তিন বছর আগে বিদ্রোহে অংশ নেওয়ার অপরাধে বিজিবির (সাবেক বিডিআর) ৪৪ ব্যাটালিয়নের ১১৩ জনের সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদ-াদেশ হয়েছে।
ওই ব্যাটালিয়নের ৬৭৩ আসামির মধ্যে খালাস পেয়েছেন আটজন। বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।
খালাস পাওয়া আটজনের মধ্যে সাগর হোসেন, খাদেবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম, সাদিক হাসান, এবং সাইফুল ইসলাম দোষ স্বীকার করেন। বাকি তিনজন আব্দুস সাত্তার, গোলাম কিবরিয়া এবং ইকবাল হোসেন নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।
বিদ্রোহের বিচারে কর্নেল মো. এহিয়া আযম খাঁনের নেতৃত্বে গঠিত বিশেষ আদালত-৯ মঙ্গলবার পিলখানার দরবার হলের এজলাসে বসে এই রায় দেন।
রায় শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে মামলার প্রসিকিউটর লে. কর্নেল মো. জাকির হোসেন জানান, ২০০৯ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারি দরবার হল, মহাপরিচালকের ভবন, ৫ নম্বর ফটক, কেন্দ্রীয় ম্যাগজিনসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়ন। সিপাহী মঈনের সাথে ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের সিপাহী কাজল দরবার হলে আক্রমন করলে বিদ্রোহের সূত্রপাত ঘটে।
তিনি জানান, বিদোহের সাথে সম্পৃক্ত প্রতিটি কর্মকা-ই ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের বিদ্রোহী সদস্যদের একচ্ছত্র অধিপত্য ছিল যা পিলখানায় অবস্থিত অন্য ব্যাটালিয়নের সদস্যদের অপরাধ থেকে ভিন্ন। মাত্রার অপরাধ।
পিলখানায় বিদ্রোহের মোট ১১টি ইউনিটের মামলার মধ্যে এ নিয়ে ১০টির রায় হল। এখন বাকি শুধু সদর রাইফেল ব্যাটালিয়ন ইউনিটের মামলার রায়। ওই রায় হলে বিডিআর বিদ্রোহের সব মামলার বিচার সম্পন্ন হবে।
বিদ্রোহের ঘটনায় ঢাকার বাইরে ৪৬টি মামলার সবগুলোর রায় ইতোমধ্যে হয়েছে।
পিলখানায় হত্যা-লুণ্ঠনের মামলা চলছে ঢাকার জজ আদালতে। ওই মামলা সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে।
৪৪ ব্যাটালিয়নের আসামিদের মধ্যে সাড়ে ৬ বছর সাজা হয়েছে এক জনের, ৬ বছর সাজা হয়েছে ৩২ জনের। এছাড়া ২৬ জনকে সাড়ে পাঁচ বছর, ১৩১ জনকে পাঁচ বছর, ১২৪ জনকে সাড়ে চার বছর, ৭৩ জনকে চার বছর, ১৬ জনকে সাড়ে তিন বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তিন বছরের সাজা হয়েছে ১৬ জনের, আড়াই বছরের সাজা হয়েছে দুই জনের, ৩৮ জনের হয়েছে দুই বছরের সাজা। আট জনকে দেড় বছর, ৪২ জনকে এক বছর, ১৫ জনকে ছয় মাস এবং ১৮ জনকে চার মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায়ে প্রত্যেককে সশ্রম কারাদ- এবং ১০০ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।
মোট ৪৮ কার্যদিবসে এই মামলার কার্যক্রম শেষ হলো। মামলার সাক্ষী ছিলেন ১২৫ জন। সাফাই সাক্ষী ছিলেন ৪৩ জন। আর দোষ স্বীকার করেছেন ১৯জন।
২০০৯ সালের বিদ্রোহের ঘটনায় করা এই মামলার বিচার ২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল শুরু হয়েছিল। এই মামলার বাদি সুবেদার ইসমাইল হোসেন।
মোট ৬৭৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হলেও বিচার চলার সময় দু’জনের মৃত্যু হয়।
মামলার প্রসিকিউটর জানান, মহাপরিচালকের আদেশ অমান্য করা, বিদ্রোহের তথ্য ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে না জানানো, অনুমতি ছাড়াই অস্ত্র সংগ্রহ করে নিজ দখলে রাখা, অস্ত্রাগার লুট, ছুটিতে থাকার মিথ্যা তথ্য প্রদানসহ আসামিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়।
এই মামলায় কর্নেল এহিয়া আযম খাঁনকে সহায়তা করেন লে. কর্নেল মো. শাহাদত হোসেন ও মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান। অ্যাটর্নি জেনারেলের প্রতিনিধি হিসাবে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল গৌতম কুমার রায়।
অন্যদিকে প্রসিকিউটর লে. কর্নেল জাকির হোসেনকে সহায়তা দেন বিশেষ প্রসিকিউটর মুনজুর আলম মুনজু এবং মো. বিলায়েত হোসেন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৩ জন নিহত হন। রক্তাক্ত বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর নাম বদলে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি।