দীর্ঘ ১৯ মাস ধরে পুঁজিবাজারে মন্দা বিরাজ করছে। যার সূচনা হয় ধস দিয়ে। এরপর দুটি ঈদ পার হয়েছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের মনে আনন্দ ছিল না।
আগের ঈদগুলোর মতো এ ঈদেও খুশির আমেজ নেই তাদের মনে। মা-বাবা, ছেলে-সন্তান, স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজনদের কিছু না দেওয়ার বেদনায় ঈদ আনন্দ ভেস্তে যেতে বসেছে তাদের।
এছাড়া পুঁজিবাজার ধসের ফলে কেউ হারিয়েছেন বাবা। কেউ বা স্বামী আবার কারোর সন্তান। প্রিয়জনের মুখচ্ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠলেই অশ্রুসিক্ত হচ্ছেন তারা। হারিয়ে যাওয়াদের আনন্দ-বেদনার স্মৃতিচারণ করে ভেজা চোখে ঈদের দিনটি কাটবে তাদের।
গত ৩০ জানুয়ারি কাজী লিয়াকত আলী যুবরাজ (৪০) তার রাজধানীর গোপীবাগের জিয়া মাঠ সংলগ্ন ৬৪/জে/৬ ভবনের পঞ্চম তলার নিজ কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
খবর নিয়ে জানা যায়, লিয়াকত আলীর মেয়ে মনীষা বাবার অভাবের মধ্য দিয়েই বড় হচ্ছে। সে এখনও আশা করে বাবা ঈদে তার জন্য নতুন জামা কিনে নিয়ে আসবেন। বাবার কাছ থেকে সে অনেকগুলো নতুন টাকা পাবে। ঈদের দিনে তার বাবার সঙ্গে ঘুরতে বের হবে। কারণ মনিষা ছিল তার বাবার খুবই আদরের সন্তান।
লিয়াকত আলীর শ্বশুর সামছুল হক মল্লিক ফোনে জানান, দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কিছু নেই। আমাদের কথা লিখে আর কী হবে। তিনি বলেন, এসব জিজ্ঞাসা করলে আরও কষ্ট বাড়ে।
তিনি আরও জানান সেসময় ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এসে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও পরে আর কোনো খোঁজ রাখেননি। তবে যারা বেঁচে নেই তাদের অবস্থা যে মৃত্যু যন্ত্রণার চেয়ে ভালো তা বলার কোনো উপায় নেই।
আগে যে বাবা ছেলে-মেয়ের জন্য ঈদে অনেক কেনাকাটা করতেন, এবার তিনি হয়তো সন্তানদের কিছুই দিতে পারবেন না। মমতাময়ী মায়ের জন্য কেনা হবে না কাপড়, বাবার পাঞ্জাবি। আর প্রিময়তম স্ত্রীর জন্য হলুদ রঙে শাড়ি।
পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীরা ক্ষোভ ও হতামায় ক্রমেই ঝিমিয়ে পড়ছে। এখন তারা নিজেদের অসহায়ত্বের কথাও প্রকাশ করতে চান না। বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে এক সময় টাকা হারানোর দুঃখের কথা বলতাম আপনাদের। কিন্তু, এর কোনো ফল পাইনি। উল্টো একের পর এক ধস আমাদের ধংস করে দিয়েছে। সামাজিক-পারিবারিক সব সম্মান খুইয়েছি।’
ঈদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সোহাগ সরদার নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘ভাই আগে ভালোই ঈদ কাটতো। এখন যে অবস্থা, তাতে ঈদ বলতে কিছু আছে বলে মনে হয় না। যেই হাউজে ট্রেড করতাম সেখান থেকে প্রতিনিয়ত টাকা সম্বয় করার তাড়া দিচ্ছে। যেখানে আমার কয়েক লাখ টাকা আটকে আছে, সেখানে নতুন করে টাকা দেওয়া অসম্ভব। এখন চিন্তা, যদি সব শেয়ার বিক্রি করে দেয় তাহলে আমি পথের ফকির হয়ে যাব। তাই ঈদের কথা আমার মাথাতেই আসে না।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ আক্ষেপ করে একটি মার্চেন্ট ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বলছিলেন, ভাই আরতো পারছি না। এখন কী করবো? টাকা পয়সা যা কিছু ছিল শেষ হয়ে গেছে। এখন একটা চাকরি দেন।
এভাবেই ভেঙ্গে পড়ছেন বিনিয়োগকারী নেতারা। তারা ঈদ তাদের জন্য আর কোনো বিশেষত্ব নিয়ে আসছে না। আসছে একবুক বেদনা নিয়ে। এমনই হাজার হাজার পরিবার বিভিন্নভাবে নিঃস্ব হয়েছেন পুঁজিবাজারে। তাদের প্রায় সবার এক অবস্থা।