শেয়ারবাজার স্থিতিশীলতায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অনুমোদিত প্রতিনিধিদের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে বলে মনে করেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশিনের (এসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন।
বৃহস্পতিবার আর্মি গলফ গার্ডেনে ডিএসই আয়োজিত অনুমোদিত প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘‘ডিএসইর অনুমোদিত প্রতিনিধিরা অপারেশনে না গেলে কোনো বিনিয়োগকারী বিও হিসাব খুলতে পারবে না, পুঁজিবাজারে কোনো ধরনের লেনদেন হবে না। সুতরাং তাদের অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর তাদের দায়িত্ব পালনের ওপর পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা নির্ভর করে।’’
এসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করার জন্য প্রতিনিধিদের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। এ সার্টিফিকেট পাওয়ায় তাদের দায়িত্বও অনেক বেড়ে যায়।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া রাইট ও প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু করার জন্য নতুন নীতিমালা করছি।’’
খায়রুল হোসেন বলেন, ‘‘ডিএসইর অনুমোদিত প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। যার জন্য আমরা দেশে বিদেশে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো। এছাড়া দেশে যাতে নিয়মিতভাবে তাদের একটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা যায় তার ব্যবস্থাও এসইসি করবে।’’
দেশের সার্বিক অর্থনীতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘দেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের ভূমিকা অপরিসীম। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে তাতে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে শ্রেষ্ঠ অর্থনৈতিক ক্ষমতা সম্পন্ন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ হবে অন্যতম।’’
এসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘এরইমধ্যে ডিএসই ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন জমা দিয়েছে। আমরা শিগগিরই ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়া শুরু করবো।’’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘‘পুঁজিবাজারে অনুমোদিত প্রতিনিধিদের গুরুত্ব অনেক। তাদের ওপর লেনদেন ও নতুন কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আসা নির্ভর করে।’’
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের জেনে ও বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে। কোনো প্রকার গুজবে কান দিয়ে বিনিয়োগ করা যাবে না।
ডিএসই সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, ‘‘বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এবং পুঁজিবাজারকে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে অনুমোদিত প্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখতে হবে। তাদের ওপরই এটি নির্ভর করে। তাই অনুমোদিত প্রতিনিধিদের সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। তাদের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে।’’
রকিবুর রহমান বলেন, ‘‘ডিএসই শিগগির ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন হবে। ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন হলে অনুমোদিত প্রতিনিধিদের দায়িত্ব আরও বেড়ে যাবে।’’
তিনি জানান, ‘‘কোনো কোম্পানি যাতে অস্বচ্ছ তথ্য দিয়ে বাজার থেকে টাকা না তুলতে পারে তার পথ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।’’
এমএইচ সিকিউরিটিজ হাউজ বিক্রির বিষয়ে রকিবুর রহমান বলেন, একজন মেম্বারের কাছে সবচেয়ে প্রিয় জিনিস তার ব্রোকারেজ হাউজ। এটি বিক্রয় করা মেম্বারের জন্য বড় কষ্টের। তার মতে, এমএইচ সিকিউরিটিজ হাউজের অনুমোদিত প্রতিনিধিরা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না।
ডিএসই প্রেসিডেন্ট বলেন, দেশের শিল্পায়ন, অর্থায়ন এবং বিকল্প পুঁজি সংগ্রহ করার স্থান এই পুঁজিবাজার।
পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে পদ্মা সেতুসহ দেশের বড় বড় প্রকল্প সম্পন্ন করা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।
এসময় তিনি ডিএসইর অনুমোদিত প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক দলের তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের তৃণমূল কর্মীদের অংশগ্রহণ ও তাদের দায়িত্ব পালনের ওপর যেমন সেই দলের সাফল্য নির্ভর করে তেমনি প্রতিনিধিদের যথাযথ দায়িত্ব পালনের ওপর ডিএসইর সাফল্য নির্ভর করে। তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে।
সম্মেলনে ডিএসইর সাবেক সভাপতি আহমেদ ইকবাল হাসান বলেন, অনুমোদিত প্রতিনিধিদের ওপর বাজারের ও ব্রোকারেজ হাউজের মালিক পক্ষের স্বার্থ নির্ভর করে। অনুমোদিত প্রতিনিধিদের বিমানের পাইলট হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাইলট ছাড়া যেমন বিমান চলে না তেমনি অনুমোদিত প্রতিনিধিরা ছাড়া বাজার চলতে পারে না। তাদের দেওয়া তথ্য ও দিকনির্দেশনায় বিনিয়োগকারীরা বাজারে বিনিয়োগ করেন।
এসময় তিনি বাজারে কোনো গুজবে কান না দিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছে সঠিক তথ্য দেওয়াসহ প্রতিনিধিদের ডিএসই, সিএসই, লেনদেনের নিয়ম-কানুন ভালোভাবে আয়ত্তে এনে সে অনুযায়ী কাজ করার আহ্বান জানান।
আহমেদ ইকবাল হাসান বলেন, ‘‘সব ব্যবসার একটি মৌসুম থাকে। আমাদের শেয়ার বাজারেরও একটি মৌসুম ছিল। এখন মৌসুম একটু খারাপ। তাই বাজার একটু অস্থিতিশীল। আমাদের বাজার এমন থাকবে না। যদি এমন থাকতো তবে দেশে শেয়ার বাজার থাকতো না, দেশের অর্থনীতি থাকতো না।’’
সম্মেলনে উপস্থিতি ছিলেন, এসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন, সদস্য মো. আব্দুস সালাম শিকদার, মাহবুবুল আলম, ডিএসইর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মোশাররফ এম হোসেন, প্রেসিডেন্ট মো. রকিবুর রহমান, আহমেদ ইকবাল হাসান, পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, আহসানুল ইসলাম টিটু প্রমুখ।