সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হলমার্ক কোম্পানির কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সোনালী ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পর্ষদ সভা সূত্র জানায়, মহাব্যবস্থাপক এবং এর নিচের পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। জবাব গ্রহণযোগ্য না হলে বরখাস্তসহ সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিগগিরই এ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
তবে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (ডিএমডি) নিয়োগ দেয় সরকার। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পর্ষদ অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে চিঠি দেবে।
সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে হলমার্ক গ্রুপ নামের এ কোম্পানির সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষাতেই প্রথম ধরা পড়ে।
পর্ষদের সভা শেষে এ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত জানান, ‘‘অভ্যন্তরীণ তদন্ত ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া আগামী সপ্তাহে শুরু হবে।’’
তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রতিবেদনে ৪১-৪২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভূমিকার কথা উল্লেখ রয়েছে। তাঁরা রূপসী বাংলা শাখা ও প্রধান কার্যালয়সহ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত। জালিয়াতির সঙ্গে যাঁদের সম্পৃক্ততা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হবে, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাঁদের সবার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অর্থ জালিয়াতির ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের তত্কালীন এমডি হুমায়ুন কবিরসহ ৪১-৪২ জন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে সোনালী ব্যাংকে নিয়োজিত একটি নিরপেক্ষ তদন্তে এসব কর্মকর্তার নাম বেরিয়ে আসে ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরীক্ষাতে জালিয়াতির ঘটনাটির বিস্তারিত প্রকাশ পায়। ব্যাংক নিযুক্ত একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্মের করা সর্বশেষ নিরীক্ষায় সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা ও প্রধান কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার শৈথিল্যকে এর জন্য দায়ী করা হয়।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, কেবল নির্ধারিত অভ্যন্তরীণ তদন্ত দেরিতে শুরু করার কারণেই হলমার্ক গ্রুপ ও বেনামে আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়মবহির্ভূতভাবে এক হাজার ৮৬০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
গত মে মাস পর্যন্ত হলমার্ক ও একই মালিকানার অন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে একটি মাত্র শাখা থেকেই তিন হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিন হাজার ৬০৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই। এই অর্থের মধ্যে দুই হাজার ৬৬৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা একাই নিয়েছে হলমার্ক গ্রুপ।