পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে তিন বাহিনীর প্রধানসহ সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আপনাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যারা পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করেছিল- আমাদের কাছে তথ্য আছে, এমন একটা ঘটনা ঘটাবে যেন আমরা উদ্বোধনটা করতেই না পারি। বিভিন্ন জায়গায় আগুন, সমস্ত জিনিস রহস্যজনক। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সবার নজর দিতে হবে।
বুধবার (১৫ জুন) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখনই আমরা এগিয়ে যাই, তখনই কোনো কোনো মহল নানা ধরনের অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্র করে থাকে। সেটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পদ্মা সেতু। যারা পদ্মা সেতু নির্মাণের বিরোধিতা করেছিল। আমরা কিছু তথ্য পেয়েছি। তাদের একটা উদ্দেশ্য আছে। দেশে এমন একটা ঘটনা ঘটানো হতে পারে, যেন ২৫ জুন আমরা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করতে যেন না পারি। কি করবে তা জানি না। তবে ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন রেলে আগুন, লঞ্চে আগুন, ফেরিতে আগুন। এমনকি সীতাকুণ্ডে যে আগুনটা। সেখানে দেখেছি একটা জায়গায় আগুন ধরেছে। কিন্তু দেখা গেল বিক্ষিপ্ত বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটা জায়গায় আগুন লেগেছে। রেলের আগুনের আমি একটা ভিডিও পেয়েছি। রেলের চাকার কাছ থেকে আগুন জ্বলছে। সেটা কিভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এগুলো কিভাবে হয়। কাজেই প্রত্যেকটা দুর্ঘটনা একেকটা রহস্যজনক। এজন্যই আমি সবাইকে সতর্ক থাকতে বলবো। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে নজর রাখতে হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র আমরা নির্মাণ করে যাচ্ছি। চলচলের সুবিধার জন্য মেট্রোরেল দৃশ্যমান, এক্স প্রেস ওয়ে করে দিচ্ছি, কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল করে দিচ্ছি। কাজেই এসব প্রতিষ্ঠানের ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সবাইকে এ বিষয়ে নজর দিতে হবে যে কিভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা দেয়া যায়।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, প্রযুক্তি যেমন আমাদের সুযোগ এনে দেয়। আমাদের উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মুক্ত করেছে। আবার অনেকে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদেরও সুযোগ করে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেন, নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ক্ষমতায় আসিনি। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ক্ষমতায় এসেছি। দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে এসেছি। কাজেই এসএসএফ সদস্যদের প্রতি অনুরোধ করবো অতিরিক্ত নিরাপত্তার নামে যেন মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন না হই। মানুষ যেনো আমার কাছে আসতে পারে। তারা যেন আঘাতপ্রাপ্ত না হয় কষ্ট না পায়। সেটাই আমি চাই।
করোনাভাইরাস মহামারির সময় নিজের বন্দিত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদিও করোনাভাইরাসের সময় অনেকটা কারাগারে বন্দির মতোই রাখা হয়েছিল আমাকে। আগে তো ছোট জেলে ছিলাম। ১১ মাস লম্বা সময় জেলে ছিলাম। তিনজন কারারক্ষী ছিলেন। ছোট একটা হটকেজে খাবার আস্ত, তবে এখন বড় বড় মোটা মোটা দুটি হটকেজ আর অনেক খাবার। এটুকু তফাৎ।
তিনি আরও বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই এসএসএফকে। এটুকু নিরাপত্তা করে রাখা হয়েছিল বলেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হইনি। হয়তো আক্রান্ত হলে কাজ করতে পারতাম না। করোনার সময় আমরা কাজ করে গিয়েছি। যাতে দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক অবস্থান টা উন্নত থাকে। এজন্য এসএসএফ সহ আমার সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানাই কারণ এই নিরাপত্তা টুকু দেওয়া হয়েছিল বলেই সুস্থভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমি জানি এসএসএফের সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমার নিরাপত্তা দিচ্ছেন। কাজেই আমি আমার ছেলেমেয়ে নাতি-নাতনির জন্য যেমন দোয়া করি, ঠিক সেইভাবে আমার সঙ্গে যারা কাজ করে তাদের প্রত্যেকের জন্য দোয়া করি। এসএসসি পের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করি যেন আমার নিরাপত্তা দিতে গিয়ে তারা কোনো সমস্যায় না পড়ে। বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমি সবসময় দেশবাসী ও আমার দলের নেতাকর্মীদের জন্যও দোয়া করি।
এসএসএফসহ আমাদের সব বাহিনী সজাগ রয়েছে। আমাদের সেনা, নৌ, বিমান পুলিশ ও র্যাব বাহিনী, আনসার ভিডিপি বিজিবি সবাই নিজ নিজ জায়গায় সফলভাবে দায়িত্ব পালন করছে। যার ফলে আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণ ও দমন করতে পেরেছি। এ ব্যাপারে আমাদের সব সময় সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।