বাবু হান্ড্রেড পার্সেন্ট, বেলাল ৯০% এবং ডা. মুজিব ৮০% আউট। তাহলে কে আসছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নতুন কমিটিতে- এ প্রশ্ন ঢাকার গুলশান অফিসেও। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি করার সর্বময় দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর।
তারেক রহমানের নির্দেশে এটি ঘটেছে বলে বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে। জানা গেছে, রমযান মাসের পরই নতুন কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারির নাম ঘোষণা করা হতে পারে।
বাংলাদেশের নানা সমস্যা সত্বেও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি গঠনের চিন্তাভাবনা থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা দূরে থাকতে পারছেন না। তাদের কাছে তদ্বির চলছে নানাভাবে। ব্যবসায়ীরাও যুক্ত হয়েছেন এ তদ্বিরে।
আর এসব তদ্বিরে যোগ হয়েছে নগদ নারায়ণ এবং তা সংগ্রহ করা হচ্ছে তারেক রহমানসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নামে। তারেক রহমানের আত্মীয়-বন্ধু ইত্যাদি পরিচয়েও চলছে এ তদ্বিরের খেলা।
বিএনপির গুলশান অফিসে যোগাযোগ করে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সভাপতি এবং সেক্রেটারি পদে লোক খোঁজা হচ্ছে। ইতোপূর্বে রাষ্ট্রদূত শমসের মোবিন চৌধুরীর সুপারিশ ছিল- ডা. মজিবর রহমান মজুমদার, শরাফত হোসেন বাবু এবং বেলাল মাহমুদের জন্যে।
চেয়ারপার্সন অনেকাংশেই দুর্বল ছিলেন এ সুপারিশের প্রতি। বেগম খালেদা জিয়া যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় এবং গত কয়েক মাসে নিজের সাংগঠনিক দক্ষতা প্রদর্শনে কোনভাবেই সক্ষম হননি ডা. মুজিব। অধিকন্তু তার বিরুদ্ধে নাকি নানা ডক্যুমেন্ট সরবরাহ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় অফিসে। ১/১১ পরবর্তী সময়ের ভূমিকা সম্পর্কেও অবহিত করা হয়েছে। শরাফত হোসেন বাবুর বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযোগ যাচ্ছে ঢাকায়।
বেলাল মাহমুদের নানা অযোগ্যতার অন্যতম হচ্ছে ইমিগ্রেশনের স্টাটাস। তার ঘনিষ্ঠ আনোয়ারুল ইসলাম গ্রেফতারের পর বিএনপির নীতি নির্ধারকরা এমন কাউকে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন না-যাদের ইমিগ্রেশনের বৈধ স্ট্যাটাস নেই। ইমিগ্রেশনের স্পর্শকাতর বিষয়গুলো হাই কমান্ডকে জানিয়েছেন বেলাল মাহমুদের ঘনিষ্ঠজনেরাই।
তাহলে কে হবেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সভাপতি-এমন প্রশ্নের জবাবে স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, বিকল্প হিসেবে ডা. শাহ আলমের নাম রয়েছে সংশ্লিষ্টদের সামনে। তার যোগ্যতার অন্যতম হচ্ছে নিরব কর্মী এবং মূলধারার সম্পর্ক।
এদিকে সর্বশেষ ‘সেইভ বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চলমান অভিযোগ রুখতে আন্তর্জাতিক মহলকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি বিএনপির কয়েকজন যুগ্ম মহাসচিব নিউইয়র্ক সফরকালে ডা. শাহ আলম ঐক্য প্রক্রিয়া চালু করেন।
তারেক পরিষদ আন্তর্জাতিক কমিটির চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বাদলের আহবানেও তিনি সাড়া দিয়েছিলেন। একটি কাঠামো তৈরী হয়েছিল বিভক্তির অবসানে। কিন্তু শরাফত হোসেন বাবু এবং বেলাল মাহমুদের কারণে সে ঐক্য প্রক্রিয়া ভেস্তে গেছে-এ তথ্যও অজানা নেই কেন্দ্রীয় নীতি-নির্ধারকদের।
তারা আরো জেনেছেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সংগঠনের সহ-সভাপতিদের কেউ কেউ নিউইয়র্কে এসে নতুন কমিটির টোপ দিয়ে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। ফলে বিশেষ একটি অঞ্চলের দোহাই দিয়ে নতুন কমিটির সভাপতি হবার আব্দারও আর মাঠে নেই।
বিদায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ আব্দুল লতিফ সম্্রাটকে একেবারেই পছন্দ করেন না চেয়ারপার্সন- এ তথ্য জানান স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য। তবে জনাব সম্রাটের উপর তারেক রহমানের নেকনজর এখনও বিদ্যমান থাকায় নতুন কমিটি গঠনের পরিক্রমা ঝুলে রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় দুয়েকজন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও একজন যুগ্ম মহাসচিব উল্লেখ করেন।
নানা সীমাবদ্ধতার কারণে সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমানকেও এবার সভাপতি করার কথা কেউই ভাবছেন না। এ অবস্থায় নীরবে আরেকটি নাম এসেছিল চেয়ারপার্সনের টেবিলে। তিনি হচ্ছেন নিউজার্সির সোলায়মান সেরনিয়াবাদ। বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান নিউজার্সিতে বাস করেও সংগঠন চালাতে পারলে সেরনিয়াবাদ কেন পারবেন না-এ যুক্তি সমর্থকদের।
গুলশান অফিসে তদ্বিরকারীদের কাছে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অর্ধ ডজন নাম রয়েছে। এর অন্যতম হলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, বর্তমান কমিটির অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তারেক পরিষদ আন্তর্জাতিক কমিটির চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বাদল, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বেলাল মাহমুদ, বর্তমান কমিটির সেক্রেটারি মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল এবং সহ-সভাপতি গিয়াস আহমেদ।