ঈদ উপলক্ষে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে চাঁদাবাজি

ঈদ উপলক্ষে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে চাঁদাবাজি

ঈদ উপলক্ষে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে গণহারে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কুমিল্লা বিশ্বরোড থেকে সিলেট ও চট্টগ্রাম রুটে বাস ট্রাক কাভার্ড ভ্যান এমনকি প্রাইভেটকার থেকেও চাঁদা নেওয়া হচ্ছে।  রাত ১২টার পর থেকে সেহরির আগ পর্যন্ত এই চাঁদাবাজি চলছে। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় তরুণরা মোটরসাইকেল নিয়ে মহাসড়কে চাঁদাবাজি করে চলেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে চাঁদাবাজিও বাড়ছে। অনুসন্ধানে চাঁদাবাজির সত্যতা বেরিয়ে এসেছে। তবে হাইওয়ে পুলিশ বলছে, এ ধরনের চাঁদাবাজির ঘটনা তাদের জানা নেই।

সরেজমিন চাঁদাবাজির চিত্র
রোববার রাত ১০টা। সায়েদাবাদ থেকে কুমিল্লা উদ্দেশে তিশা পরিবহনের একটি বাস যাত্রী নিয়ে রওনা হলো। রাত সাড়ে ১২টার দিকে কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের একটু সামনে সিলেট মহাসড়কের পাশে চোখে পড়ে চাঁদাবাজির দৃশ্য। সারারাত গাড়ি চলাচলের কারণে রাস্তার পাশে দোকানপাট সব সময়-ই খোলা থাকে।

একটু এগিয়ে যেতে দেখা যায়, চা বিক্রেতা আকবর হোসেনের দোকানের পাশে ৬টি মোটরসাইকেল করে ১৫ জন যুবক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে চা-সিগারেট খাচ্ছে। পাশেই দাঁড়ানো হাইওয়ে পুলিশের টহল গাড়ি। পাশে দাঁড়ানো হাইওয়ে পুলিশের দুই কনস্টেবল। এর মধ্যে একজনের নাম মোরশেদ।

চা দোকানি আকবর তরুণদের বলেন, “এরা কারা আমরা বলতে পারি না।” পরক্ষণেই তিনি ভয়ে ভয়ে জানালেন তারা রাস্তায় চাঁদাবাজি করছে।

আকবরের সঙ্গে গল্পের সময়েই তিনটি মোটরসাইকেল করে ৭/৮ জন তরুণ একটি কাভার্ড ভ্যানকে ধাওয়া করে। মিনিট ১৫ পরে তারা আবার আগের জায়গায় ফিরে আসে। ফিস ফিস গলা শোনা যায় “দুই হাজার টাকার বেশি দেয়নি।”

আকবরসহ দোকানে থাকা বেশ কয়েকজন লোক জানান, গত কয়েকদিন ধরে ১০/১৫ জন যুবক রাত ১২টার পরে রাস্তায় এসে বাস-ট্রাক-কাভার্ডভ্যান থামিয়ে চাঁদা নিচ্ছে। এছাড়া অনেক সময়ে প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস থেকেও তারা টাকা নিচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, ১০ দিন আগেও এগুলো ছিল না। ৩/৪ দিন ধরে এই চক্রটি রাস্তায় আসছে। পুলিশের উপস্থিতি তারা এ কাজ করলেও পুলিশও কিছু বলছে না। ঈদ উপলক্ষে এই চাঁদাবাজি বলে তারা জানান।

তাদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া যায় আরো ভয়ংকর তথ্য। “এ ধরনের মোটরসাইকেল পার্টি সারা বছর এই রোডে থাকে। এরাই ঢাকা থেকে আসা চট্টগ্রামগামী রফতানিযোগ্য পোশাক কাভার্ড থেকে নামিয়ে নেয়। এই ঘটনার সঙ্গে কিছু অসাধু কাভার্ড ভ্যান চালকও জড়িত।”

পদুয়াবাজার বিশ্বরোডে একই ধরনের আরো একটি গ্রুপ সক্রিয়। তিনটি মোটরসাইকেল করে ৭/৮ জনের মতো একটি দল রহিমের দোকানে চা খাচ্ছে। সোয়া ২টার দিকে তারা সেখান থেকে চট্টগ্রাম মহাসড়কের দিকে এগিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন বলেন, “পুলিশের সঙ্গে এদের যোগসাজোশ রয়েছে। নইলে পুলিশের সামনেই এমন করতে পারে না। প্রায় প্রতিটি যানবাহনে এই চক্র চাঁদাবাজি করছে।”

রাত তিনটার দিকে সিলেট থেকে চাঁদপুরগামী সততা পরিবহনের একটি বাস যাত্রা শুরু করে। পথে কথা হয় বাসটির সুপারভাইজার আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, “কি বলবেন ভাই, এমনিতেই আমাদের রাস্তায় চলতে হলে চাঁদা দিতে হয়। গত কয়েকদিন থেকে এই চাঁদাবাজির মাত্রা আরো বেড়েছে। চাঁদার পরিমাণ ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রায় প্রতিটি গাড়িতে এইভাবে চাঁদাবাজি হচ্ছে। ঈদে এই চাঁদাবাজির মাত্রা বেড়েছে।”

মহাসড়কে এই চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা পশ্চিমের এসপি রেজাউল করিম বলেন, “এই ধরনের ঘটনা আমার জানা নেই। তবে যেহেতু আপনি বলছেন, আমি বিষয়টি দেখবো।”

বাংলাদেশ