সোনালী ব্যাংক ইস্যুতে অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টানাপোড়েন

সোনালী ব্যাংক ইস্যুতে অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টানাপোড়েন

সোনালী ব্যাংক থেকে হলমার্কের অর্থ জালিয়াতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের বক্তব্য থেকে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে।

সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল (সাবেক শেরাটন)  শাখার মাধ্যমে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ৩১ জন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করে এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ফৌজদারি আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলে।

এছাড়া ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার যুক্তি দেখিয়ে তা পুনর্গঠন করতে অর্থমন্ত্রীকে সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গভর্নর ড. আতিউর রহমান এ সুপারিশ করে একটি চিঠি লেখেন অর্থমন্ত্রী বরাবর। ব্যাংক কোম্পানি আইন ৪৬ ধারা মোতাবেক, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থমন্ত্রীকে এই চিঠি দেয়।

অথচ গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন এখতিয়ার নেই।” তিনি এই ইস্যুতে “বাংলাদেশ ব্যাংকও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ“ বলে মন্তব্য করেন।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও বাংলাদেশ কৃষিব্যাংকের চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বুধবার টেলিফোনে বাংলানিউজকে বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ীই এ সুপারিশ করেছে। এটি তারা করতে পারে। সুতরাং অর্থমন্ত্রী বললেই হবে না। অর্থমন্ত্রী আইন করেন না। আইন করে সংসদ। সুতরাং অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য সঠিক নয়।”

সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার মাধ্যমে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং গুলশান ও আগারগাঁও শাখায় সংঘটিত গুরুতর অনিয়ম ধরা পড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে এর পর্ষদ পুনর্গঠনের পরামর্শ দেয়। একই সঙ্গে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে গত রোববার নির্দেশ দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, বৃহস্পতিবারের (৩০ আগস্ট) মধ্যে অর্থ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ৩১ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংককে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে।

ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুভাষ সিংহ রায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সাইমুম সরওয়ার কামাল ও মহিলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক জান্নাত আরা হেনরি রয়েছেন।

পর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলাম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত।

জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীকে সুপারিশ করার পর সক্রিয় হয়ে উঠেছেন এর কয়েকজন সদস্য। গত সোমবার কাজী বাহারুল ইসলাম অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে ব্যাংকিং বিভাগের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারিও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, সোনালী ব্যাংক ইস্যুতে অর্থমন্ত্রীকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। আর এর পেছনে রয়েছেন একজন সচিব। আর এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে খোদ অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে।

সূত্র জানিয়েছে, সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠনের ওই চিঠিতে গর্ভনর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, “সোনালী ব্যাংকে সংঘটিত অনিয়ম গুরুতর। ব্যাংকের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার অনেক স্তর থাকার পরও বিষয়টি কারও নজরে না আসাটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। এর ফলে প্রতীয়মান হয়, সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্মতিতে অথবা যোগসাজশে অর্থ জালিয়াতি করা হয়েছে। তাই পর্ষদ পুনর্গঠন করতে আপনাকে (অর্থমন্ত্রী) অনুরোধ করছি।”

উল্লেখ্য, সোনালী ব্যাংকের অসাধু পর্ষদের যোগসাজশে রূপসী বাংলা হোটেল শাখায় জালিয়াতির মাধ্যমে হলমার্ক একাই আড়াই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। আর এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে হলমার্কেরই এক  সহযোগী প্রতিষ্ঠান।

অর্থ বাণিজ্য