সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদঘাটনে এবার তাদের একমাত্র শিশুপুত্র মেঘের ডিএনএ পাঠানো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। র্যাবের সংশ্লিষ্ট সূত্র বাংলানিউজকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমি শুনেছি মেঘের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হবে। তবে আজ না কাল পাঠানো হবে তা এ মৃহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।“
সাড়ে ছয় মাসেও সাংবাদিক দম্পতির হত্যাকাণ্ডের কোনো রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় এখন একমাত্র ভরসা করা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোকল্যান্ডের ফরেনসিক ও ডিএনএ ল্যাবের পরীক্ষাকেই।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাসায়নিক ও একটি ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল আসার পর র্যাব খুনিদের শনাক্ত করতে মাঠে নামবে বলে জানিয়েছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল। রোডম্যাপ অনুযায়ী সাগর রুনি হত্যা মামলা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে র্যাবের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, বেশির ভাগ নমুনাতেই একাধিক ব্যক্তির হাতের ও আঙুলের ছাপ রয়েছে। এর মধ্যে রুনির টি-শার্ট থেকে একজনের পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডের সময় যে ধস্তাধস্তি হয়েছে, তাতেই রুনির টি-শার্টে ওই ব্যক্তির চুল ও হাতের ছাপ লাগে। সাগরের হাত ও পা বাঁধার কাপড়ের নমুনা থেকেও অন্য কারও ডিএনএ শনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এসব নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য দুই দফায় যুক্তরাষ্ট্রের রাসায়নিক ও ডিএনএ পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। এরপর গত ১২ জুন প্রথম দফায় পাঠানো হয় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি, ছুরির বাঁট, সাগরের মোজা, একটি কম্বল, সাগরের পরনের প্যান্ট, রুনির পরনের প্যান্ট ও অন্য কাপড়ের নমুনা।
গত ১৭ জুলাই দ্বিতীয় দফায় পাঠানো হয় হত্যাকাণ্ডের সময় যে কাপড় দিয়ে সাগরের হাত ও পা বাঁধা হয়েছিল, সেই কাপড় এবং রুনির টি-শার্ট।
সূত্র জানায়, ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টই এখন তদন্তের শেষ ভরসা। এ রিপোর্ট অনুযায়ী খুনিদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে। যখন কোনো খুনি শনাক্ত করা সম্ভব হয় না, তখন ক্রাইম সিনই একমাত্র বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু সাগর রুনির ক্রাইম সিনকে সেভাবে সংরক্ষণ করতে পারেনি পুলিশ। সিআইডি ও ডিবি বিশেষজ্ঞ দলও ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্রাইম সিন রক্ষা করতে পারেনি।
উল্লেখ্য, গত ১১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসা থেকে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বাসায় ছিল তাদের একমাত্র সন্তান মেঘ। প্রথমে সাগর রুনি হত্যা মামলা তদন্তের ভার ডিবির হাতে ছিল। তিন মাস ডিবি এ মামলায় তেমস কিছু করতে না পারায় হাইকোর্টের নির্দেশে ১৯ মে র্যাব সাগর রুনি হত্যা মামলার তদন্ত শুরু করে।