অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে নির্দিষ্ট সময়ে উড়োজাহাজ সরবরাহ করবে না বোয়িং কোম্পানি।
চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারী কোম্পানি বোয়িংয়ের আগামী বছরের (২০১৩) অক্টোবরে বিমানকে দু’টি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু বোয়িংকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, গেল ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে ১১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় বিমান।
বোয়িংয়ের বেঁধে দেওয়া সময়ের ৫ মাস অতিক্রান্ত হলেও বিমান এখন পর্যন্ত কোনো অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি।
এ অবস্থায় বোয়িং কোম্পানি বিমানকে তাদের উড়োজাহাজ সরবরাহের সময় ৬ মাস পিছিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে। বিমান সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
২০০৮ সালের চুক্তি অনুযায়ী, বিমানকে চারটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ সরবরাহ করার কথা বোয়িংয়ের। এর অংশ হিসেবে বোয়িং ২০১০ সালের অক্টোবর ও নভেম্বরে যথাক্রমে পালকি ও অরুণ আলো সরবরাহ করে। ২০১৩ সালের অক্টোবর ও নভেম্বর বিমানকে আরও দু’টি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ সরবরাহ করার কথা ছিল।
বিমানের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বাকি দু’টি বোয়িং ৭৭৭ আনতে প্রাক-সরবরাহ কিস্তির অংশ হিসেবে ১১৮ মিলিয়ন অর্থ বিমান এখনও সংগ্রহ করতে পারেনি। কারণ, এরই মধ্যে পালকি ও অরুণ আলো’র জন্য ব্যাংকের ঋণ সুদসহ পরিশোধ করতে বিমানকে প্রতি তিন মাসে ১২০ কোটি টাকা গুণতে হচ্ছে। তাছাড়া বর্তমানে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইনসে চলছে তীব্র অর্থ সংকট।
এ অবস্থায় বিমানের জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজটি খুবই দুরূহ হয়ে পড়েছে। শুধু তা-ই নয়, সরকার এখন পর্যন্ত বিমানকে ব্যাংক ঋণের জন্য সার্বভৌমত্ব গ্যারান্টি দেয়নি। যে কারণে বিদেশি ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণের ব্যবস্থাও করতে পারেনি। সরকার এর আগে পালকি ও অরুণ আলো আনতে সার্বভৌমত্ব গ্যারান্টি দিয়েছিল।
প্রসঙ্গত, সার্বভৌমত্ব গ্যারান্টি ছাড়া বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো কোম্পানিকে বড় অংকের অর্থ দেয় না। বিমান যদি কখনো ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয় তখন রাষ্ট্র এ অর্থ দিতে বাধ্য থাকে-এটিই সার্বভৌমত্ব গ্যারান্টি।
বিমানের একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, “সত্যি বলতে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি পাওয়ার মতো আস্থা অর্জন করতে পারছে না বিমান। এজন্য সরকারও সাহস পাচ্ছে না নতুন করে এ গ্যারান্টি দিতে।”
২০১০-১১ অর্থ বছরে বিমান ১৯৯ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। এছাড়া জ্বালানি সরবরাহ বাবদ পদ্মা অয়েল কোম্পানির কাছে তাদের দেনা রয়েছে ২৪৭ কোটি টাকা, বেবিচক পাবে ২৭০ কোটি টাকা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পাবে ৫৬ কোটি টাকা।
বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, বোয়িং ৭৭৭-৩০০ এর একটি উড়োজাহাজের দাম পড়েছে প্রায় ১১শ’ কোটি টাকা। এ ধরনের চারটি উড়োজাহাজ বিমানের বহরে যুক্ত হবে। সব মিলিয়ে বিমান মোট ১০টি উড়োজাহাজের অর্ডার দিয়েছে। এজন্য প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। এই উড়োজাহাজের টাকা পরিশোধ করতে বিমান দেশীয় ১০টি ব্যাংক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার সিন্ডিকেট ঋণ নিয়েছে। ঋণ বাবদ বিমানকে প্রতি মাসে ২০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করেও বিমানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দিক আহমেদকে পাওয়া যায়নি।
বোয়িংয়ের প্রথম উড়োজাহাজটি ২০১০ সালের অক্টোবরে ঢাকায় পৌছে। প্রধানমন্ত্রী উড়োজাহাজটির নাম দেন পালকি। এর ঠিক এক মাস পর বিমানের বহরে যুক্ত হয় বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের দ্বিতীয়টি (অরুণ আলো)।