পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের শর্তের কারণে পদত্যাগের গুঞ্জনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে এবং জটিলতার অবসান হলে সরে যেতে তার আপত্তি নেই।
রোববার রাজধানীর হেয়ার রোডের সরকারি বাসভবনের ফটকে দাঁড়িয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ইন্টিগ্রিটি অ্যাডভাইজর মসিউর সাংবাদিকদের বলেন, “আমি পদত্যাগ করলে যদি ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের ঋণের সুরাহা হয় তাহলে আমি একবার কেন, দশবার পদত্যাগ করব। তবে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে সেগুলোর সাক্ষ্য প্রমাণ দিতে হবে এবং আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।”
“যদি সরকার ও প্রধানমন্ত্রী মনে করেন- বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করছি না, তাহলে পদত্যাগ করব,” যোগ করেন তিনি।
ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন কি-না এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “এ বিষয়ে সরকারের ভাষ্য আগে আসা উচিৎ। সরকারের ভাষ্য দেবেন অর্থমন্ত্রী। তবে আমি আমার অনুভূতি জানাতে পারি।”
তার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের কোনো অভিযোগ থাকলে তা প্রকাশ করে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া উচিৎ বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সাংবাদিকরা সকাল থেকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সামনে আসেননি। সকালে তিনি মন্ত্রণালয়েও যাননি।
তবে দুপুরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বলে একটি সূত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রিয়াজুল বাশার জানান, বিকেল সোয়া ৫টার পর উপদেষ্টা মসিউর গাড়িতে করে তার বাসা থেকে বেরিয়ে যান। তখনও ওই গাড়িতে জাতীয় পতাকা দেখা গেছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর সরকারকে কয়েকটি শর্ত দেয় বিশ্ব ব্যাংক। তা পালন হয়নি- এমন অভিযোগে গত জুনে অর্থায়ন বাতিল করে তারা।
তবে অর্থায়ন বাতিলের পর এই প্রকল্প নিয়ে অভিযোগের মুখে থাকা মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন। সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসাইনও ছুটিতে যান।
ঈদের ছুটির পর গুঞ্জন শুরু হয়, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউরকে সরে দাঁড়াতে হচ্ছে। এ নিয়ে শনিবার কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।
এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী মুহিত শনিবার তার মিন্টো রোডের বাড়িতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতার সব বাধা-বিপত্তি কেটে যাচ্ছে। তিনি আশা করছেন, এক সপ্তাহের মধ্যেই সমাধান হয়ে যাবে।
তবে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা তার সরে যাওয়ার গুঞ্জন নিয়ে রোববার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব বারবার এড়িয়ে গেছেন।
কাফকার ট্রায়াল উপন্যাস থেকে উদ্ধৃত করে উপদেষ্টা বলেন, সেখানে লেখক দেখিয়েছেন একজনের বিচার করা হচ্ছে, কিন্তু কখনোই বলা হচ্ছে না সে কি অপরাধ করেছে।
জেমস ফ্রেজারের গোল্ডেন ভাউ বই থেকে উদ্ধৃত করে মসিউর বলেন, “প্রাচীন গ্রিসে যখন কোনো স্থাপনা তৈরি করা হতো, তখন তার নিচে মানুষের রক্ত দেওয়া হতো। মানুষের রক্ত যখন পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন মোরগের রক্ত দেওয়া শুরু হলো। তারও যখন অভাব দেখা দিল, তখন মোরগের ছায়ার ওপর ভবন নির্মাণ শুরু হলো। এরপর ওই ছায়াকে ঘিরে এক ধরেনের বাণিজ্যও তৈরি হয়েছিল।”
এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা জানতে চান- এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কি-না, যাতে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পচ্ছেন না।
এর জবাবেও মসিউর বলেন, “কাউকে দোষ দিতে হলে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।”
সাংবাদিকরা এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য সকাল থেকে তার কার্যালয় ও বাসার সামনে অপেক্ষায় থাকলেও তিনি সামনে আসেননি। বিকাল সোয়া ৩টার দিকে মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব আ স ম রাশেদ সাংবাদিকদের জানান, মন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন না।
২৯০ কোটি ডলারে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল। বাকি অর্থের বেশিরভাগ দেওয়ার কথা এডিবি, আইডিবি ও জাইকার।
বিশ্ব ব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করলেও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপানি উন্নয়ন সংস্থা জাইকার চুক্তির মেয়াদ ৩১ অগাস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ফলে এর মধ্যেই বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ফয়সালা করতে হবে সরকারকে।