দলীয় কোন্দল, কর্মীদের মূল্যায়ন না করা এবং নতুন কর্মী সংগ্রহে নেতাদের অনীহার ইত্যাদি কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে সাতক্ষীরা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম। নেতাদের উপস্থিতি থাকলেও চোখের পড়ার মতো কোনো তৎপরতা নেই।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের কোনো প্রার্থী নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারেনি। চারটি আসনের প্রতিটিতেই মহাজোট জয়লাভ করে। বিএনপির সাংগাঠনিক ব্যর্থতার কারণেই দুটি আসন পায় আওয়ামী লীগ ও অন্য দুটি যায় জাতীয় পার্টির হাতে।
বিএনপি মধ্যম সারির নেতারা মনে করেন, “২০০১ সালে সাতক্ষীরা থেকে বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের দুর্নীতি, লুটপাট ও স্বজনপ্রীতির পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নে বিএনপিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।” সেই বছর নির্বাচনে সাতক্ষীরার পাঁচটি সংসদীয় আসনে (সে সময় আসন পাঁচটি ছিল) বিএনপি একটি, জামায়াতে ইসলামী তিনটি এবং ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টি (না-ফি) একটি আসনে জয়লাভ করে।
সেই সময়ে বিএনপির সংসদ সদস্যরা ও জেলা পর্যায়ের নেতারা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় দলীয় কর্মী সংগ্রহের দিকে নজর দিতে পারেননি। মনোযোগ দেননি দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে। এ মুহূর্তেও জেলার শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্বে থাকা বিএনপির বেশিরভাগ নেতা গ্রুপিং ও দলীয় কোন্দল ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত আছেন। এছাড়া জেলার শীর্ষ নেতাদের দীর্ঘদিন ঢাকায় অবস্থান করা তো রয়েছেই।
সাতক্ষীরা বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের বহু ত্যাগী নেতা কাছে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় না থাকলেও যেমন বিরোধী দলে থাকি, তেমনি দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় আমরা বিরোধী দলের মতো আচরণ পায়। বিএনপির নেতারা সংসদ সদস্য হওয়ার পর স্থানীয় নেতাকর্মীদের চিনতে পারেন না। ভোটের পর তাদের চোখে পর্দা পড়ে যায়।”
সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক তাছকিন আহম্মেদ চিশতি বাংলানিউজকে বলেন, “বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে থাকা সাতক্ষীরার কোনো নেতা জেলার সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে মাথা ঘামান না বলেই আজ বিএনপির এই অবস্থা। আর ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে ব্যতিব্যস্ত থাকেন সবাই।”
দলের ত্যাগী নেতাদের বিষয়ে তিনি বলেন, “যারা সাতক্ষীরায় বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে থাকেন দলের সিনিয়র নেতারা তাদের মূল্যায়ন করেন না, ক্ষমতায় গেলে তারা ত্যাগী নেতাদের চেনেন না। ক্ষমতায় গেলে সিনিয়র নেতারা আমাদের কথা ভুলে যান। আর এ কারণে সাতক্ষীরা বিএনপিতে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন নেই বললেই চলে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি মো. হাবিবুল ইসলাম হাবিব নিজের নির্বাচনী এলাকা তালা-কলারোয়ার বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠন গোছাতে ব্যস্ত থাকেন। এর পাশাপাশি তিনি প্রতি মাসের বেশির ভাগ সময় ঢাকায় অবস্থান করেন। জেলা বিএনপি কর্তৃত্ব নিয়ে স্থানীয় নেতাদের দমিয়ে রাখতে সচেষ্ট থাকেন তিনি। জেলার সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে কোনো ধরনের মাথা ঘামান না।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ডাঃ শহিদুল আলম জেলার রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামান না। মাসে একবার ঢাকা থেকে সাতক্ষীরায় আসেন তার নির্বাচনী এলাকায় (দেবহাটা, আশাশুনি ও কালিগঞ্জের চারটি ইউনিয়ন)।
ডাঃ শহিদুল আলম বলেন, “দেশ ও মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করি। শহীদ জিয়ার আদর্শ নিয়ে বিএনপির রাজনীতি করি। নিজের জন্য নয়।” তিনি গ্রুপিং চলেন বলে জানান।
সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ কয়েক মাস পর একবার করে সাতক্ষীরায় আসেন সাতক্ষীরার সদর-২ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে। কিন্তু এই আসন থেকে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তাছকিন আহম্মেদ চিশতি মনোনয়ন চাইবেন বলে অবস্থা কিছুটা জটিল হয়ে পড়েছে।
বিএনপি আরেক কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিন জাতীয় পার্টি (না-ফি) থেকে দলত্যাগ করে বিএনপিতে যোগদান করে জেলা রাজনীতিতে গ্রুপিংয়ের সূত্রপাত ঘটান। তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকা শ্যামনগর ও কালিগঞ্জের আটটি ইউনিয়নের দলীয় কার্যক্রমে প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা রেখে চলেছেন। তিনি জেলা বিএনপির নিয়ে কোনো ধরনের কার্যকর ভূমিকা রাখেন না।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. ইখতেখার আহম্মেদ নামমাত্র চেয়ারে বসে রয়েছেন। তিনি শ্যামনগর ও কালিগঞ্জের আটটি ইউইনয়ন নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৪ আসনে নির্বাচন করবেন সেই হিসাব-নিকাশ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলে জেলা বিএনপির কার্যক্রম সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে, সাতক্ষীরা শহর বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, “এটা ঠিক যে, জেলার রাজনীতি খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সদর বিএনপি রাজপথে আন্দোলন করছে নিয়মিত। আমরা রাজপথে আছি, থাকবো।”