পদ্মাসেতু নিয়ে বেহাল দশা কাটিয়ে উঠতে সরকার সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী হিসেবে আবুল হোসেনের পদত্যাগ গ্রহণ করতে মাস খানেক সময় নিলেও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আরেকটি পদত্যাগ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিশ্চিত করতে সরকার এই উইকেটের পতনটিও দ্রুতই নিশ্চিত করছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। এ সপ্তাহের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমানকে সরে দাঁড়াতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র।
আর এটাও করা হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনেই।
সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংক তার ঋণ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে যে শর্ত দিয়েছে তার অন্যতমই হচ্ছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দুই জনের পদত্যাগ। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের সঙ্গে অপর নামটি হচ্ছে মশিউর রহমান, তেমনটাই নিশ্চিত করে সূত্র।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান পদ্মাসেতু প্রকল্পের ইন্টিগ্রিটি অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করছেন।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এ ব্যাপারে সরকারকে যা কিছু করার এ মাসের মধ্যেই করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে পদ্মাসেতুতে অন্য দুই সহ-অর্থায়ন সংস্থা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি তাদের প্রতিশ্রুত ঋণের কার্যকারিতার সময় ৩০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়িয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন নতুন সপ্তাহের গোড়াতেই হয়তো দ্বিতীয় পদত্যাগটি সম্পন্ন করে ঝাড়া হাত-পা হতে চায় সরকার।
আরও একটি পদত্যাগ নিয়ে আলোচনা উঠলে সে ব্যাপারে অবশ্য এখনো মুখ খোলেনি সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষই। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অবশ্য এনিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন। এসময় তিনি বিষয়টি বাতিল করে দেননি, বলেছেন, “আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”
সূত্র জানায়, বিষয়টিতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত অনেকাংশেই চূড়ান্ত। এখন তা বাস্তবায়নের অপেক্ষা মাত্র। কারণ এই পদত্যাগটি বিশ্বব্যাংকের তিন শর্তের একটি। প্রথম শর্ত আবুল হোসেনের মন্ত্রিসভা থেকে সরে যাওয়া, সেটি সরকার যথাযথভাবে সম্পন্ন করে গেজেট নোটিফিকেশন জারি করেছে। দ্বিতীয় শর্তটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার সরে যাওয়া অথবা ছুটিতে পাঠানো। আর তৃতীয় শর্ত দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত প্রক্রিয়ায় বিশ্বব্যাংকের একটি প্যানেলর প্রবেশাধিকার রেখে একটি টার্মস অব রেফারেন্স চূড়ান্ত করা।
এসব শর্ত মেনেই বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আলোচনা নতুন করে শুরু হয়েছে বলে সূত্র জানায়। এনিয়ে নতুন একটি চিঠি অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকে পাঠাবেন যা এখন খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। চিঠিটিও নতুন সপ্তাহেই পাঠানো হবে। তবে তার আগে বিশ্বব্যাংকের সবগুলো শর্ত মেনে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করছে সরকার।
সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সিগন্যাল পেলে দুদকও এ বিষয়ে টার্মস অব রেফারেন্স সই করবে বলে জানিয়েছে সূত্র।
গত ফেব্রুয়ারিতে পদ্মাসেতু নির্মাণে ১২০ কোটি ডলার ঋণসহায়তা দিতে প্রতিশ্রুত হয় বিশ্বব্যাংক। কিন্তু জুনে এসে এ নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। অভিযোগ ওঠে সেতু নির্মাণের জন্য কানাডীয় প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের সঙ্গে অবৈধ অর্থ লেনদেনের প্রস্তাব রয়েছে। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক তার অর্থায়নের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয়। বিশ্বব্যাংকের পর প্রতিশ্রুত অর্থ সহায়তা প্রদানের বিষয়ে এডিবি ও জাইকাও রাঙাচোখ দেখায়। এর পর থেকেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সরকার বিষয়টিতে অস্বস্তির সময় কাটাচ্ছে।
এর মধ্যে অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেদের অর্থে পদ্মাসেতু নির্মাণেরও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মালয়েশিয়া থেকে অর্থ নিয়ে সেতু করা হবে সে ব্যাপারেও চলে তোরজোর। তবে অর্থমন্ত্রী গোড়া থেকেই বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বিষয়টি সমঝোতার একটি স্থানে নিয়ে যেতে সচেষ্ট ছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় তৎকালীণ যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের প্রথমে ওই পদ ছেড়ে দেওয়া এবং পরে মন্ত্রিসভা থেকেই সরে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এবার প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মশিউর রহমানের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে সরকার এ বিষয়ে পুরোপুরি অস্বস্তি কাটিয়ে উঠে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিশ্চিত করতে পারবে এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট মহলের।
উল্লেখ্য, ৬.১৫ কি.মি. দীর্ঘ পদ্মাসেতুটি নির্মাণে ২৯০ কোটি ডলার ব্যয় ধরা হয়েছিল। তার মধ্যে ১২০ কোটি ডলার বিশ্বব্যাংকের ঋণ ছাড়াও এডিবি ৬১টি কোটি, জাইকা ৪০ কোটি এবং ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেয়ায় সম্মত হয়েছিল।