১৮ বছর পর মন্ত্রণালয়ের আর্থিক ব্যয়ের হিসাব তলব

১৮ বছর পর মন্ত্রণালয়ের আর্থিক ব্যয়ের হিসাব তলব

দীর্ঘ আঠার বছর পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আর্থিক ব্যয়ের হিসাব তলব করেছে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির ৯৯তম বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ২০০৫-০৬ অর্থবছরের আর্থিক হিসাব পর্যালোচনা করেছে। কমিটির পরবর্তী বৈঠকগুলোতে এসব হিসাব পরীক্ষা করা হবে।

বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উন্নয়ন কাজের চেয়ে অনুন্নয়ন কাজের ব্যাপারে বেশি আন্তরিক ছিলো। এ মন্ত্রণালয় নিজেদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ করা টাকা শতভাগেরও বেশি ব্যয় করেছে। একটি ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১১৪ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে। উন্নয়ন কাজে ব্যয়ের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছিলো না। যে কারণে বাজেটে বরাদ্দ করা মোট অর্থের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত উদ্বৃত্ত থেকে গেছে।

কার্যবিবরণী থেকে দেখা গেছে, মূল মঞ্জুরি নেওয়ার পর তাতে কাজ হবে না জানিয়ে সম্পূরক বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বছর শেষে মন্ত্রণালয় মূল মঞ্জুরির ৭০ শতাংশই খরচ করতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্তত ১০টি প্রকল্পে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজন নেই জানিয়ে মূল মঞ্জুরি কমানোর পরও শতভাগ বরাদ্দ ব্যয় করতে পারেনি।

উল্লেখ্য, সংসদের কার্য প্রণালী বিধি অনুযায়ী, সরকারি হিসাব কমিটির মূল কাজ হলো সংসদে অনুমোদিত সরকারের বার্ষিক আর্থিক হিসাব পরীক্ষা করা। একই সঙ্গে কমিটি মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের প্রতিবেদন পরীক্ষা এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম পরীক্ষা করে তা দূর করার জন্য সুপারিশ করতে পারবে।

সংসদ সচিবালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে (পঞ্চম সংসদে) সরকারি হিসাব কমিটি সর্বশেষ মন্ত্রণালয়গুলোর আর্থিক হিসাব পরীক্ষা করেছিল। এরপর সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদের পৌনে চার বছরে কখনো মন্ত্রণালয়গুলো আর্থিক ব্যয়ের হিসাব পরীক্ষা করেনি কমিটি। এ সময়ে কমিটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের হিসাব সম্পর্কিত অডিট আপত্তি পর্যালোচনা করেছে।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সাতটি প্রতিষ্ঠানের ১৭টি খাতের বাজেট বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে কমিটির সদস্যরা উন্নয়ন কাজের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বরাদ্দ করা টাকা ব্যয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার অভাব ছিল বলে অভিমত দেন।

কমিটির সদস্যরা বলেন, “মঞ্জুরি বাড়ানোর পর মূল মঞ্জুরির অর্ধেক টাকাও খরচ করতে না পারাটা আর্থিক শৃঙ্খলার পরিপন্থি।”

এছাড়া বৈঠকে অতিরিক্ত ব্যয় কিভাবে হয়েছে এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত সে বিষয়ে ১৫ দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়কে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও বাজেটে বরাদ্দকৃত অনুমোদিত অর্থ অব্যয়িত থাকলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অযোগ্যতার অভিযোগে অভিযুক্ত করার সুপারিশ করা হয়।

সূত্র জানায়, কমিটির সদস্যদের কেউ কেউ শুধু বিগত চার দলীয় জোট সরকারের আমলের হিসাব নিয়ে আলোচনা করার পক্ষপাতী নন। তারা বর্তমান সরকারের তিন অর্থবছরের হিসাব নিয়েও আলোচনা করতে চান।

মঙ্গলবার কমিটির শততম বৈঠকেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব নিয়ে আলোচনা হবে।

কমিটির সভাপতি ড.মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সদস্য মো. আলী আশরাফ, টি আই এম ফজলে রাব্বি চৌধুরী, ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, খান টিপু সুলতান, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও ফরিদা আখতার অংশ নেন।

বাংলাদেশ