সর্বশেষ দরপত্রেও এয়ার আটলান্টার অফার মনপুত না হওয়ায় হজ ফ্লাইট লিজ নেওয়া নিয়ে বেকায়দায় বিমান। আসন্ন হজ মওসুমের আগে আর কোনো দরপত্র আহবানের সুযোগ না থাকায় বড় সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে বিমান।এতে অনেকটা দিশেহারা হয়ে মঙ্গলবার বিকেলে জরুরি বোর্ড সভায় বসেছে বিমানের পরিচালনা পর্ষদ। সভার এজেন্ডা একটাই— হজ ফ্লাইট ।
বিমানের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গত রোববার সর্বশেষ ডাকা দরপত্রে এয়ার আটলান্টাসহ মোট পাচঁটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এদের মধ্যে চারটিকে নন রেসপন্সিভড করা হয়েছে। এয়ার আটলান্টাকে নন রেনপন্সিভড করা না হলেও প্রতিষ্ঠানটি প্রতি ঘন্টায় ৯৫০০ ডলারের যে অফার দিয়েছে তা বিমানের মনপুত হয়নি। কারণ এটি দরপত্রে টিকে যাওয়া একমাত্র প্রতিষ্ঠান কাবোর উড়োজাহাজের তুলনায় আসন সংখ্যা অনেক কম। এয়ার আটলান্টার নিজস্ব কোনো কেবিন ক্রু না থাকায় বিমানকেই তা দিতে হবে। এসব বিবেচনা করলে এয়ার আটলান্টার দর এভিকো ও কাবোর চেয়েও অনেক বেশি পড়বে।
তবে বিশ্বস্ত একটি সুত্র জানায়, বিমান চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব) জামাল উদ্দিনের `টোল কালেক্টর` হিসেবে পরিচিত পরিচালক উইং কমান্ডার আসাদ বৈঠক চলার পূর্ব মুহুর্তে এয়ার আটলান্টার অফারকে রেসপন্সিভড করেন এবং তা বৈঠকে অনুমোদন করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করার জন্য ৫ জন সদস্যকে রাজী করাতেও সক্ষম হন ।
আর এ নিয়ে তর্ক-বিতর্কের মুখেই ডাকা হয়েছে জরুরি বৈঠক।
বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত হতে পারে, তার অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্টরা ইঙ্গিত দিয়েছেন- এয়ার আটলান্টা বা কাবো কোনোটাই নয়, বিমানের নিজস্ব জাহাজ ৭৭৭ দিয়ে হজ মিশন সম্পন্ন করা যায় কিনা সেটা নিয়েই চুলচেরা বিশ্লেষণ করার জন্যই জরুরি সভা।
বৈঠক সূত্রে নিশ্চিত হয়েছে বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভার মধ্য থেকেই জানানো হচ্ছে এ তথ্য।
জানা গেছে, বৈঠকে উপস্থিত অধিকাংশ সদস্যই হজ ফ্লাইট নিয়ে বিমানের অব্যবস্থাপনা ও কমিশন-বাণিজ্যের জন্য বারবার দরপত্র ডেকে সময় নষ্ট করার জন্য বিমান চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব) জামাল উদ্দিন আহমেদ তোপের মুখে পড়েছেন। তার ভূমিকাকে বিতকির্ত আখ্যা দিয়ে সেজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সদস্যরা। চেয়ারম্যান কেন এয়ার আটলান্টার প্রতি এত দুর্বল সেটাও নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেছেন বৈঠকে উপস্থিত অনেকেই।
সূত্রটি জানায়, দরপত্রের শর্তানুযায়ী এখন একমাত্র কাবোকে বাদ দিয়ে নিজস্ব জাহাজ দিয়েই হজ মিশন সফল করার ব্যাপারে চেয়ারম্যান ইঙ্গিত দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে লন্ডন রুটের ৭৭৭ জাহাজ দিয়ে হাজী বহন করার মতো সিদ্ধান্ত হতে পারে। যাকে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী ওই কর্মকর্তা ‘আরেকটি কা-জ্ঞানহীন সিদ্বান্ত’ বলেই আখ্যা দিয়েছেন।
তিনি জানান, নিজের ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নিতে চেয়ারম্যান কজন সদস্যকে মিটিং শুরুর আগেই ব্রিফিং করে রেখেছেন। তবে তা তাৎক্ষণিকভাবেই ফাঁস হয়ে যায়। এতে বিমানের একজন পরিচালক মন্তব্য করেন এটা হবে আরেক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। কারণ এতে একদিকে লন্ডন রুটের ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়বে তা বিমান সহসা কাটিয়ে উঠতে পারবে না ।
এরই মধ্যে এ রুটের আগামী তিনমাসের টিকিট অগ্রিম বিক্রি করা হয়েছে। এসব যাত্রী নিয়ে সিডিউল বিপর্যয়ের মুখে পড়ার আশংকা খুবই বেশি । তাছাড়া লং- রুটের ৭৭৭ জাহাজ দিয়ে যদি এখন সৌদির মতো শর্ট রুটে ব্যবহার করা হয় এতে জাহাজেরও অনেক ক্ষতি হবার আশংকা রয়েছে। প্রতি সাইক্লিং বিনের বিষয়টি আমলে নিলে এটা আসলেই জাহাজের জন্য মোটেই কল্যাণকর নয় বলেও মত বিমান সংশ্লিষ্টদের।
সূত্র জানায়, এই সঙ্কট মোকাবিলা করার জন্য একটি এয়ার বাস লিজ নিয়ে আপাতত তিনমাস লন্ডন রুট সামাল দেওয়া যায় কিনা সেটাও খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন বিমান চেয়ারম্যান।
অপর দিকে বিমানের এ সিদ্ধান্তকে হাস্যকর ও অযৌক্তিক বলে মনে করছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা ।