নরওয়ের চাঞ্চল্যকর উটোয়া দ্বীপে হত্যাযজ্ঞের খলনায়ক আন্দ্রেস বেহরিং ব্রেইভিককে ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি রায়ের আগে তাকে মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ বলে ঘোষণা করা হয়।
দীর্ঘ শুনানি চলার পর আদালত শুক্রবার এ চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করলেন।
উল্লেখ্য, শুনানির সময় নিজের কৃতকর্মের সত্যতা স্বীকার করেন ব্রেইভিক।
গত বছরের মাঝামাঝিতে নরওয়ের একটি দ্বীপে অনুষ্ঠিত যুব ক্যাম্পে গুলি এবং রাজধানী অসলোতে বোমা হামলা চালিয়ে ৭৭ জনকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হয় তাকে। ভয়াবহ এ ঘটনায় আহত হয়েছিল আরও ২৪০ জন।
সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, শুক্রবারের রায় ঘোষণার প্রাক্কালে পাঁচ বিচারকের একটি প্যানেল তার মানসিক সুস্থতা পরিস্থিতির ওপরও তাদের চূড়ান্ত মতামত দেন । সেখানে বিচারক প্যানেল সর্ব সম্মতিতে তাকে মানসিকভাবে সুস্থ হিসেবে ঘোষণা করেন।
প্যানেলের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করেই তার বিরুদ্ধে দেওয়া দণ্ডের ধরন নির্ভর করে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। প্রতিবেদনে মানসিকভাবে সুস্থ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে দীর্ঘ মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে অসুস্থ প্রমাণিত হলে সুরক্ষিত মানসিক হাসপাতালে রেখে তাকে চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারতো বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
তবে আদালতে ৩৩ বছর বয়সী ব্রেইভিক নিজেকে সুস্থ বলে দাবি করেন। আদালতে হত্যাযজ্ঞের দায় স্বীকার করলেও নিজের কর্মকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গেয়ে তিনি দাবি করেন, “নরওয়েকে ইসলামিকরণের হাত থেকে রক্ষা করতে এ হত্যাযজ্ঞ প্রয়োজন ছিল।” ব্রেইভিকের আইনজীবীরা অবশ্য তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে দাবি করেন।
এদিকে শুক্রবারের রায় ঘোষণার প্রাক্কালে রাজধানী অসলোর আদালতের চারপাশ ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
আদালতে ব্রেইভিকের মামলার শুনানির সময় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন। নরওয়ের উটোয়া দ্বীপে লেবার পার্টির যুব ক্যাম্প চলাকালে সংঘটিত এই হত্যাযজ্ঞে নিহত অনেকের মাথায় খুব কাছ থেকে হত্যা করা হয়।
হত্যাযজ্ঞ সংঘটনের আগে ব্রেইভিক সর্তকতার সঙ্গে এর পরিকল্পনা করেন বলে জানা গেছে। পুলিশের লেবার পার্টির বিরুদ্ধে বহুসংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে নরওয়ের নিজস্ব পরিচয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ আনেন তিনি।
পুরো শুনানির সময়ই ব্রেইভিকের মধ্যে অবশ্য অনুশোচনার কোনো লক্ষণ ছিল না। শুনানি চলাকালীন সময়ে আদালতে বেশ কয়েকবার নাৎসিবাদী স্যালুটও দেন তিনি।
সুস্থ প্রমাণিত হওয়ায় নরওয়ের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। তবে সমাজের জন্য বিপদজনক মনে করা হলে তার কারাদণ্ডের মেয়াদ আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে, মানসিক রোগী ঘোষিত হলে ব্রেইভিককে সুরক্ষিত মানসিক চিকিৎসার ওয়ার্ডে পাঠানো হতো। তবে ব্রেইভিক এর আগে দাবি করেন, মানসিক চিকিৎসা ওয়ার্ডে থাকার চেয়ে তার জন্য মৃত্যুই শ্রেয়।
এদিকে এ মাসের শুরুর দিকে ‘ব্রেইভিক কাণ্ড’কে ঘিরে অপর এক তদন্তের ফলাফল প্রকাশ হওয়ায় নরওয়ের পুলিশপ্রধান ওয়েসটেন মিল্যান্ড পদত্যাগ করেন। তদন্তে দেখানো হয়, হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হওয়ার আগেই ব্রেইভিককে থামানো সম্ভব ছিল। প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ড ঠেকাতে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের অত্যধিক কালক্ষেপণেরও সমালোচনা করা হয়।