ব্রিটেনে ইইউ দেশের অর্ধেক শিক্ষার্থীই শিক্ষাঋণ পরিশোধে ব্যর্থ

ব্রিটেনে ইইউ দেশের অর্ধেক শিক্ষার্থীই শিক্ষাঋণ পরিশোধে ব্যর্থ

ব্রিটেনে পড়তে আসা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ভূক্ত দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই শিক্ষাঋণ পরিশোধ করতে পারছে না বা করছে না। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, ওই শিক্ষার্থীরা কার্যত ফ্রি শিক্ষা সুযোগ পাচ্ছে যেখানে ব্রিটেনের শিক্ষার্থীদের ফি বাবদ এখন বছরে গুণতে হবে ৯ হাজার পাউন্ড।

সর্বশেষ পরিসংখ্যানে জানা যাচ্ছে, বিটেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা ইউরোপীয় শিক্ষার্থীদের অনাদায়ি ঋণ গত ১২ মাসে দ্বিগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ১০ লাখ পাউন্ডে।

এদের মধ্যে ৪২ শতাংশই এমন যে, ঋণ পরিশোধের জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে সাবেক টোরি মন্ত্রিসভার সদস্য পিটার লিলি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “ইউরোপের সবচেয়ে মেধাবী এবং ভাল শিক্ষার্থীদের বিনা খরচে শিক্ষা সুযোগ দিয়ে ইইউ’র বাকি দেশগুলোর শিক্ষাখাতে ভর্তুকি দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে উপনীত হয়েছে ব্রিটেন।”

এমন অবস্থায় ব্রিটেনের টিউশন ফি আগামী মাসে এক লাফে ৯ হাজার পাউন্ডে উঠে যাচ্ছে। যেখানে বাৎসরিক টিউশন ফি ছিল ৩ হাজার ৩শ’ ৭৫ পাউন্ড। এ কারণে বাইরের শিক্ষার্থীদের দেওয়া শিক্ষাঋণ অনাদায়ি থেকে যাওয়ায় ব্রিটেনের করদাতাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

২০০৬ সাল থেকে ইইউ সদস্যভূক্ত দেশের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মেটানোর জন্য ব্রিটেনে কম সুদে শিক্ষাঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়। কিন্তু এ ঋণ আদায়ের জন্য সুস্পষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকার কারণে এখন সমস্যায় পড়ছে প্রশাসন।

ব্রিটেনের স্থানীয় স্নাতকদের দেওয়া ঋণ আদায়ের একটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি রয়েছে। তাদের পেস্লিপ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঋণের টাকা কেটে নেওয়া হয়। কিন্তু বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য এমন কোনো ব্যবস্থা নেই।

এমনকি ব্রিটেনের বাইরে যেসব ব্রিটিশ স্নাতক চাকরি করেন তাদেরও আয়ের বিস্তারিত তথ্য সরকারের কাছে পাঠাতে হয় এবং ঋণ পরিশোধের জন্য সরাসরি হিসাব খুলতে হয় অথবা অনলাইনে পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হয়।

এ ব্যাপারে ব্রিটেনের পার্লামেন্টে এক প্রশ্নের লিখিত জবাবে বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড উইলেটস বলেন, “ইইউ’র ২ হাজার ৮শ’ বা ৯ শতাংশ শিক্ষার্থীই ঋণ শোধ করেননি এবং তারা বকেয়ার খাতায় নাম উঠিয়েছেন।”

একই সঙ্গে স্টুডেন্ট লোন কোম্পানির এক পরিসংখ্যানে জানা যাচ্ছে, আরো ৩৩ শতাংশ ঋণগ্রহীতা ‘বর্তমানে ঋণ পরিশোধ করছে না- পরবর্তী তথ্য পাওয়ার চেষ্টা চলছে’  এই ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।

এ  হিসাব অনুযায়ী, ইইউ’র ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থী এখনো ঋণী রয়েছে এবং পরিশোধের জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না।

যেখানে ইইউভূক্ত দেশের শিক্ষার্থীদের বকেয়া ঋণ ২০০৯/১০ সালের ৪ কোটি ৯২ লাখ পাউন্ড থেকে বেড়ে ২০১০/১১ সালে দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ১১ লাখ পাউন্ডে। একই সঙ্গে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ব্রিটেনে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের চেয়ে ইইউ’র অন্য দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও বেড়ে গেছে ব্যাপকভাবে।

সরকারি হিসাবে, গত এক দশকে ইইউ থেকে ব্রিটেনে পড়তে আসা শিক্ষার্থী বেড়েছে ৫৬ শতাংশ আর ব্রিটিশ শিক্ষার্থী বেড়েছে ২৪ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক