প্রতিটি ভবনে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি গ্যাসসহ সব দাহ্য পদার্থ ব্যবহার ও সংরক্ষণে আরও সতর্ক হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে অগ্নিদগ্ধ রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে একেবারে স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষকে সচেতন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণেও সংশ্লিষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সোসাইটি অফ প্লাস্টিক সার্জনস অফ বাংলাদেশের ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলন ‘প্লাস্টিকন ২০২২’-এ যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আমাদের আর্কিটেক্ট এবং ইঞ্জিনিয়ার- যারা বিভিন্ন ভবন নির্মাণ করেন বা বাসস্থান নির্মাণ করেন বা ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মাণ করেন, তাদের কাছে অনুরোধ থাকবে যেখানে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার হবে সেই সমস্ত রান্নাঘরে অবশ্যই জানালা খোলা রাখা বা খোলা বাতাস যেন আসা যাওয়া করতে পারে সে ব্যবস্থাটা অবশ্যই রাখা দরকার।’
গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার এবং রান্নাঘরে কীভাবে সেটি ব্যবহার করতে হবে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ঠিকমতো রান্না শেষে চাবিটা বন্ধ করতে হবে। একটা ম্যাচের কাঠি সেটাকে রক্ষা করতে গিয়ে, বাঁচাতে গিয়ে গ্যাস খোলা রাখা এটা যেন কেউ না করে। এসব বিষয়ে যথেষ্ট প্রচারের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। সেদিকে বিশেষ করে আপনারা দৃষ্টি দেবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে সমস্ত জায়গায় যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে, ইন্ডাস্ট্রিতে দাহ্য পদার্থ ব্যবহার হয় সেখানেও কী কী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে এ বিষয়েও তাদেরকে সতর্ক করতে হবে বা ট্রেনিং দিতে হবে। এ ব্যবস্থাটাও আপনারা নেবেন, এটা আমরা চাই।’
আগুনে পুড়ে যাওয়ার প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে একেবারে শৈশব থেকে শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘দাহ্য পদার্থ সংরক্ষণ করা বা রাখা বা ব্যবহার করা এবং এর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা কীভাবে নিতে হবে, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বা অগ্নিদগ্ধ হলে তাৎক্ষণিকভাবে কী করণীয়, প্রাথমিকভাবে কী করলে পোড়া জায়গটা আরও বেশি পুড়বে না বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না- এ বিষয়গুলো সাধারণ মানুষকে একেবারে স্কুল থেকে শিক্ষাটা দেয়া উচিত।’
অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা সবখানে থাকতে হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবশ্য এখন এটা নেয়া হচ্ছে। তার পরও আমি বলব যে, এ বিষয়ে যখন যে ভবন নির্মাণ হবে সঙ্গে সঙ্গে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আগুনে পোড়া রোগীর চিকিৎসা সেবা উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই সেবাটা আমরা আমাদের উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। যেন দ্রুত মানুষ অন্তত প্রাথমিক চিকিৎসাটা পায়, সেবা পায়। প্রত্যেক উপজেলায় আমাদের হাসপাতাল আছে। সেখানে কিছু ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে, সেটা আমরা নেব।’
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই এই দেশের মানুষের চিকিৎসা, শিক্ষা- সর্বক্ষেত্রে আরও উন্নতি হোক সেটাই আমরা চাই। আমাদের স্বাস্থ্য বিষয়ে গবেষণা, তার ওপর আমি জোর দিয়েছি। আর গবেষণার জন্য আমরা বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কাজেই গবেষণার জন্য আমি সব সময় অনুরোধ করব।’
স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে গবেষণা একান্তভাবে দরকার বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘এই গবেষণায় আপনারা সবাই আরও বেশি মনোনিবেশ করবেন, যেন আমরা আরও উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা দিতে পারি, আন্তর্জাতিক মানের দিতে পারি। আমরা কারও মুখাপেক্ষী হয়ে যেন না থাকি, নিজেরাই যেন করতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্লাস্টিক সার্জারি শুধু অগ্নিদগ্ধদের জন্য না, যারা বিকলাঙ্গ বা ঠোঁট কাটা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে বা দুর্ঘটনায় কিংবা জন্মের সময় কোনো অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বিকৃতি হয়। কিছুদিন আগে জোড়া মাথা অপারেশন করা হয়েছে, এ রকম যে ধরনের ঘটনা ঘটে, সেসব ক্ষেত্রে প্লাস্টিক সার্জারি খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
২০১৩-১৪ সালের সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৩-১৪ সালের দিকে বিএনপি-জামায়াত মিলে আন্দোলনের নামে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা, চলন্ত বাসে আগুন লাগিয়ে দেয়া বা পেট্রল বোমা মারা, একটা গাড়িতে যে মানুষ যাচ্ছে, তাদেরকে নামিয়ে তাদের গায়ে পেট্রল ঢেলে দিয়ে আগুন দিয়ে পোড়ানো- এই ধরনের জঘন্য কাজ তারা করে যাচ্ছিল।
‘আমি জানিনা…এরা মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করে না। আজকে যারা সেই আগুনে পুড়েছে, যারা মারা গেছেন, তারা তো মারা গেছেন, যারা বেঁচে আছেন তারা কিন্তু এখনও ভুক্তভোগী। এখনও প্রতিনিয়ত তাদের চিকিৎসা নিতে হয়। আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার কিন্তু শেষ নেই।’
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট এই বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করি। যা বাংলাদেশের একটি বৃহত্তম হাসপাতাল। এখানে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা প্রদান, প্লাস্টিক সার্জারির সকল বিশেষায়িত শাখায় উন্নত ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সর্বোত্তম চিকিৎসা প্রদান, চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণা এবং দক্ষ জনবল তৈরিতে এ প্রতিষ্ঠান বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।’