বৃহত্তর ময়মনসিংহের চারটি রেলস্টেশনের টিকিট বুকিং সহকারী ও নিরাপত্তা কর্মীদের গণবদলির নির্দেশ দিয়েছিলেন রেলপথমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গত ৩১ জুলাই ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে ঝটিকা পরিদর্শনে তিনি এ নির্দেশ দিলেও এক সপ্তাহে চারজনকে বদলি করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ রেলস্টেশনের একাধিক সূত্র জানায়, সপ্তাহ পার হলেও ময়মনসিংহ, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও গফরগাঁও রেলস্টেশনের বুকিং সহকারী ও নিরাপত্তা কর্মীরা আগের স্টেশনেই বহাল রয়েছেন। এমনকি রেলমন্ত্রীর শোকজের জবাব কাননগু মোস্তফা কামাল দিয়েছেন কি না এ বিষয়টিও এড়িয়ে গেছেন ময়মনসিংহ রেলস্টেশনের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা।
সূত্র মতে, গণবদলির বিষয়ে খোদ রেলপথমন্ত্রীর নির্দেশই উপেক্ষিত থাকার নেপথ্যে রয়েছেন ময়মনসিংহ রেলওয়েতে কর্মরত একজন প্রভাবশালী টিটি। তিনিই বেশিরভাগ টিকিট বুকিং সহকারী ও নিরাপত্তা কর্মীদের নিজ নিজ স্থানে রাখার বিষয়ে কলকাঠি নাড়ছেন।
জানা গেছে, গত ৩১ জুলাই ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শনে এসে প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান করেন যোগাযোগ ও রেলপথমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরিদর্শনে এসে নিজের গাড়ি থেকে নেমেই রেলমন্ত্রী রেলস্টেশনের প্রধান ফটকের সামনেই রেলওয়ের জমিতে অবৈধ স্থাপনা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পাশাপাশি রেলের জমিতে কেন অবৈধ স্থাপনা এ বিষয়ে জানতে চান কাননগু মোস্তফা কামালের কাছে। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও কাননগুর সন্ধান মেলেনি।
পরে রেলমন্ত্রী অনুপস্থিত এ কাননগুকে শোকজ করেন এবং ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন।
মন্ত্রী ময়মনসিংহ রেলস্টেশন এলাকার রেলের জমিতে অবৈধ স্থাপনার বিষয়ে রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক সরদার শাহাদাত আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি ময়মনসিংহ রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুর রহমানকে ব্যাখ্যা দিতে বলেন।
পরে সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মন্ত্রীকে জানান, রেলের এ জমি অবৈধভাবে দখলের বিষয়ে একাধিক মামলা হয়েছে। জমি পুনরুদ্ধারে শিগগির অভিযান শুরু হবে।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ময়মনসিংহ রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুর রহমানকে কাননগু মোস্তফা কামালের শোকজ ও কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মন্ত্রীর নির্দেশের পরেই শোকজ বাস্তবায়ন হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার বিষয়ে আপডেট আমার জানা নেই।”
তিনি কমলাপুর রেলস্টেশনের সহকারী ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। কিন্তু এ কর্মকর্তাকে একাধিকবার তার মুঠোফোনে কল দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ময়মনসিংহ রেলস্টেশনের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে ময়মনসিংহ, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও গফরগাঁও রেলস্টেশনের সব টিকিট বুকিং সহকারীদের এক সপ্তাহ আগে রেলমন্ত্রী বদলির নির্দেশ দেন। এ নির্দেশে চারজনকে বদলি করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, আগের স্থানেই বহাল রয়েছেন টিকিট বুকিং সহকারী দুলাল চন্দ্র, সুনীল চন্দ্র, আনোয়ার, মাজাহারুল, শহীদুল কায়সার ও শাহজাহান। এদের বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ রয়েছে।
ময়মনসিংহ রেলস্টেশনের দায়িত্বশীল সূত্রটি আরো জানায়, এ চার রেলস্টেশনের নিরাপত্তা বিভাগের ৩০ সদস্যকে বদলির নির্দেশ দেওয়া হলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত বদলি করা হয়েছে ৪ জনকে। বদলিকৃতরা হচ্ছেন নজরুল ইসলাম, বেলাল হোসেন, মফিজুর রহমান ও এরশাদ মিয়া।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ রেলস্টেশনের সুপারিনটেন্ডেন্ট আলী আহামদ বলেন, “এ পর্যন্ত চারজন বুকিং সহকারীকে বদলি করা হয়েছে। বাকিদের বদলির বিষয়ে এখনো প্রশাসনিক নির্দেশ আসেনি। আসলে বদলি করা হবে।”