আহমেদ রুম্মানের চাকরি জীবন দুই বছর। বর্তমানে তিনি বেসরকারি বিমান সংস্থা বেস্ট এয়ারে চাকরি করছেন। গত দুই বছরে ঈদের সময় বাবা-মা, ভাইবোনদের উপহার দিয়েছেন। কিন্তু এবার তিনি কাউকে কোনো উপহার দিতে পারেননি। ভাগনে-ভাগনি, ভাইপো-ভাইঝিরা এসে ঈদের সালামি চেয়েছে, “আগামী ঈদে সালামি দেবো“- কথাক`টি বলে খালি হাতে ফিরিয়েছেন তাদের। আর তিনি নিজে গত ঈদের পাঞ্জাবি পরে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।
এবারের ঈদে বেস্ট এয়ারের ২৬০ কর্মীর সবারই ঈদ কেটেছে বেতন-বোনাস ছাড়া। গত চার মাস ধরে তারা বেতন পান না। এমনকি ঈদের বোনাসটি পর্যন্ত পাননি।
আহমেদ রুম্মানের মতো বেস্ট এয়ারের আনোয়ার হোসেনেরও একইভাবে ঈদ কেটেছে। তিনি ঈদ করেছেন গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায়। বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতেই ঢাকা থেকে ছুটে গিয়েছিলেন বাড়িতে। তবে খালি হাতে। স্ত্রী-দুই সন্তানকে নিয়ে তারও ঈদ কেটেছে নিরানন্দে।
ডেসটিনি গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বেস্ট এয়ার। ২০১০ সালে ডেসটিনি গ্রুপ বন্ধ হয়ে যাওয়া এই এয়ারলাইন্সটি কিনে নেয়। এরপর দ্রুততার সঙ্গে এয়ারলাইন্সটি অপারেশনে যেতে কাজ শুরু করে। বেস্ট এয়ার ১২ জন বৈমানিক, ৩৪ জন কেবিন ক্রুসহ সবমিলিয়ে প্রায় তিন শতাধিক লোকও নিয়োগ করে।
এরপর গত মে মাসে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংক ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালকসহ সব ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয়। ওই নির্দেশের পরেই বেস্ট এয়ারের কর্মীদের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে তাদের বেতন-ভাতা নিয়মিতই হতো।
আহমেদ রুম্মান বলেন, “বেতনের দাবিতে ঈদের আগে আমরা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছি, সংবাদ সম্মেলন করেছি। এরপর সরকারের দিকে তাকিয়ে ছিলাম আমরা। কিন্তু সরকার আমাদের জন্য কিছুই করলো না।”
বেস্ট এয়ারের রিয়াদ আল ফাহাদ বলেন, “২০১১ সালের নভেম্বরে বেস্ট এয়ারে যোগদানের পর প্রতি মাসের ২৫ তারিখে বেতন পেতাম।”
রোজার মধ্যে অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েছেন আহমেদ রুম্মান, আনোয়ার হোসেন ও রিয়াদ আল-ফাহাদের মতো অন্য সবাই। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস পর্যন্ত তারা অফিস করেছেন। যদি ঈদের আগে বেতন-বোনাস পান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খালি হাতে সবাই বাড়ি ফিরেছেন।
বেস্ট এয়ারের পরিচালক ক্যাপ্টেন আনিস (ফ্লাইট অপারেশন) বলেন, “আমরা সামাজিকভাবে অভিভাকহীন হয়ে গেলাম। আমরা নিরপরাধ, অথচ আজ চারটি মাস বেতন পাচ্ছি না। আজ এখানকার ২৬০ কর্মীর ঈদ মাটি করে দিয়েছি।”
ঈদের আগে সরকার যাতে বেস্ট এয়ারের জব্দ করা অ্যাকাউন্ট খুলে দেয় সেজন্য এখানকার দু’একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কয়েকজন মন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন। ঘটনাটি জানার পর তারা বিষয়টিকে যৌক্তিক বলেও উল্লেখ করেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই শেষ।
বেতন বোনাসের দাবিতে নিজেদের অফিসে আন্দোলন করলে এক পর্যায়ে ডেসটিনি গ্রুপের উপদেষ্টা সৈয়দ শামসুদ্দিন আহমেদ বেস্ট এয়ার কর্মীদের সুইসাইড করার কথাও বলেন।
বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর একে একে কেবিন ক্রু, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন বিভাগ থেকে ২৫/৩০ জন কর্মী বেস্ট এয়ার ছেড়ে চলে গিয়েছেন। কর্মীদের সবাই বেতনের আশায় এক মাস, দুই মাস করে চার মাস কাটিয়ে দিয়েছেন। তবু বেতনের নিশ্চয়তা মেলেনি।