‘রিবোন রেটিং’ ফ্লপ: যশোরে পুরোনো পদ্ধতিতেই পাট পচাচ্ছে কৃষক

‘রিবোন রেটিং’ ফ্লপ: যশোরে পুরোনো পদ্ধতিতেই পাট পচাচ্ছে কৃষক

দু’বছর আগে চালু হওয়া পাট পচানোর নতুন ‘রিবোন রেটিং’ পদ্ধতি আজও কৃষকের মন যোগাতে পারেনি। এ পদ্ধতি চালু হলেও কৃষক এখনও আগের পদ্ধতিতেই পাট পচাচ্ছেন।

যশোরসহ এর আশপাশের এলাকার কৃষকরা এখনও পুরোনো ওই পদ্ধতিতে পাট পচাচ্ছেন। ফলে এ এলাকায় কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা দেড় হাজার ‘রিবোনার মেশিন’ অব্যবহৃত হিসেবেই কৃষকের ঘরে পড়ে রয়েছে।

শুধু ‘রিবোনার মেশিন’ নয়, সেই সঙ্গে কৃষকদের এ পদ্ধতি ব্যবহারে উৎসাহিত করতে প্রদান করা হয় প্রায় দেড় কোটি।

এলাকার কৃষকরা বলছেন, নতুন এ পদ্ধতিতে কৃষকদের আগ্রহী করতে কৃষি কর্মকর্তারা প্রথম দুই বছর তোড়জোড় চালালেও পরবর্তীতে তারা আর বিষয়টির দিকে নজর দেননি।

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ২২ হাজার ৯শ’ ৬  হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাটচাষ হয়েছে শার্শা উপজেলায়। এ উপজেলায় পাটচাষ ৪ হাজার ৫শ’ ২০ হেক্টর জমিতে ।

আর সবচেয়ে কম অভয়নগর উপজেলায়। এখানে মাত্র ৪১ হেক্টর জমিতে।

এছাড়া সদর উপজেলায় ২ হাজার ৪৫ হেক্টর, ঝিকরগাছায় ৩ হাজার ৮শ’ ৮০, চৌগাছায় ১ হাজার ৮শ’ ৫০, বাঘারপাড়ায় ২ হাজার ৫শ’ ১০, মনিরামপুরে ৪ হাজার ১০ ও কেশবপুর উপজেলায় ৪ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে এবার পাটের আবাদ হয়েছে।

আর এ বিপুল পরিমাণ জমিতে আবাদকৃত পাটের প্রায় পুরোটাই পচাতে কৃষকরা সেই পুরোনো পদ্ধতিই ব্যবহার করছেন। স্বল্প পানিতে পাট জাগ দেওয়ার নতুন পদ্ধতি ‘রিবোন রেটিং’ গ্রহণে কৃষকদের উৎসাহিত করতে কৃষি কর্মকর্তারা ব্যর্থ হওয়ায় ভেস্তে গেছে সরকারের সব পরিকল্পনা।

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী অহিদুজ্জামান বলেন, নতুন উদ্ভাবিত ‘রিবোন রেটিং’ পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করতে সরকার যশোর জেলার ৮ উপজেলায় ২০১০ সালে ৮শ এবং ২০১১ সালে ৭শ ৩০টি ‘রিবোনার মেশিন’ বিনামূল্যে প্রদান করে।

একই সঙ্গে এ পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য ৭৮ হাজার কৃষককে জনপ্রতি ২শ টাকা করে এক কোটি ৫৬ লাখ টাকা দেওয়া হয়। কাঁচা পাট থেকে আঁশ ছাড়িয়ে নিয়ে স্বল্প পানিতে গর্ত খুঁড়ে জাগ দেওয়ার এ নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে কৃষকদের অবহিত করতে দেওয়া হয় প্রশিক্ষণও।

তিনি আরও বলেন, যশোরের ৮ উপজেলায় দেওয়া ১৫শ ৩০টি ‘রিবোনার মেশিনের’ মধ্যে ১শ ২০টির মত কাজে লাগানো হচ্ছে। অবশিষ্ট ১২ শতাধিক যন্ত্র কৃষকের বাড়িতে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।

ঝিকরগাছা উপজেলার পাল্লা গ্রামের শাহাবুদ্দিন বলেন, দু’তিন বছর আগে ‘রিবোন রেটিং’ পদ্ধতিতে পাট পচানোর জন্য কৃষি কর্মকর্তারা তোড়জোড় চালালেও এখন আর কেউ এ পদ্ধতির কথা বলে না। তাই সবাই আগের মত পানিতে পাট পচাচ্ছে।

শার্শা উপজেলার খলিশাখালি গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এবার পাটের আবাদ কম হয়েছে। আর এখন ভরা বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক। তারপরও তারা ‘রিবোন রেটিং’ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন না।

তিনি আরও বলেন, তাদের এলাকার কৃষকরা মাথায় করে পাট নিয়ে গিয়ে পাশের বাটকের বিলে পচাচ্ছেন।

শার্শার পাকশিয়া গ্রামের কৃষক ময়না মিয়া বলেন, ‘রিবোন রেটিং’ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।

এ ব্যাপারে কৃষি অফিস তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করেনি। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তো কৃষকরা কথাই বলতে পারেন না এমনও অভিযোগ তার।

অর্থ বাণিজ্য