মালয়েশিয়ার প্রস্তাবে পদ্মাসেতু নির্মাণে ২৩ হাজার ২১৫ কোটি টাকা (২.৯ বিলিয়ন ডলার) খরচের কথা বলা হয়েছে। ৩৫ বছরে এই নির্মাণ ব্যয়সহ মোট প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিতে চায় দেশটি। নির্মাণের পর টোল থেকে এই অর্থ আদায় করা হবে।
সোমবার মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের কাছে যে প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে, তার বিশ্লেষণে এমন হিসাবই বের হয়ে এসেছে।
প্রস্তাব মতে, প্রতিটি ট্রাক চলাচলে বর্তমান দরে ১৭৬১ টাকা (২২ ডলার), প্রাইভেট কারে ১৪৪০ টাকা, মোটারসাইকেল ৭২০ টাকা (৭ ডলার) করে টোল আদায় করা হবে। তবে যাত্রীবাহী বাসে টোল ধরা হবে ২৪০ টাকা (৩ ডলার)। (১ ডলার=৮০.১৫ টাকা)
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই টোলের হার প্রতিবছরই পুনঃনির্ধারণ করা হবে। মালয়েশিয়ার নিজস্ব টেকনিক্যাল কমিটি টোলের হার নির্ধারণ করবে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্ক বিষয়ক দূত সামি ভেলুর নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের প্রতিনিধি দল সোমবার সেতুভবনে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হাতে এই প্রস্তাব তুলে দেন।
বাস্তবতার আলোকে প্রস্তাব করা হয়েছে বলে দাবি করে মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বলেই যাত্রীবাহী বাসে অনেক কম হারে টোল ধরা হয়েছে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু প্রস্তাবে দেখা গেছে, মালয়েশিয়া বিনিয়োগের ওপর ছয় শতাংশ হারে সুদ নেবে। যা নেওয়া হবে চক্রবৃদ্ধি হারে।
প্রস্তাবে সেতু নির্মাণে ৩২ মাস সময় ধরা হয়েছে।
উল্লেখ্য প্রাথমিক প্রস্তাবে মালয়েশিয়া সেতু নির্মাণ শেষ হওয়ার পর ৫০ বছর ধরে সেটি পরিচালনা করবে। পরিচালনার অংশ হিসেবে এর রক্ষণাবেক্ষণ, টোল আদায় ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে তাদের। চূড়ান্ত প্রস্তাবে অবশ্য দেশটি এই সময়কাল ৩৫ বছর নির্ধারণের কথা বলেছে।
পদ্মাসেতু নির্মাণে অর্থায়নে প্রতিশ্রুত জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এরই মধ্যে সেতুর ব্যবহারের ওপর একটি জরিপ চালিয়েছে। সে অনুযায়ী নির্মাণের পর দুই বছরের মধ্যে এর ওপর দিয়ে যান চলাচল করবে দৈনিক গড়ে ২৫ হাজার করে। পাঁচ বছর পর তা দিনে ৪০ হাজারে উন্নীত হবে। এই হিসাব মাথায় রেখেই ৩৫ বছরে ৭০ হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়ার ভাবনা মালয়েশিয় সরকারের।
অন্যদিকে সেতু বিভাগও এ নিয়ে একটি প্রাক জরিপ সম্পন্ন করেছে। তাদের হিসাব অনুযায়ী ২০১৬ সালে সেতু চালু হওয়ার পর ২০৫০ সাল পর্যন্ত মোট টোল আদায় হবে কমপক্ষে ৪৮ হাজার কোটি টাকা (৫৮০ কোটি ডলার)। সেতু বিভাগের এই হিসেবের ভিত্তি ছিলো বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলের হার।
তবে পদ্মাসেতুতে মালয়েশিয়ার প্রস্তাবিত টোলের হার যমুনা সেতুর বর্তমান টোলের হারের চেয়ে অনেক বেশি।
যমুনা সেতুতে বর্তমানে মোটরসাইকেলে ৫০ টাকা, প্রাইভেট গাড়ি ৫০০ টাকা, মিনিবাস ৬৫০ টাকা, বড় বাস ৯০০ টাকা, মিডিয়াম ট্রাক এক হাজার টাকা ও বড় বাসে ১৪০০ টাকা করে টোল আদায় করা হচ্ছে।
১৯৯৮ সালে সেতুটি নির্মাণ সম্পন্ন করার ১৩ বছর পর প্রাথমিকভাবে ধার্যকৃত টোল থেকে গড়ে ১৫-২০ শতাংশ বাড়িয়ে ওই হার নির্ধারণ করা হয় ২০১১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর।
এখানে উল্লেখ্য, যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। আর প্রস্তাবিত পদ্মাসেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।
সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার দেওয়া প্রস্তাব হাতে পাওয়ার পরপরই বৈঠকে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারি কর্মকর্তারা বিস্ময় প্রকাশ করেন। বৈঠক শেষেও নিজেদের মধ্যে আলোচনায় তারা প্রস্তাবকে অবাস্তব, অগ্রহণযোগ্য বলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তবে যোগাযোগমন্ত্রী সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছেন, তাদের প্রস্তাব কারিগরি কমিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ব্যাটে বলে মিললেই কেবল এই প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে।