উপাচার্যের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) যাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ক্যাম্পাসে পৌঁছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করবেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এবং মন্ত্রীর একান্ত সচিব আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী শুক্রবার সকাল ৮টার ফ্লাইটে ঢাকা থেকে রওনা হবেন। দুপুরের দিকে তিনি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন।’
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র মোহাইমিনুল বাশার রাজ জানান, অধ্যাপক জাফর ইকবালের মাধ্যমে তারা মন্ত্রীর সফরের কথা জেনেছেন। এ ছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকেও মন্ত্রীর আসার কথা জানানো হয়েছে। মন্ত্রীর এই সফরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণের ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে।
এদিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার স্থানে হাত দিয়ে প্রতীকী রক্তের ছাপ আঁকেন শিক্ষার্থীরা।
এরইমধ্যে প্রক্টর ড. মো. আলমগীর কবিরকে অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর নতুন প্রক্টর হিসেবে ইংরেজী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ইশরাত ইবনে ইসমাইলকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
গত ১৩ জানুয়ারি শাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদে লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন হলের ছাত্রীরা।
এই দাবিতে আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জানুয়ারি বিকেল ৫টায় তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ ৩০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে।
শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় উপাচার্যকে দায়ী করে তার পদত্যাগ দাবি করে আমরণ অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
টানা সাতদিন পর ২৬ জানুয়ারি অনশন ভাঙেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এরপর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, নাটক, খেলাধুলার মাধ্যমে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রক্টর, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালকের অব্যাহতি ছাড়া আর কোনো দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে আবারও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।