গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণার অন্ত নেই ডাচ-বাংলা ব্যাংকের (ডিবিবিএল)। অত্যাধুনিক ব্যাংকিং সেবার নামে প্রতারণার সুচারু ফাঁদ পেতে রেখেছে ডাচ-বাংলা।
বাংলানিউজের অনুসন্ধানে একে একে রেবিয়ে আসছে ব্যাংকটির প্রতারণার তথ্য। গ্রাহকদের অভিযোগ, সেবার মান বাড়ানো ও সামাজিক দায়বদ্ধতার চেয়ে মুনাফা অর্জনই এর একমাত্র উদ্দেশ্য।
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের অনৈতিক ব্যাংকিং নিয়ে গত জুন মাস থেকে ধারাবাহিকভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে থাকে বাংলানিউজ। ১৭ জুন প্রথম প্রকাশিত হয় ‘গ্রাহকদের অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে ডাচ বাংলা’ শীর্ষক প্রথম অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। প্রকাশের পর এর ২৩ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহক ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এরপর আরো বেশ কয়েকটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
- গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন ডাচ-বাংলার বিরুদ্ধে
- গ্রাহকের অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা নিচ্ছে ডাচ-বাংলা!
- বাংলানিউজের অব্যাহত ক্যাম্পেইন
ডাচ-বাংলা ব্যাংক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে বাধ্য হলো
তথ্য মতে, সারা দেশে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শাখার সংখ্যা ১২৩টি। বিপুলসংখ্যক গ্রাহক এখানে অ্যাকাউন্ট (হিসাব) খুলেছেন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবা পাবেন এই আশা করে এই ব্যাংকে। সহজে তার লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবেন। কিন্তু এই সেবার মাধ্যমে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়টি অনেকটা অস্পষ্ট থাকছে গ্রাহকদের কাছে। অনেক ক্ষেত্রে অন্যান্য ব্যাংকের থেকে বেশি ফি নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, বার্ষিক চার্জ থেকে শুরু করে, এটিএম বুথে লেনদেন, আন্তঃশহর লেনদেন, অনলাইন ব্যাংকিংসহ সব ধরনের সেবার ক্ষেত্রে দেশীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চেয়ে চার্জ বেশি কেটে নেয় ডাচ বাংলা-ব্যাংক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গ্রাহক বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করেন, এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ১০ টাকা পাঠাতেও ২৩ টাকা চার্জ দিতে হয়। অথচ এজন্য রিসিপ্ট পর্যন্ত দেয় না কর্তৃপক্ষ। অনলাইনে লেনদেন করলেই এ অর্থ কেটে নেয় ব্যাংকটি।
অনুসন্ধানে প্রথম সারির কয়েকটি ব্যাংকের সার্ভিস চার্জ পর্যালোচনা করে এমনই তথ্য মিলেছে। গ্রাহকরা অনলাইন সেবা নিতে চান, যাতে করে এক শাখায় তার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিয়ে অন্য শাখা থেকে তুলতে পারেন। কিন্তু ডাচ-বাংলার গ্রাহকদের এই সেবা নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত ফি দিতে হচ্ছে। যা অন্য অনেক ব্যাংক নেয় না।
সূত্র মতে, একজন গ্রাহক যদি ঢাকার বাইরে থেকে তার হিসাবে ৫০ হাজার টাকা জমা করে ঢাকা থেকে টাকা তুলতে চান তবে ডাচ-বাংলা ব্যাংক কে ২০ টাকা চার্জ দিতে হবে। আর ভ্যাট হিসেবে দিতে হবে তিন টাকা। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাংক এক্ষেত্রে চার্জ নেয় না। অনেক ব্যাংকের ক্ষেত্রেই এক লাখ টাকা পর্যন্ত আন্তঃজেলা লেনদেনে কোনো ফি নেই।
জানা গেছে, ডাচ-বাংলার বেশির ভাগ গ্রাহক মধ্যবিত্ত ও ছাত্র। তাদের বেশির ভাগই নগদ টাকা বহনের ঝুঁকি এড়াতে এই সেবা নিয়ে থাকেন। তাই কৌশলে অর্থ আদায়ের জন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চার্জ ধার্য করে রেখেছে।
আবার এক লাখ টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা লেনদেন করতে গ্রাহককে দিতে হচ্ছে ১০০ টাকা। কিন্ত তুলনা করে দেখা গেছে, কোনো ব্যাংকেই এই পরিমাণ ফি নেই। প্রায় সব ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা ৫০ টাকা। অনেক ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন করা যায় এই টাকাতে।
একভাবে পাঁচ লাখ টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা এক শহর থেকে আরেক শহরে ডাচ-বাংলার গ্রাহকরা নিতে চাইলে ফি দিতে হবে ২০০ টাকা। এটা অন্য ব্যাংকগুলোতে কম।
এখানেই শেষ নয়, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের অনিয়ম। এটিএম বুথগুলোতে লেনদেন করতে কোনো ব্যাংকের ক্ষেত্রেই হিসাব তথ্য (স্টেটমেন্ট ফি) পেতে ফি দিতে হয় না। কিন্তু ডাচ-বাংলা প্রতি লেনদেনের ক্ষেত্রে এর গ্রাহকদের কাছ থেকে তিন টাকা ফি নিয়ে থাকে।
এসব অনিয়মের ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হয়নি ডাচ-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।