আর সব শুক্রবারের চেয়ে রমজানের শেষ শুক্রবার সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইসলাম ধর্মে এই শুক্রবারকে জুমাতুল বিদা বলা হয়েছে। আর এই দিনটির গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে অন্যান্য শুক্রবারের চাইতেও অনেক অনেক বেশি। এই দিন রমজান মাসকে বিদায় জানানোর কথাও মনে করিয়ে দেয়। আর তাই তো মসজিদে মসজিদে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের এক অনন্য সম্মিলনের অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায় সবখানে।
জুমাতুল বিদায় দলে দলে মুসল্লিরা ছুটবেন মসজিদ পানে। নাজাতের প্রত্যাশায় মন খুলে ক্ষমা চাইবেন মহান আল্লাহর দরবারে। অশ্রুজল ভাসিয়ে দিয়ে সুন্দর আগামীর প্রার্থনায় মশগুল থাকবেন সব মুসলমান।
হাদিসের সূত্রে জানা যায়, রমজানে লাইলাতুল ক্বদরকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে আর গুরুত্বপূর্ণ দিনের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে জুমাতুল বিদাকে। এদিন ক্ষমা বা নাজাতের দিন হিসেবেও খ্যাত।
রাজধানী ঢাকাতেও জুমাতুল বিদা পালিত হবে যথাযোগ্য মর্যাদায়। জাতীয় মসজিদে বাইতুল মোকাররমে জুমার খোতবায় বিশেষ বয়ান করবেন জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা সালাহউদ্দিন। এছাড়া নগরীর অন্যান্য মসজিদগুলোতেও থাকবে ধর্মীয় বয়ান, মিলাদ, মাহফিল ও দোয়া।
জানা যায়, জুমাতুল বিদায় একটি বিশেষ মুহূর্তে আল্লাহর দরবারে বিনয়ের সঙ্গে প্রার্থনা করলে তিনি সেই প্রার্থনা কবুল করে নেন। তবে সময়টি হাদিসে মতভেদ রয়েছে। কোনো কোনো হাদিসে সময়টিকে ফজরের পর উল্লেখ করলেও জুমার নামাজের দুই খোতবার মধ্যবর্তী সময়কে বোঝানো হয়েছে। এই সময়টিতে আল্লাহ তার বান্দার গুনাহ মাফের জন্য প্রস্তুত থাকেন। কোনো বান্দা খাঁটি মনে প্রার্থনা করলে তিনি তা কবুল করেন।
এদিকে জুমাতুল বিদা উপলক্ষে মসজিদগুলোতে মুসলমানদের এক অনন্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও ছুটে আসবেন মসজিদে। সম্মিলিতভাবে জুমার নামাজ আদায় করতে গিয়ে অনেক মসজিদেই স্থানের সংকট দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা প্রকট। প্রতিবছরই এমন ঘটে আসছে।
রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন মসজিদে জুমাতুল বিদা সঠিকভাবে পালন করার সুবিধার্থে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব মসজিদের সামনের অংশে আলাদা সামিয়ানা টানানো হয়েছে। নিচেও বিছানো হয়েছে কার্পেট কিংবা জায়নামাজ। নগরীরর বিভিন্ন মসজিদ কমিটি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পুরোনো ঢাকার লালবাগের বাসিন্দা খন্দকার সাইফুল ইসলাম বলেন, “জুমার মানে হচ্ছে সমাবেশ। আর জুমাতুল বিদা হচ্ছে শেষ সমাবেশ। রমজান মাসের এই শেষ সমাবেশে সমস্ত মুসলমান মসজিদে সমবেত হন। একে অপরের সঙ্গে দেখা হয়। সাওয়াব লাভের সঙ্গে সঙ্গে ভ্রাতৃত্বও সুদৃঢ় হয় এই দিনে।”
তবে ঢাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে অনেকেই ছুটবেন বাইতুল মোকাররমে। বাইতুল মোকাররমকে ঘিরে তাই নিরাপত্তাবলয়কে জোরদার করা হয়েছে বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে মসজিদের বাইরেও ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানা যায়। প্রতিবছর জুমাতুল বিদার সময় ভেতরে জায়গা না পেয়ে বাইতুল মোকাররমের চারপাশের সড়কেও হাজারো মুসল্লিকে নামাজ আদায় করতে হয়। এবারেও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে মন্তব্য করেন মসজিদটির নিয়মিত মুসল্লি মাওলানা মোস্তফা কামাল।
জুমাতুল বিদার অনন্য এই সম্মিলন থেকেই আল্লাহর কাছে চাওয়া হবে দেশ ও জাতির কল্যাণ। নাজাত লাভের এই দিনটি সঠিকভাবে পালন করতে পারবেন বলেই আশা করছেন মুসল্লিরা।