমাদের মেলায় আসার উদ্দেশ্য পরস্পরের মধ্যে জানাশোনা। আমাদের অংশগ্রহণ ব্যাপকভাবে সফল হয়েছে।”

শুক্রবার সকালে আইইউটি ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার নরলিন বিনতে ওসমান প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। এরপর ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর নৌ- শিল্পে উন্নয়ণের সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে বিভিন্ন দেশের নৌ-বিষেশজ্ঞরা আলোচনা করেন। বাংলাদেশে সহজলভ্য শ্রম ও নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় জাহাজ নির্মাণ শিল্পে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে বলে বক্তারা অভিমত প্রকাশ করেন। সেইসাথে এদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প ক্রমান্বয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে তারা জানান।

সেমিনারে বক্তব্য রাখেন অর্গানাইজেশন অব দ্য ইসলামিক শিপওনারস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ড. আব্দুল লতিফ এ সুলতান, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম ইমতিয়াজ হোসাইন, প্রদর্শনী আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান ড. আব্দুল্লাহেল বারী, আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. একেএম সদরুল ইসলাম প্রমুখ।

সেমিনারে মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার নরলিন বিনতে ওসমান বলেন, “মুসলমানদের নৌ-সেক্টরে গৌরবজনক অধ্যায় আছে। আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্যে এগিয়ে যেতে হলে নৌ-শিল্পে উন্নতির কোনো বিকল্প নেই। প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে হবে আর জনশক্তিকে ব্যবহার করতে হবে। নৌ-শিল্প একটি শ্রমঘন শিল্প হওয়ায় এই সেক্টরে ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।”

তিনি বলেন, “আশার কথা যে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানের জাহাজ তৈরি করছে। এখানে শ্রম সস্তা হওয়ায় এই শিল্প আরো বিস্তৃত হতে পারে।”

প্রদর্শনীর আয়োজক অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি। প্রদর্শনীর সহ-আয়োজক- অ্যাসোসিয়েশন অব এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশ, অ্যাসোসিয়েশন অব নেভাল আর্কিটেক্ট অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারস বাংলাদেশ এবং জাহাজের আন্তর্জাতিক সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইনস্টিটিউশন অব নেভাল আর্কিটেক্ট (রিনা) বাংলাদেশ ব্রাঞ্চ।

অর্থ বাণিজ্য