এগিয়ে আসছে ঈদ উল ফিতর। ঈদ কেনাকাটার ভীড়ে ব্যস্ততাও বাড়ছে মার্কেট, বিপনীবিতান, দোকানপাট এমনকি ফুটপাতগুলোতেও।
শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় ভীড় একটু বেশিই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সকাল থেকেই রাজধানীর শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে ভীড় লেগেই আছে। দুপুরে জুম্মার নামাজের সময় ভীড় একটু কমলেও নামাজের পর আবার ভীড় বাড়ছেই। সময় যতো গড়াচ্ছে, ততোই জমজমাট হয়ে উঠছে কেনাকাটা।
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, আজিজ সুপার মার্কেট, চাঁদনী চক, রাপা প্লাজা, এআর প্লাজা, এলিফ্যান্ট রোডের দোকানপাট, ফার্মগেটের সব মার্কেট, ফুটপাথ, সেজান পয়েন্ট, গুলিস্থানের পুরো এলাকা, মিরপুর মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, খিলক্ষেতের রাজউক ট্রেড সেন্টার, উত্তরার নর্থ টাওয়ার, রাজলক্ষী কমপ্লেক্সসহ মার্কেটগুলোতে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
শুক্রবার ২১ রমজান চলছে। ঈদের বাকি আর মাত্র কয়েকটা দিন। অধিকাংশ চাকরিজীবীরা বেতন-বোনাস পাওয়ায় তারা কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন। অন্যদিনের তুলনায় আগেভাগে সকাল ১০টা থেকেই তাই কেনাকাটা শুরু হয়েছে।
দোকানদাররা জানান, ঈদকে সামনে রেখে এবারো নতুন কিছু কেনার ধুম পড়েছে রোজার শুরু থেকেই। যতোই দিন যাচ্ছে, ততোই ক্রেতাদের ভীড় বাড়ছে। রোজার শেষভাগে এসে এখন কেনাকাটা জমে উঠেছে। ঈদের অগের দিন পর্যন্ত এরকম ভীড় থাকবে বলেও আশাবাদ তাদের।
সরেজমিনে ঢাকার অভিজাত মার্কেট ও বিপণী বিতান থেকে শুরু করে ফুটপাতে কেনাকাটায় মানুষের ঢল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিটি মার্কেটে মানুষের ভিড় লক্ষ্যণীয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। ক্রেতাদের ভীড় সামাল দিতে অনেক মার্কেটেই দোকানিদের হিমশিম খেতে দেখা গেছে। সন্ধ্যার পর ভীড় আরো বাড়বে বলেও জানান দোকানিরা।
দেশি কাপড় ও ডিজাইনারদের তৈরি পোশাকের বুটিক হাউসগুলোতে ভীড় বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বেশিরভাগ ক্রেতাই পছন্দের জামা, শাড়ি, পাঞ্জাবি কিনছেন।
মহাখালীর নাখালপাড়া থেকে নিউমার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে সপরিবারে এসেছিলেন বাবুল পাটোয়ারী। তিনি জানান, ‘‘রোজার শেষের দিকে ভীড় হবে এবং দামও বেড়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কার কথা চিন্তা করে অনেকেই এখনই কিনে নিচ্ছেন পছন্দের সামগ্রী। শুক্রবার সকালে শপিং করতে আসা লোকদের যানজটে আটকা থাকতে হয়েছে অনেক সময়।’’
ঈদ শপিংয়ে নগরীর বাসিন্দারা এটাকে স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন বাবুল পাটোয়ারী।
অনেকেই আবার গ্রামের বাড়িতে ঈদের কাপড়-চোপড় পাঠানোর জন্য কেনাকাটা করছেন। একটি আবাসন কোম্পানির কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘১৬ তারিখ ছুটি পাবো। তাই এখন পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করে তাদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি। সঙ্গে পাঠাবো বাড়ির লোকজনদের জন্যও পোশাক-আশাক।’’
এদিকে ছুটির দিন হওয়ায় চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ সব বয়সী-পেশার মানুষকে দেখা গেছে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় কাটাতে। রাস্তা-ফুটপাতজুড়ে ঈদের কেনাকাটা জমে ওঠায় নগরীতে ছুটির দিনেও যানজটও ছিল মাত্রাতিরিক্ত। ফার্মগেট, এলিফ্যান্ট রোড, পান্থপথ, শাহবাগ, উত্তরা, গুলিস্থানসহ প্রায় এলাকার রাস্তার উভয়পাশে শত শত গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
নিউমার্কেট এলাকায় প্রায় অচলাবস্থা ছিলো সকাল থেকেই। অনেকই গাড়ি বা মোটরসাইকেল নিয়ে কেনাকাটা করতে এসে গাড়ি পার্কিং করার জায়গা পাননি। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে গাড়ি পার্কিংয়ের ফলে যানবাহন চলাচল করতে অসুবিধা তৈরি হয়েছে। গুলিস্থানের কোনো কোনো রাস্তায় পার্কিং করার মতোও জায়গা দেখা যায়নি।
চাঁদনী চক মার্কটের সিল্ক ফ্যাশনের মালিক আয়াত আলী বলেন, পার্কিং করার জায়গা না থাকার ফলে অনেক মানুষ এখানে কেনাকাটা করতে আসতে চান না। তারা বসুন্ধরা সিটি বা গুলশানের মার্কেটগুলোতে চলে যান।
ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার ঈদের ছুটি কয়েকদিন আগে শুরু হবে বলে একটু আগেভাগেই জমে উঠেছে ফুটপাথের ঈদের বাজার। সাধারণত নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষেরা ফুটপাথের ক্রেতা। তবে সময়ের পরিক্রমায় মধ্যবিত্তরাও তুলনামূলক কম দামে পণ্য কেনার জন্য এখন ফুটপাথমুখী হয়েছেন। রাজধানীর বিলাসবহুল শপিং মলগুলোতে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্যও ঈদের কেনাকাটা করা ক্রমশ দুঃসাধ্য হয়ে পড়ায় তারাও ঈদের কেনাকাটা করতে ফুটপাথকে বেছে নিচ্ছেন।
‘‘রমজান মাসের শুরু থেকেই বেচা-কেনা ভালো। ঈদ যতোই এগিয়ে আসছে, বেচা-কেনা ততোই বৃদ্ধি পাচ্ছে’’ বলে জানান বায়তুল মোকাররম মসজিদের পশ্চিম পাশে ফুটপাথে পসরা সাজিয়ে বসা পাঞ্জাবির দোকানি আতিয়ার রহমান। তিনি আরো জানান, শুক্রবার বলে বিক্রি বেশি হচ্ছে। তবে এখন থেকে চাঁদরাত পর্যন্ত বেচা-কেনা সবচেয়ে বেশি হবে। ফুটপাতের কেনাকাটা ঈদের কয়েকদিন আগে বেশি হয় বলে উল্লেখ করে ছুটির দিন ছাড়াও এখন প্রতিদিনই বিক্রি বাড়বে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।