নতুন আশায় বুক বেঁধেছে লাখো বিনিয়োগকারী

নতুন আশায় বুক বেঁধেছে লাখো বিনিয়োগকারী

ইতিবাচক হবে পুঁজিবাজারের গতি, এমন আশায় নতুন করে বুক বাঁধতে শুরু করেছেন পুঁজিবাজারের লাখো বিনিয়োগকারী।

দীর্ঘদিন মন্দার কবলে পড়ে রয়েছে পুঁজিবাজার। চলতি বছরের ১৬ জুনের পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক পাঁচ হাজার পয়েন্টে ওপরে ওঠেনি। মাঝে একবার সূচক নেমে গিয়েছিল চার হাজার পয়েন্টের নিচে। ফলে ক্ষতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা।

এদিকে সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা নানাভাবে পুঁজিবাজার পরিস্থিতির উন্নয়নে চেষ্টা করলেও তা কাজে আসেনি।

একাধিক অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বাজার বিষয়ে খুব উদ্বিগ্ন। তাই বাজার পরিস্থিতির উন্নয়নে যা যা করণীয়, তা করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি প্রদানমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে। তারই সূত্র ধরে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় ঘোষণা দিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে শুরু করে।

পরে এসইসির হস্তক্ষেপে ঘোষণা দিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের অবস্থান থেকে সরে আসে ব্যাংকগুলো।

সরকারের চাপে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে এলেও ২০০৯ ও ২০১০ সালের মতো ব্যাপকভাবে বিনিয়োগে আসছে না। মূলত সরকারের ব্যাংক ঋণ নির্ভরশীলতায় ব্যাংক ব্যবস্থায় তারল্য সঙ্কট থাকায় ও ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের ঋণ নেওয়ার চাপে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ফলে পুঁজিবাজার পরিস্থিতির উন্নয়নে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা সরবরাহ না হওয়ায় বাজার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।

এদিকে ব্যাংকারদের মন্তব্য, ২০০৯-১০ সময়ে আমাদের হাতে প্রচুর অলস অর্থ জমে ছিল, যা বিনিয়োগ করার কোনো ক্ষেত্রে পাওয়া যায়নি। ব্যক্তি ঋণ গ্রহীতাদের ঋণ গ্রহণ কমে গিয়েছিল। তাই ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত অর্থ পুঁজিবাজারে চলে আসে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ কমিয়ে দেওয়ায় বাজার পরিস্থিতির অবনতি হয়, সূচক কমে যায়।

তারা আরো বলছেন, এমনিতেই ঋণ দিয়ে নির্বিঘ্নে ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ সুদ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে, তাই ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রে বিনিয়োগে সম্মত হচ্ছে না পরিচালনা পর্ষদ।

এদিকে ব্যাংকের অর্থে পরিচালিত অধিকাংশ মার্চেন্ট ব্যাংক ক্ষতিতে থাকায় তারাও আটকে রয়েছে। অনেক ব্যাংকের নিজস্ব পোর্টফলিওর মূল্য কমে অর্ধেকে নেমে গেছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) নিজস্ব মূলধন বৃদ্ধির বাধ্য বাধকতা রয়েছে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ওপর। প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিতে থাকার কারণে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমেও অর্থ সংগ্রহ করেতে পারছে না।

তবে আইপিও ছাড়া অন্য যে কোনো উপায়ে অর্থ সংগ্রহের সুযোগ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তায়নের মাধ্যমে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ায়নি মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো।

এদিকে দীর্ঘদিন সেকেন্ডারি মার্কেটে মন্দার কারণে প্রাথমিক মার্কেটে ইতিমধ্যে প্রভাব পড়েছে। তিনটি প্রতিষ্ঠান আইপিওর মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন পেয়েও শেষমেশ উত্তোলন করেনি। যা পুঁজিবাজারের জন্য একটি নেতিবাচক ইঙ্গিত। এভাবে চলতে থাকলে আর বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমতে থাকলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন বিনিয়োগকারীরা, যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে ব্যহত করতে পারে বলে বারবার সাবধান করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

তাই বিনিয়োগকারীদের আশা ধরে রাখতে ও পুঁজির উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারের অবস্থান ধরে রাখতে হলে বাজারকে এমন অবস্থায় নিতে হবে যাতে, যে কোনো কোম্পানি নির্বিঘ্নে ও শঙ্কামুক্তভাবে আইপিওর মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করে শিল্প কারখানা তৈরি করতে পারে। আর এজন্য সেকেন্ডারি মার্কেটকে চাঙ্গা করা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন তারা।

নানা নেতিবাচক দিক থাকা সত্ত্বেও খুব শিগগিরই পুঁজিবাজারের এমন অবস্থার উত্তরণে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এমনটাই প্রত্যাশা বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরীর।

অর্থ বাণিজ্য